অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বেলারুশের সক্রিয়বাদীরা যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছে, বলেছে ইউরোপ নিরাপদ নয়


বেলারুশের মিনস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের প্রতিবাদে বিরোধী সমাবেশে পুলিশ সদস্যরা প্রতিবাদকারীদের সার্চ করছে। ১১ই অক্টোবর, ২০২০, ছবি-এপি
বেলারুশের মিনস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের প্রতিবাদে বিরোধী সমাবেশে পুলিশ সদস্যরা প্রতিবাদকারীদের সার্চ করছে। ১১ই অক্টোবর, ২০২০, ছবি-এপি

৩৪ বছর বয়সী দ্যমিত্র স্যাভচেঙ্কো তার নিউইয়র্ক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ভয়েস অফ আমেরিকার সাথে কথা বলতে গিয়ে,তার ফেলে আসা সমৃদ্ধ জীবনের কথা স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, "বেলারুশে, আমাদের সবকিছু ছিল। আমার স্ত্রীর বেশ কয়েকটি ক্যাফে ছিল। আমার নিজের দুটি ব্যবসা ছিল, কিছু রিয়েল এস্টেট, একটি অ্যাপার্টমেন্ট, একটি গাড়ি ছিল "।

স্যাভচেঙ্কো এবং তার পরিবারের তাদের বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না. কিন্তু গত কয়েক মাসে, তার এবং অন্যান্য অনেক বেলারুশের নাগরিকের জন্য, যা একসময় অচিন্তনীয় ছিল তা একটি মারাত্মক প্রয়োজন হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, "আমরা একটি সংশয়ের মুখোমুখি হয়েছিলাম: হয় কারাগারে যাওয়া নয়তো পালিয়ে অন্য দেশে যাওয়া,"।

আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ২৭ বছর ধরে বেলারুশ শাসন করেছেন, যা কিনা "ইউরোপের শেষ একনায়কত্ব" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ে, তার বিরোধীদের মধ্যে একটি ধারণা ছিল যে তিনি রাজনৈতিকভাবে দুর্বল ছিলেন।

স্যাভচেঙ্কো বলেছেন যে তিনি তার পুরো জীবন অরাজনৈতিক ব্যক্তিই ছিলেন, কিন্তু সেই মাসগুলিতে অন্য অনেকের মতো তিনিও লুকাশেঙ্কোর স্বৈরাচারী শাসনকে চ্যালেঞ্জ করতে আগ্রহী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের দক্ষতা এবং বৈচিত্র্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যেন "বাতাসে পরিবর্তনের গন্ধ পাচ্ছিলেন।"

নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার দিনের ঠিক দুই মাস আগে, ৯ আগস্ট, বেলারুশের এই আশাবাদী উদ্যোক্তা নির্বাচনের জন্য একটি স্বাধীন পর্যবেক্ষক হিসাবে নিবন্ধিত হন।

কিন্তু আসলে স্যাভচেঙ্কো একটি হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতির দিকেই এগোচ্ছিলেন ।

ভোটের দিন, স্যাভচেঙ্কো তার এলাকায় অসংখ্য অনিয়মের ঘটনা লিপিবদ্ধ করেন এবং এই সব অনিয়ম নির্বাচন কমিটির সদস্যদের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল । আর এই কমিটিতো সাধারণত শাসনের অনুগতদের নিয়ে গঠিত, তারা স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের ব্যক্তিগতভাবে প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করতে দেয়নি। সাভচেঙ্কো বলেছেন, নির্বাচন কমিটির সদস্যরা তখন স্থানীয় পুলিশদের সহায়তায় ব্যালট নিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়।

বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের কাছ থেকে সাভচেঙ্কোর মতো শত শত গল্প শুনে, সেইসাথে স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম থেকে খবর শুনে বেলারুশের জনসাধারণ রাস্তায় নেমেছিল। দেশটি তার ইতিহাসে অভূতপূর্ব নাগরিক সচেতনতার উত্থান দেখেছে। শুধুমাত্র মিনস্কেই, প্রায় ২,০০,০০০ মানুষ নির্বাচন-পরবর্তী সপ্তাহান্তে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জন্য বেরিয়ে এসেছিলেন।

আর তখনই শুরু হয় সহিংসতা।

জনগণের উত্সাহকে ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, লুকাশেঙ্কো, যিনি ভিত্তিহীনভাবে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট নিয়ে বিজয়ী হওয়ার দাবি করেছিলেন, প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে দমন ও সহিংসতার ঢেউ তুলেছিলেন। পুলিশের বর্বরতার ভিডিও এবং ফটো প্রমাণ, সেইসাথে বিক্ষোভকারীদের বিকৃত লাশ, সারা বিশ্বে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে।

স্যাভচেঙ্কো বলেন, "আমার কিছু বন্ধু সেই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল, জেল থেকে মুক্তির পর এমনকি তাদের দেখাটাও ছিল হৃদয় বিদারক ।"

যারা সবচেয়ে বেশি ভুগছেন বলে মনে হয় তারা হলেন দেশের রাজধানীর কুখ্যাত ওক্রেস্টিনা বন্দী কেন্দ্রে যাদের পাঠানো হয়েছিল তারা। সেখানকার অসংখ্য বন্দীর বিবরণ অনুসারে, তাদের কয়েক ঘন্টা ধরে মারধর ও নির্যাতন করা হয়েছিল এবং কয়েকদিন ধরে খাদ্য বা পানীয় জল দেওয়া হয়নি।

XS
SM
MD
LG