অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার বিলম্বিত হওয়ায় জাতিসংঘের উদ্বেগ


সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে জাতিসংঘের তরফে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। জেনেভা থেকে জাতিসংঘের গুম বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, দু'জন সাংবাদিকের হত্যাকাণ্ডের পর এক দশক পার হলেও এখনো কোনো বিচার হয়নি। তাদের ভাষায়, বাংলাদেশে এক ভয়ানক এবং ব্যাপক দায়মুক্তির সংস্কৃতি বিরাজ করছে। তারা বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কৃত অপরাধের বিচার না হলে তা মিডিয়াকে ভয় দেখিয়ে চুপ করানোর উদ্দেশ্যে দোষীদের উৎসাহ দেয় এবং আরও আঘাত, ভীতি ও হত্যাকে ত্বরান্বিত করে। আমরা বাংলাদেশে সেই গভীর উদ্বেগের নিদর্শন দেখতে পাই। তারা বলেন, কমপক্ষে ১৫ জন সাংবাদিক গত ১০ বছরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞগণ সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে বিনা বিচারে আটক, আক্রমণ, অপহরণ, অনলাইন ও অফলাইনে ভীতি প্রদর্শন এবং আইনি হয়রানির শিকার হওয়ার অসংখ্য প্রতিবেদন পেয়েছেন। ঘটনাগুলোর তদন্ত বা বিচার হয়নি বললেই চলে। সাগর ও রুনি এবং বাংলাদেশের অন্যান্য সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সম্পূর্ণ, দ্রুত, বিশদ, স্বাধীন ও কার্যকর তদন্ত পরিচালনা এবং দোষীদেরকে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এই বিশেষজ্ঞগণ।

র‍্যাব এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার তদন্ত করছে। আদালত থেকে ৮৫ বার সময় নিয়েছে। মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিনএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি হত্যার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। কিন্তু আজ অবধি এই হত্যাকাণ্ডের কোনো কূলকিনারা হয়নি। আদালতের নির্দেশে র‍্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। কবর থেকে লাশ উঠিয়ে ময়নাতদন্ত করা হয়। ১৬০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। ডিএনএ টেস্টের জন্য তথ্য-উপাত্তের আলামত যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। ডিএনএ রিপোর্ট ইতিমধ্যেই র‍্যাবের হাতে পৌঁছেছে। এই মামলায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালত নতুন তারিখ দিয়েছে ২৩ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা মহানগর হাকিম তরিকুল ইসলামের আদালতে মামলাটি চলছে।

রুনির ছোট ভাই মামলার বাদী নওশের আলম বলেছেন, "আমাদের কষ্টের শেষ নেই। একদিকে ভাই হত্যার বিচার এখনো পেলাম না, অন্যদিকে মা চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে।"

এই হত্যাকাণ্ডের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন তিনজন। সাহারা খাতুনের পর আসেন মহিউদ্দিন খান আলমগীর। দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের নির্দিষ্ট তারিখও ঘোষণা করেছিলেন। বলেছিলেন, আগামী ১০ অক্টোবর (২০১৪)-এর মধ্যে এই হত্যার কূলকিনারা হবে। মহিউদ্দিন খান আলমগীরের এই ঘোষণার পর ২০ অক্টোবর রুনির বন্ধু তানভির রহমান ও বাসার দারোয়ান পলাশ রুদ্র পালকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, "র‍্যাব যখন কোনো মামলার তদন্ত করে তখন সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে করে। পেশাদারিত্বের সঙ্গে মামলার তদন্ত হচ্ছে না- এই কথাটা ঠিক নয়। আমাদের একটা লক্ষ্য থাকে। কোনো নিরাপদ ব্যক্তি যাতে সাজা না পান।" তিনি বলেন, "ডিএনএ টেস্টেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো এখনো পরীক্ষা করা হচ্ছে। আশা করা যায়, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তদন্ত শেষ হবে।"

ওদিকে সাংবাদিক নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, তারা আর ১১ ফেব্রুয়ারি পালন করতে চান না। দশ বছর আগে ২০১২ সালের এইদিনে খুন হয়েছিলেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি প্রাঙ্গণে এক সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, শেষবারের মতো তারা আবারও প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেবেন।

XS
SM
MD
LG