অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলায় ঘটনায় উপাচার্যের দুঃখ প্রকাশ


উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ গত ১৬ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উপাচার্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য বলেন, “আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা আহত হয়েছেন, তাদের সবার প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।”

“বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। উক্ত ঘটনার ধারাবাহিকতায় সৃষ্ট অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনের একদিন পর উপাচার্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ শিক্ষা উপমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যম কর্মীদের ধন্যবাদ জানান, যারা ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন।
ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ও স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে সবাইকে ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানান ভিসি।

উপাচার্যকে দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ শিক্ষামন্ত্রীর

এদিকে শাবিপ্রবির উপাচার্য হিসেবে ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে নিজ দায়িত্ব পালন করে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে এ কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন।

সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে উপাচার্য এবং অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

ইশফাকুল হোসেন বলেন, “মন্ত্রী আলোচনায় শিক্ষকদের প্রতি ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি উপাচার্যকে তার দায়িত্ব পালন করে যেতে বলেছেন।”

এ সময় কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “মন্ত্রী বলেছেন, উপাচার্যের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যেসব অভিযোগ তুলেছে, তার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে রাষ্ট্রপতিই সব সিদ্ধান্ত দেবেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। দিবসটি যেন যথাথতভাবে পালন করা হয় সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।”

এর আগে বিকেলে সিলেট সার্কিট হাউসে বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

বৈঠক শেষে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে ভিসির পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন আচার্য (রাষ্ট্রপতি)। এ বিষয়টি আচার্যের কাছে তুলে ধরা হবে। অন্য দাবি পূরণ করা হবে পর্যায়ক্রমে।”

তিনি বলেন, “তাদের (শিক্ষার্থী) যা যা বক্তব্য আছে, পুরো ঘটনা সম্পর্কে তাদের কী বলার আছে, তা সব বর্ণনা করেছে। তাদের সঙ্গে ভালো আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের কথা বুঝতে চেষ্টা করেছি।”

এরপর মন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে জানান। সেইসঙ্গে দাবি পূরণে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাসও দেন।

বিকেলে সার্কিট হাউসে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষার্থীরা মোট আটটি দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হলো- উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ, ক্লাস-পরীক্ষা চালু, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার, আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থীর বন্ধ থাকা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট চালু করা, পুলিশের গুলিতে আহত শিক্ষার্থী সজল কুণ্ডকে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া ও তার জন্য নবম গ্রেডের চাকরি নিশ্চিত করা, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হককে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বাজেট বাড়ানো, পরীক্ষা পদ্ধতিতে কোডিং সিস্টেম কার্যকর করা, শিক্ষক নিয়োগে পিএইচডি এবং ডেমো ক্লাসের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে সাক্ষাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।

উপাচার্যের অপসারণের দাবি পূরণ না হওয়ায় গত বুধবার আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তারা এখন নতুন প্রক্টরের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার শাবিপ্রবির প্রক্টর মো. আলমগীর কবিরকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইশরাত ইবনে ইসমাইলকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি শাবি শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী।

১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন।

বাসভবনের সামনে অবস্থানের কারণে গত ১৭ জানুয়ারি থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ফরিদ উদ্দিন আহমদ।

১৯ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরদিনই বাড়ি চলে যান।

২৩ জানুয়ারি আরও চারজন ও ২৪ জানুয়ারি একজন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন। ২৩ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অবরুদ্ধ উপাচার্যের জন্য প্রক্টর, শিক্ষক সমিতির নেতা ও দুজন কাউন্সিলর খাবার নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের বাধায় তারা বাসভবনে ঢুকতে পারেননি।

২৮ ঘণ্টা পর ২৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করেন তারা।

২৬ জানুয়ারি অনশন ভাঙার পর জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হকের হাতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচটি দাবি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তুলে দেন।

XS
SM
MD
LG