বাংলাদেশি বাবার সঙ্গে জাপান থেকে আসা দুই শিশুর বিষয়টি তিন মাসের মধ্যে পারিবারিক আদালতে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এই সময়ে শিশুরা তাদের জাপানি মায়ের কাছে বাংলাদেশে থাকবেন।
দুই শিশুর জিম্মা নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
সর্বোচ্চ আদালত এই দুই শিশুর জিম্মার নিয়ে বিরোধের বিষয়টি আগামি তিন মাসের মধ্যে ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত পারিবারিক আদালতকে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন। এই সময় পর্যন্ত শিশুরা মায়ের কাছেই থাকবে। তবে বাবা সুবিধাজনক সময়ে শিশুদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। এই সময়ে শিশুদের নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়া যাবে না।
আদালতে মায়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, আহসানুল করিম ও শিশির মনির। আর বাবার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল, ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও অনির আর হক।
দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে ঢাকায় এসে গত বছরের ১৯ অগাস্ট জাপানি মা নাকানো এরিকোর করা রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট কয়েক দফায় নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সর্বশেষ গত বছরের ২১ নভেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ দুই শিশুর জিম্মা নিয়ে করা রিটটি (কন্টিনিউয়াস ম্যান্ডামাস) বিচারিক বিবেচনায় চলমান থাকবে উল্লেখ করে অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেন।
হাইকোর্ট তার আদেশে বলেন, দুই মেয়ে তাদের বাবার কাছে থাকবে। মা জাপানি নাগরিক, সেখানে তার বসবাস ও কর্মস্থল সে কারণে তিনি তার সুবিধামত সময়ে বাংলাদেশে এসে শিশুদের সঙ্গে প্রতিবার কমপক্ষে ১০ দিন একান্তে সময় কাটাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বছরে তিনবার বাংলাদেশে তার যাওয়া আসাসহ ১০ দিন অবস্থানের যাবতীয় খরচ শিশু দুটির বাবাকে বহন করতে হবে। তবে এর চেয়ে অতিরিক্ত যাওয়া-আসা বা বাংলাদেশে অবস্থানের ক্ষেত্রে খরচ মা নিজে বহন করবেন। এ ছাড়া বাবা মাসে কমপক্ষে দুবার শিশু সন্তানদেরকে ভিডিও কলে মায়ের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেবেন।
সেই আদেশে আরও বলা হয়, গত কয়েক মাস বাংলাদেশে অবস্থান ও যাতায়াত বাবদ মাকে ১০ লাখ টাকা সাত দিনের মধ্যে দিতে শিশুদের বাবার প্রতি নির্দেশ দেওয়া হলো। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কর্মকর্তাকে এই শিশুদের দেখভাল অব্যাহত রাখতে এবং প্রতি তিন মাস পর পর শিশুদের বিষয়ে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রতিবেদন দিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন। আর জাপানে থাকা আরেক মেয়েকে হাইকোর্টে হাজিরের নির্দেশনা চেয়ে ইমরান শরীফের করা রিটটি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
তবে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে মা নাকানো এরিকো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি আপিল বিভাগ দুই শিশুকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দেন। তবে বাবা ইমরান শরীফকে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে শিশুদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জাপানি মায়ের করা আপিলের শুনানি শেষে আজ রায় দিলেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।