অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

অমর একুশের বইমেলা উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা—প্রথম দিনই সুখবর পেলেন প্রকাশকেরা


বইমেলায় স্টলের সামনে ক্রেতারা। (ছবি: পুষ্পিতা রহমান)
বইমেলায় স্টলের সামনে ক্রেতারা। (ছবি: পুষ্পিতা রহমান)

অনিশ্চয়তার দোলাচাল কাটিয়ে অবশেষে মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বসন্তের বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো অমর একুশে বইমেলা। বাংলা একডেমির আয়োজনে এই মেলার ভার্চ্যুয়ালি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

করোনা অতিমারির কারণে ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকে মেলা শুরু হয়নি। মেলার মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে দুই সপ্তাহ। তবে উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতি বিবেচনায় মাসব্যাপী মেলা করার ঘোষণা দিলে প্রকাশকেরা আনন্দিত হয়েছেন।

এবারের বইমেলার থিম “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী”।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২১ প্রদান করা হয়।

এবার মেলায় মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭৭৬ ইউনিট স্টল ও ৩৫টি প্যাভিলিয়ন।

বইমেলায় স্টলে বই সাজাতে ব্যস্ত কর্মীরা। (ছবি: পুষ্পিতা রহমান)
বইমেলায় স্টলে বই সাজাতে ব্যস্ত কর্মীরা। (ছবি: পুষ্পিতা রহমান)

শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নেতৃত্বে সাংস্কৃতিত প্রতিষ্ঠান সুরের ধারার শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং ঐতিহাসিক ভাষার গান “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি” পরিবেশনের মধ্য দিয়ে একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলার মূলমঞ্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে মহান ভাষা আন্দোলনের শহিদ স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “সাম্প্রতিক করোনা মহামারির কারণে গতবছর এবং এ বছর অমর একুশে বইমেলা নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। আমরা করোনা এবং অন্যান্য অসুস্থতায় বাংলা একাডেমির তিনজন সভাপতি— জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান এবং মহাপরিচালক কবি হাবীবুলস্নাহ সিরাজীকে হারিয়েছি। তাদের সবাইকে আমরা যেমন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি তেমনি একুশে বইমেলায় আগত সবাইকে নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে অনুরোধ করি।’

তিনি বলেন, “বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চা যেমন জরুরি তেমনি অনুবাদের মাধ্যমে আমাদের সাহিত্যকে বিশ্ব-পরিসরে পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আঞ্চলিক সাহিত্য সম্মেলন এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে উন্নত চিন্তা-চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা অতি প্রয়োজন।”

শেখ হাসিনা বলেন, “প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশে মুদ্রিত বইয়ের বিকল্প আবিষ্কৃত হলেও ছাপা বইয়ের আবেদন কখনো ফুরোবার নয়। এ জন্যই অমর একুশে বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা।”

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং ভাষা আন্দোলনের সত্তর বছরের মাহেন্দ্রক্ষণে অমর একুশে বইমেলা ২০২২ প্রাণপূর্ণ এবং পাঠকপ্রিয় হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বইমেলায় আগত ক্রেতা–দর্শকদের একাংশ। (ছবি: পুষ্পিতা রহমান)
বইমেলায় আগত ক্রেতা–দর্শকদের একাংশ। (ছবি: পুষ্পিতা রহমান)

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছা এবং আন্তরিকতায় একটু দেরিতে হলেও এবারের একুশের বইমেলা আজ শুরু হচ্ছে। আমাদের আশা বইমেলাসহ সকল জ্ঞানভিত্তিক কর্মকান্ড নতুন প্রজন্মকে মননশীল করে গড়ে তুলবে।”

স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। তিনি বলেন, “বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার একটি স্থায়ী কাঠামো এবং বইমেলা কার্যালয় অতি প্রয়োজন।”

শুভেচ্ছা বক্তব্যে সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর বলেন, “এবারের বইমেলা মহামারির বৈরি পরিস্থিতিতে শুরু হলেও আশা করা যায় সকলের প্রচেষ্টায় তা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সফল হবে।”

প্রকাশক প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন বলেন, “জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনে প্রকাশনাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা এখন সময়ের দাবি।”

সভাপতির ভাষণে সেলিনা হোসেন বলেন, “জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু যেমন বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকায়ন করেছেন তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে বাঙালিকে বিশ্ব দরবারে নতুন সাংস্কৃতিক উচ্চতায় উন্নীত করেছে।”

যারা পুরস্কার পেলেন

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ২০২১ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও অনুপস্থিত তিনজন লেখকের প্রতিনিধির হাতে অর্থমানের চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন; কবিতায়-আসাদ মান্নান ও বিমল গুহ। কথাসাহিত্যে-ঝর্না রহমান ও বিশ্বজিৎ চৌধুরী। প্রবন্ধে হোসেনউদ্দীন হোসেন। অনুবাদে-আমিনুর রহমান ও রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী। নাটকে-সাধনা আহমেদ। শিশুসাহিত্যে-রফিকুর রশীদ। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায়-পান্না কায়সার। বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গবেষণায়–হারুন -অর-রশিদ। বিজ্ঞানে–শুভাগত চৌধুরী। আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনী-সুফিয়া খাতুন ও হায়দার আকবর খান রনো। ফোকলোর—আমিনুর রহমান সুলতান।

অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নূরুন্নাহার খানম ও শাহাদাৎ হোসেন।

মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ রয়েছে সৃজনশীল প্রকাশদের স্টল এবং একাডেমি প্রাঙ্গণে রয়েছ সরকারি ও বিভিন্ন সংস্থার স্টল।

চলছে বই সাজানোর কাজ

উদ্বোধনের পর প্রচুরসংখ্যক গ্রন্থানুরাগী এসেছিলেন মেলায়। তবে মেলার স্টল তৈরির কাজ শেষই হয়নি। অধিকাংশ প্রকাশক ব্যস্ত ছিলেন স্টল, প্যাভিলিয়ন নির্মাণ ও র‌্যকে বই সাজানো নিয়ে। এবার তারা স্টল করার আগাম সময় বেশি পাননি। তবে দ্রুতই এই নির্মাণপর্ব শেষ হবে বলে তারা জানালেন।

মেলা চলার সময়

মেলার শুরুর সময় এবার এক ঘণ্টা এগিয়ে আনা হয়েছে। ফটক খুলবে বেলা ২টায়। বন্ধ হবে রাত ৯টায়। প্রবেশ করা যাবে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। আর ছুটির দিনগুলোতে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। অমর একুশের দিনে শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের প্রতি কড়া নজরদারি করা হবে।

মেয়াদ বৃদ্ধির চূড়ান্ত ঘোষণা পরে

সন্ধ্যায় উদ্যান অংশের মেলার পরিস্থিতি দেখতে এসেছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা ও উপপরিচালক শাহাদাৎ হোসেন।

বইমেলায় স্টলের সামনে ক্রেতারা। (ছবি: পুষ্পিতা রহমান)
বইমেলায় স্টলের সামনে ক্রেতারা। (ছবি: পুষ্পিতা রহমান)

মেলার মেয়াদ সম্পর্কে মহাপরিচালক ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী ভাষণে মাসব্যাপী মেলার কথা বলেছেন। তবে সেটি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে এবং মেয়াদের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ। সেই দিন পর্যন্ত মেলা চলতে পারে। তাহলে অবশ্য এক মাসের চেয়ে একটু বেশি হয়ে যায়। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মেলা পরিচালনা কমিটির সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান নেওয়া হবে। এরপরে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে।”

আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও মেয়াদ বাড়ছে, এ নিয়ে প্রকাশকেরা মোটামুটি নিশ্চিত। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভের সামনেই এবার অন্যপ্রকাশের প্যাভিলিয়ন। সন্ধ্যায় দেখা গেলা কাঠামো তৈরির কাজই পুরো শেষ হয়নি। ভেতরে বাইরে রং করা, র‌্যাক তৈরি করা এসব কাজ চলছে।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশ ও বিক্রেতা সমিতির রাজধানীর সভাপতি অন্যপ্রকাশের প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “এক মাসের মেয়াদ অমর একুশ বইমেলার চিরাচরিত ঐতিহ্য। মাসব্যাপী মেলার ঘোষণা প্রকাশকদের জন্য খুবই খুশির খবর। সময় কমে যাওয়ার প্রকাশকদের মধ্য যে হতাশা এসেছিল তা এখন কেটে যাবে। নতুন উদ্যমে সবাই কাজ শুরু করবেন।”

XS
SM
MD
LG