অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নেতাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার—দ্বন্দ্বের জের মাদকের টাকা ভাগাভাগি


কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নেতা (মাঝি) আবুল কালামকে (৩৭) হত্যার ঘটনায় দুজন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।

শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ভোররাত ৪টার দিকে ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে আর্মড পুলিশ অভিযান চালিয়ে আত্মগোপনে থাকা ওই দুজন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। গ্রেপ্তার দুই রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী “আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্য বলে জানা গেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—কুতুপালং ক্যাম্পের (ক্যাম্প–২, পশ্চিম, ব্লক ২, এফসিএন) বাসিন্দা মৃত এজাহার মিয়ার ছেলে সামসুল আলম (৪৬) ও একই ক্যাম্পের ডি ব্লকের মো. হোসেন ওরফে সৈয়দের ছেলে আবদুল কাদের (২৬)।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টার দিকে কুতুপালং ক্যাম্পের বি ব্লকে কয়েকজন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আবুল কালামকে (মাঝি) পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর তারা ক্যাম্পে আত্মোপন করেছিল। নিহত আবুল কালাম ওই ক্যাম্পের (ক্যাম্প ২, ব্লক বি) বাসিন্দা ছিলেন।

১৪ এপিবিএন–এর অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার মো. নাঈমুল হক ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “মাদক (ইয়াবা) বিক্রির টাকা ভাগাভাগি ও নিজেদের কোন্দল নিয়ে রোহিঙ্গা শেড পরিচালনার সাব-মাঝি আবুল কালামের সঙ্গে কয়েকজন রোহিঙ্গার বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে মাঝি আবুল কালামকে নিজের বাড়ির সামনে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর এপিবিএন পুলিশ অভিযানে নামলে অভিযুক্তরা আত্মগোপন করে। শুক্রবার ভোরে পুলিশ ক্যাম্পের বিভিন্ন আস্তানায় অভিযার চালিয়ে সামসুল আলম ও আবদুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুপুরে তাদের উখিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”

এপিবিএন অধিনায়ক আরও বলেন, “আবুল কালাম হত্যাকান্ডের ঘটনায় ১৪ ফেব্রুয়ারি উখিয়া থানায় ১৪ জন রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আজ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। অন্যদের ধরতে ক্যাম্পে অভিযান চালানো হচ্ছে।”

পুলিশ জানায়, ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে গুরুতর আহত আবুল কাশেমকে উদ্ধার করে প্রথমে ক্যাম্পের অভ্যন্তরের এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। সকাল ৯টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল কালাম মারা যান।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন রোহিঙ্গার ভাষ্য, গ্রেপ্তারকৃত রোহিঙ্গা সামসুল আলমের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সেদিন ভোরে আবুল কালামকে ঘর থেকে ডেকে বাইরের রাস্তার নিয়ে আসে। এবপর লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। তাদের ভাষ্য মতে হামলার ঘটনায় জড়িত ছিল রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদ, আবদুল কাদের (গ্রেপ্তারকৃত), মো. ইব্রাহীম, মো. ফরিদ, মো. জোবায়ের, মো. জাবেরসহ অন্তত ১৫ জন। হামলাকারীদের অনেকে নিজেদের আরসা সদস্য পরিচয় দেন। ইয়াবার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে হামলাকারীদের সঙ্গে আবুল কালামের বিরোধ ছিল। গ্রেপ্তার দুই রোহিঙ্গাও আরসা সদস্য বলে জানেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। নিহত আবুল কালামের মাদক চোরাচালানে যুক্ত থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা।

এ প্রসঙ্গে ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক নাঈমুল হক বলেন, “ক্যাম্পে কত কিছু হচ্ছে, মাদক, স্বর্ণ চোরাচালান, মানব পাচার, মুক্তিপণের জন্য অপহরণ, চাঁদাবাজি সব কিছু। গ্রেপ্তার দুই রোহিঙ্গা আবুল কালাম হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তাদের স্বভাব চরিত্রও খারাপ। তবে তারা আরসা সদস্য কি না জানা নেই।”

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ক্যাম্পে আরসা নামে কোনো জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা নেই। তবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত রোহিঙ্গারা নিজেদের আরসা সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তাদের উদ্দেশ্য হলো—সবাইকে (সাধারণ রোহিঙ্গা) ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে রাখা।

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের শীর্ষনেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে আরসা সন্ত্রাসীরা। তিনি আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) নামে একটি সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে (প্রত্যাবাসনের পক্ষে) সোচ্চার ছিলেন মুহিবুল্লাহ। মুহিবুল্লাহ হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই একই বছরের ২২ অক্টোবর ভোরে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ময়নারঘোনা ক্যাম্পে আরসা সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে হত্যা করে ছয়জন মাদ্রাসা শিক্ষক-ছাত্রকে। হত্যাকান্ডের এই দুই ঘটনায় আইন–শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ২৩ জনের বেশি আরসা সদস্যসহ অন্তত ৭০ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে। এরপরও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপতৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না।

XS
SM
MD
LG