অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

অমর একুশে বইমেলায় বিক্রি বাড়ছে


স্টলে পছন্দের বই বাছাই করছেন ক্রেতারা।
স্টলে পছন্দের বই বাছাই করছেন ক্রেতারা।

অমর একুশের বইমেলায় শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দ্বিতীয় দিনেও প্রচুর লোক সমাগম ঘটে। আগের দিনের মতো এদিনও মেলা শুরু হয়েছিল বেলা ১১টা থেকে। পাঠকদের মতো নবীন ও প্রতিষ্ঠিত লেখকেরাও মেলায় আসতে শুরু করেছেন। বিক্রিও হয়েছে বেশ ভালো। সকালে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আনিসুল হকের মতো জনপ্রিয় লেখকেরা মেলায় আসেন। বরাবরের মতোই প্রিয় লেখকদের পেয়ে অটোগ্রাফ শিকারীরা তাদের সামনে ভিঁড় জমান। তারাও হাসিমুখে তাদের আবদার মিটিয়েছেন।

সন্ধ্যায় অনেক তরুণ লেখক এসেছিলেন মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। ঔপন্যাসিক জোবায়েদ আহসান ছিলেন আহমদ পাবলিশিং হাউসের সামনে। এখান থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার উপন্যাস “এক জন ক্যাকাসু” । তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বললেন, “মেলায় এবার পরিসর অনেক বেড়েছে। ফলে খোলামেলা চমৎকার পরিবেশ। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। বিশেষ করে বাচ্চারা বই কিনে ব্যাগ হাতে বাড়ি যাচ্ছে এই দৃশ্য দেখতে খুব ভালো লাগছে।”

এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১৪৩টি। রবিবার মেলা খুলবে বেলা ২টা থেকে। চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

গ্রাফিক নভেল মুজিবের প্রকাশনা

এদিন মেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) স্টলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” গ্রন্থের আলোকে শিশুদের উপযোগী করে প্রকাশিত গ্রাফিক নভেল “মুজিব”–এর নবম ও দশম খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করেন জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ২০১৫ সালের ১৭ মার্চ সিআরআই–এর উদ্যোগে গ্রাফিক নভেল মুজিবের প্রথম পর্ব প্রকাশিত হয়। এরপর এর বিভিন্ন পর্ব প্রকাশিত হয়েছে।এ বছর বইমেলায় নবম ও দশম খণ্ড প্রকাশের মাধ্যমে এই ধারাবাহিক গ্রাফিক নভেলটির শেষ হলো।

মোড়ক উন্মাচন করে মুহম্মদ জাফর ইকবাল এই গ্রাফিক নভেলকে ইতিহাসের এক “অসাধারণ দলিল” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “মুজিব গ্রাফিক নভেল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে খুবই অসাধরণ একটি দলিল হয়েছে। এটি শুধু ছোট বাচ্চারা পড়বে তাই নয়, বড় মানুষরা এটা তাদের বাসায় সাজিয়ে রাখতে পারবেন।”

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কথাশিল্পী আনিসুল হক, উপস্থিত ছিলেন গ্রাফিক নভেলের শিল্পী সৈয়দ রাশাদ ইমাম তন্ময়, কাহিনি বিন্যাস ও সংলাপ লেখক সিদ্দিক আহমেদসহ সহযোগী শিল্পীরা। সিআরআই জানায়, এখন পর্যন্ত এই গ্রাফিক নভেলের প্রথম তিনটি খণ্ড ইংরেজিতে ও জাপানি ভাষায় দুটি খণ্ড অনূদিত হয়েছে। ভবিষ্যতে তাদের ফরাসি ও চীনা ভাষায় অনুবাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

আলোচনা

এদিন বিকেল বইমেলার মূলমঞ্চে আলোচনার বিষয় ছিল “স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী: উন্নয়নে নারী”। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জোবাইদা নাসরীন। আলোচনায় করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ও দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাছিমা বেগম।

প্রাবন্ধিক বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে নারীদের শুধু বীরের স্বীকৃতি প্রদানই নয়; যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশে এই বীর-নারীদের পুনর্বাসন করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নারী পুনর্বাসন কেন্দ্র। ১৯৭২ সালে রচিত সংবিধানে নারীর মানবাধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে কর্ম‌ক্ষেত্রে নারীর ইতিবাচক অগ্রগতি আমাদের অনেকটাই আশার জায়গা তৈরি করেছে। এর বিপরীতে নারীর নিপীড়ন এবং নির্যাতনের চিত্রটিও কম ভয়াবহ নয়। নারীর জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে তা বাংলাদেশের টেকসই অগ্রগতিকে সুনিশ্চিত করবে।”

আলোচকেরা বলেন, যেকোনো দেশের জাতীয় বিকাশে নারীর যেমন ভূমিকা থাকে আবার এই বিকাশের মাধ্যমে নারীরও উন্নয়ন ঘটে। নারী আন্দোলন একরৈখিক আন্দোলন নয়। নারী আন্দোলনের কেন্দ্রেই আছে লৈঙ্গিক সমতা অর্জন। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক মনে করার প্রবণতা দেখা যায়। টেকসই উন্নয়নের একটি শর্ত হলো সকল ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতা দূর করা। সুযোগ পেলে ঘরে ও বাইরে নারী তার যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারে। নারীর উন্নয়নের জন্য পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা দূর করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে নাছিমা বেগম বলেন, “নারী ও পুরুষকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে যেদিন মানুষ হিসেবে দেখা হবে সেদিনই বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত সমতার সমাজ তৈরি করতে সক্ষম হবে। নারীকে তার অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে হবে। পাশাপাশি পরিবার থেকেই শিশুকে নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে এবং নারীর প্রতি সম্মানজনক দৃষ্টিভঙ্গি লালনের মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।”

এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি অসীম সাহা ও অনুবাদক রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী।

সন্ধ্যায় মূলমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা স্বরচিত আবৃত্তি করেন কবি মতিন বৈরাগী ও মারুফ রায়হান। আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, মাহিদুল ইসলাম এবং নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী। বেণুকা ললিতাকলা কেন্দ্রর শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন।

XS
SM
MD
LG