অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আফগানিস্তানে নারী পুরুষ সকলের জন্য খুলে দেওয়া হলো সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়


কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কয়েকজন শিক্ষার্থী। ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২। (ছবি- এএফপি)
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কয়েকজন শিক্ষার্থী। ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২। (ছবি- এএফপি)

ইসলামপন্থী তালিবানের ক্ষমতা পুনর্দখলের ছয় মাস পর শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী কাবুলসহ আফগানিস্তানের অপেক্ষাকৃত শীতল অঞ্চলে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যেই সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে।

উষ্ণ আবহাওয়া শুরু হওয়ায় কয়েকটি প্রদেশে তালিবান কর্তৃপক্ষ এই মাসের শুরুতে ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণীকক্ষে ফিরে যাওয়ার অনুমোদন দেয়। ওই আদেশের সুত্র ধরে এরপর প্রায় ৪০টি রাষ্ট্র পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালু হলো।

আফগানিস্তানের রাজধানীতে দেশটির প্রাচীনতম ও বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিনে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের উপস্থিতি কম দেখা যায়।

তালিবানের আদেশ অনুসারে ইসলামের কঠোর বিধান মেনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্লাস পরিচালনায় ছাত্রছাত্রীদের পৃথকীকরণ নীতি চালু করেছে। এই নিয়মের মধ্যে রয়েছে আলাদা আলাদা কার্যঘন্টা এবং পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক শ্রেণীকক্ষ। এ ছাড়া নারী শিক্ষার্থীদের হিজাব পরাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

১৫ অগাস্ট আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তালিবান সহশিক্ষা নিষিদ্ধ করে। শনিবার প্রথম দিন শ্রেণিকক্ষে ফেরার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

আফগান টোলো (TOLO) নিউজ চ্যানেলের বরাত দিয়ে রাজিয়া কামাল নামের একজন শিক্ষার্থী বলেন, “ইসলামী আমিরাত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুনরায় চালু করায় আমি আজ খুব খুশি।” তালিবান সরকারের আনুষ্ঠানিক নাম ইসলামি আমিরাত।

কাবুলের হাসিনাত নামের এক শিক্ষার্থী বলেছিলেন যে, মেয়েদের জন্য ক্যাম্পাস জীবন এখন আগের চেয়ে অনেক আলাদা। “এখন আর কোনো ক্যাফেটেরিয়া নেই...আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে যেতে দেওয়া হয় না।”

“আমি খুশি যে বিশ্ববিদ্যালয় আবার শুরু হয়েছে...আমরা আমাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই”, ইংরেজির ছাত্রী বসিরা বলেন। “প্রভাষকদেরও সংখ্যা কমে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “হয়তো কেউ কেউ দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।”

২০ বছরের দখলদারিত্বের পর যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা দেশগুলো অগাস্টের শেষের দিকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করার পর থেকে তালিবানের প্রতিশোধের ভয়ে হাজার হাজার আফগান, যাদের বেশিরভাগ শিক্ষিত, তারা দেশ ছেড়েছেন।

আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতেও শিক্ষার্থীরা শিক্ষক সংকটের অভিযোগ করেছেন।

“আমাদের কিছু অধ্যাপকও দেশ ছেড়েছেন, কিন্তু আমরা খুশি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট খোলা আছে”, প্যারিসা নারওয়ান নামের একজন চিত্রকলার ছাত্রী বলেন৷

তালিবানরা সেপ্টেম্বরে লিঙ্গভেদে পৃথক শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের প্রায় ১৫০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরুষ ও নারী শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরার অনুমতি দেয়। কিন্তু ইসলামী শরিয়া আইন অনুযায়ী আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা ক্লাসরুমের অভাবের কারণে তারা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুনরায় চালু করতে সময় নেয়।

আফগান নীতি বিশ্লেষক ও গবেষক মহসিন আমিন বলেন, “দেরিতে হলেও এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।” “আফগানিস্তানের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য শিক্ষার মান বাড়ানো এবং নারী শিক্ষকের পাশাপাশি অধ্যাপকের অভাব পূরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

“যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব প্রদেশে মেয়েদের জন্য উচ্চ বিদ্যালয়গুলো পুনরায় চালু করা উচিত,” আমিন ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন।

তালিবানরা সেপ্টেম্বরের শুরুতে ছেলেদের পুনরায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করার অনুমতি দিলেও, বেশির ভাগ আফগান মেয়েরা এখনো শ্রেণিকক্ষে ফেরার অনুমতির অপেক্ষা করছে।

তালিবান কর্মকর্তারা মার্চের শেষের দিকে সমস্ত মেয়েকে স্কুলে ফিরে আসার অনুমতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ১৯৯৬-২০০১ সালে কট্টরপন্থী গোষ্ঠীর পূর্ববর্তী শাসনের সময় নারী শিক্ষা যেভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সেরকম করা হবে না বলেও আশ্বাস দেন তারা।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো পুরুষ-প্রধান তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। বিদেশি সরকারগুলো চায় ইসলামপন্থী গোষ্ঠী নারীদের শিক্ষা ও কাজের অধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করুক, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করুক এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে অন্য দেশের বিরুদ্ধে হামলার জন্য আফগান মাটি ব্যবহার করতে বাধা দিক।

এদিকে, আফগানিস্তানে তালিবানের ক্ষমতা পুনর্দখলের পর থেকে দেশটিতে অর্থনৈতিক বিপর্যয় মানবিক অবস্থার অবনতি ঘটিয়েছে, যার মুল কারণ হলো বছরের পর বছর যুদ্ধ এবং খরা।

জাতিসংঘের ধারণা, দেশটিতে জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সবচেয়ে চরম পর্যায়ে রয়েছে। জাতিসংঘের মতে, ২৩ মিলিয়ন আফগান তীব্র খাদ্য সংকটের সম্মুখীন। তাদের মধ্যে নয় মিলিয়ন দুর্ভিক্ষের অবস্থা থেকে এক কদম দূরে রয়েছে।

“জরুরি জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা ছাড়া, এই বছর পাঁচ বছরের কম বয়সী চার মিলিয়নেরও বেশি শিশু তীব্রভাবে অপুষ্টিতে ভুগবে, তাদের মধ্যে এক মিলিয়নেরও বেশি আরও গুরুতর অবস্থার শিকার হবে”. শনিবার জারি করা একটি নতুন বিবৃতিতে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে। “তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ না নিলে এই বছর ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হতে পারে”।

[এই প্রতিবেদনের জন্য কিছু তথ্য এজেন্সি ফ্রান্স-প্রেস থেকে নেওয়া হয়েছে]

XS
SM
MD
LG