অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কাবুলে ঘরে ঘরে তালিবানের তল্লাশি- ভবিষ্যতে দেশত্যাগে আফগানদের ওপর নিষেধাজ্ঞা


আফগান নারী অধিকার কর্মীদের প্রতিবাদের সময় রকেট চালিত গ্রেনেডসহ গাড়ীতে টহল দিচ্ছে একজন তালিবান যোদ্ধা। ২১শে জানুয়ারি, ২০২২। (ছবি- এএফপি)
আফগান নারী অধিকার কর্মীদের প্রতিবাদের সময় রকেট চালিত গ্রেনেডসহ গাড়ীতে টহল দিচ্ছে একজন তালিবান যোদ্ধা। ২১শে জানুয়ারি, ২০২২। (ছবি- এএফপি)

কাবুল এবং এর আশেপাশে শত শত বাড়িঘরে অভিযান চালানোর কারণে উদ্ভূত বিতর্কের মুখে তালিবানরা রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দাবি করেছে, অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং আফগান রাজধানীকে অস্ত্রমুক্ত করাই এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল।

তালিবান সরকারের প্রধান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ ঘোষণা করেছেন, যারা ইতিমধ্যে আফগানিস্তান ছেড়েছেন, বিদেশে তাদের জীবনযাত্রার অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত তারা আরও আফগানদের সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেবেন না।

শুক্রবার শহরের আবাসিক এলাকা এবং বেশ কয়েকটি সংলগ্ন প্রদেশে কার্যকর হওয়া নিরাপত্তা অভিযান, বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

কিছু বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, তালিবানরা অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নামে সম্প্রতি ভেঙ্গে যাওয়া আফগান সরকারের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের লক্ষ্যবস্তু করছে। অন্যরা নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা “দুর্ব্যবহারের” অভিযোগ করেছেন এবং অভিযানটিকে তাদের গোপনীয়তার লঙ্ঘন বলে মনে করছেন।

মুজাহিদ রবিবার সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগকে আফগানিস্তানের নতুন শাসন ব্যবস্থার বিরোধীদের প্রচারণা হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী “সর্বাধিক যত্নের সঙ্গে” কাজ করছে এবং তাদের একমাত্র লক্ষ্য জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

“সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা বিশ্বাস করি একবার এই অভিযান শেষ হলে ভবিষ্যতে এই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রয়োজন হবে না”, ঘরে ঘরে এ ধরনের তল্লাশি চলবে কি না প্রশ্নের জবাবে মুজাহিদ বলেন।

তিনি যুক্তি দেখান, অনেক লোক তাদের বাড়িতে অস্ত্র রেখেছিল এবং একবার অভিযান শেষ হলে, সরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের “আইন ও সতর্কতার” ফলে মানুষ সহজে অস্ত্র হাতে পাবে না।

মুজাহিদ বলেন, অভিযান “সফল” হয়েছে এবং শিগগিরই শেষ হবে। এটি রকেট-লঞ্চার এবং গ্রেনেড, ১৩টি সাঁজোয়া যান এবং কয়েক টন বিস্ফোরকসহ শত শত হালকা এবং ভারী অস্ত্র বাজেয়াপ্ত হয়েছে, বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মুখপাত্র বলেছেন, ইসলামিক স্টেট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বেশ কয়েকজন সদস্যসহ কয়েক ডজন বহিরাগতকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও তালিবানের দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা কঠিন ছিল।

কাবুলকে বিশ্বের অন্যতম অস্ত্রসমৃদ্ধ শহর বলে মনে করা হয়। অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলো কুখ্যাত আফগান যুদ্ধবাজ নেতা এবং মাদক চোরাচালানকারীদের আবাসনের জন্য পরিচিত। সেখানকার প্রাসাদতুল্য বাড়িগুলো ক্ষমতায় থাকাকালে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত প্রাক্তন কর্মকর্তাদের দ্বারা নির্মিত।

আফগানিস্তানে ইওরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেয়াস ভন ব্র্যান্ডত টুইট করেছেন, “ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের এবং নারীদের ভয় দেখানো, বাড়ি তল্লাশি, গ্রেপ্তার এবং সহিংসতা একটি অপরাধ এবং অবিলম্বে এটা বন্ধ করা উচিত।”

আর দেশত্যাগ নয়

রবিবার মুজাহিদ আরও বলেন যে, আফগানিস্তান ত্যাগ করতে ইচ্ছুক পরিবারগুলোকে দেশ ছাড়ার জন্য “বৈধ কারণ” দেখাতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তালিবান সরকার কাউকে প্রতিশ্রুতি দেয়নি যে, দেশ ছাড়ার প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে। তিনি যুক্তি দেন যে, কাতার এবং তুরস্কে কয়েক হাজার আফগানের “খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে বসবাস” করার খবর তালিবান পেয়েছে।

“প্রাথমিকভাবে আমরা বলেছিলাম যে আমেরিকানরা...এমন লোকদের নিয়ে যেতে পারে যাদের সম্পর্কে তাদের উদ্বেগ রয়েছে বলে মনে হয়...কিন্তু এটি একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া নয়”।

মুজাহিদ বলেন, “জনগণকে রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব তাই তাদের জীবন বিপন্ন হবে না এমন নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত নাগরিকদের দেশত্যাগ বন্ধ করা হবে”।

কাবুলে পশ্চিমা-সমর্থিত সরকার ও এর নিরাপত্তা বাহিনীর পতন এবং তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার কয়েক দিন পর এবং অগাস্টের শেষের দিকে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করার পর থেকে ১ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি আফগান এবং দ্বৈত নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

নারীদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ

মুজাহিদ বলেন, আফগান নারীদের পুরুষ সঙ্গী ব্যতীত বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, “এটি ইসলামি শরিয়া আইনের আদেশ”। তবে আদেশটি যাতে বিদেশে বৃত্তিপ্রাপ্ত মেয়েদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সে দিকটি বিবেচনা করে দেখতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

কট্টরপন্থী গোষ্ঠীটি ইতিমধ্যেই নারীদের ওপর কোনো ঘনিষ্ঠ পুরুষ আত্মীয় সঙ্গে না থাকলে তাদের দীর্ঘ সড়ক ভ্রমণে বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের নারী সরকারি কর্মচারীদেরও তাদের অফিসে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, বাকিদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে। তালিবান কর্মকর্তারা নারীদের নিরাপদ পরিবেশে কাজ করার জন্য আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং শরিয়া বা ইসলামিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থার অভাব উল্লেখ করেছেন।

রবিবার বক্তৃতায়, মুজাহিদ আফগান ব্যাঙ্কগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকেও স্বাগত জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই আদেশে আফগান ব্যবসায়ীদের এবং অন্যদের জন্য অর্থ স্থানান্তরের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তবে সন্ত্রাসবাদ-সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা তালিবান সদস্যরা এই ছাড়ের বাইরে থাকবেন।

XS
SM
MD
LG