অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আন্তর্জাতিক বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার


গণভবনে এফএওর মহাপরিচালক কু ডংইউ–এর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। (ছবি- ইউএনবি)
গণভবনে এফএওর মহাপরিচালক কু ডংইউ–এর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। (ছবি- ইউএনবি)

আগামী দিনগুলোতে খাদ্য সঙ্কট মোকাবিলায় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় (এফএও) একটি আন্তর্জাতিক বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “একটি আন্তর্জাতিক বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করুন, যা শতবর্ষ ধরে যেকোনো দুর্যোগে খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে সহায়তা করতে পারে।”

রবিবার (১৩ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এফএওর মহাপরিচালক কু ডংইউ–এর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ প্রস্তাব দেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর গণমাধ্যম শাখা থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ সময় শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ডসকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি ডিজিটাইজেশন এবং উদ্ভাবনের প্রকল্প গ্রহণের জন্য একটি সমন্বিত তহবিল গঠনের জন্য এফএওর মহাপরিচালককে বলেন এবং জানান বাংলাদেশ সেখানে অবদান রাখতে প্রস্তুত থাকবে।

শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পরপরই বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করেন। তখন বাংলাদেশ মারাত্মক খাদ্য ঘাটতিতে ভুগছিল।

তিনি উল্লেখ করেন, তারপর থেকে মাত্র দুই বছর পর তার সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে সক্ষম হয়ে উঠেছে।

তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করা তার প্রথম অগ্রাধিকার ছিল। কারণ বিপুল জনসংখ্যার দেশটি চাষযোগ্য জমির অভাবের কারণে প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল।

শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশি বিজ্ঞানিদের প্রশংসা করে বলেন, “বাংলাদেশের বিজ্ঞানি ও গবেষকেরা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া-লবণ, খরা, জলাবদ্ধতাসহিষ্ণু বিভিন্ন প্রজাতির জাত উদ্ভাবনের মতো অসাধারণ কাজ করছেন।”

তিনি বলেন, “খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের পর, তার সরকার এখন সবার জন্য পুষ্টি নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করছে।”

চলমান করোনা মহামারির মতো আসন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় তিনি খাদ্য সংরক্ষণ এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ওপর জোর দেন।

শেখ হাসিনা সিভিএফ দেশগুলো, বিশেষ করে এসআইডিএস বা যেখানে চাষের জন্য জমি কম; সেসব দেশের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই পদ্ধতিতে তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য এফএওর মহাপরিচালককে পরামর্শ দেন।

শেখ হাসিনা বারবার বলেন, তিনি দেশকে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশে রূপান্তর করতে কাজ করে যাচ্ছেন, যেখানে মানুষ উন্নত জীবন পাবে।

এফএও মহাপরিচালক কু ডংইউ ঢাকায় ৩৬তম এফএও রিজিওনাল কনফারেন্স ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের (এপিআরসি) সফল আয়োজনে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে খাদ্যশস্য, শাকসবজি, প্রাণিজ প্রোটিন ইত্যাদি সব ধরনের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।

তিনি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় তার দীর্ঘ প্রতিশ্রুতি এবং এফএওর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

কু ডংইউ আরও শক্তিশালী, উদ্ভাবনী ও ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে বিদ্যমান সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। এবং আরও বেশি করে খাদ্য ও অর্থকরী ফসল উৎপাদনে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় রাজনৈতিক সমর্থনের প্রশংসা করেন।

তিনি শেখ হাসিনার উন্নয়ন কৌশলের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নে তার অগ্রণী ভূমিকার কথাও স্বীকার করেন, যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রশংসিত।

এছাড়াও তিনি ২০২০ সালের অক্টোবরে রোমে অনুষ্ঠিতব্য একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এফএওর মহাপরিচালকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন এফএও সদর দপ্তরের (রোম) প্রধান অর্থনীতিবিদ ম্যাক্সিমো তোরো, জং-জিন কিম, সহকারী মহাপরিচালক, এফএও আঞ্চলিক অফিস, ব্যাংকক এবং ঢাকায় এফএও প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন।

এ সময় কৃষিমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক, রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম এবং রোমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং এফএও, আইএফএডি এবং ডব্লিউএফপি, রোমে স্থায়ী প্রতিনিধি মো. শামীম আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর শেষে দেশে ফিরেছেন শেখ হাসিনা

সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঁচ দিনের সরকারি সফর শেষ করে শনিবার মধ্যরাতে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমানটি বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে (স্থানীয় সময়) আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।

গত ৭ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা সরকারি সফরে উপসাগরীয় দেশটিতে যান।

এই সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন তিনি। দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

এ ছাড়া ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং দুবাই ইন্টারন্যাশনাল চেম্বারের মধ্যে দুটি দেশের মধ্যে একটি জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার জন্য আরেকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী দুবাই এক্সিবিশন সেন্টারে (ডিইসি) এক্সপো ২০২০ দুবাইও পরিদর্শন করেন এবং সেখানে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত “নারীর ভবিষ্যত পুনর্নির্ধারণ” শীর্ষক একটি উচ্চস্তরের প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর উপলক্ষে তার সম্মানে আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায়ও যোগ দেন।

তিনি রাস আল খাইমায় বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভবনের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন।

শেখ হাসিনা এক্সপো ২০২০ দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড প্যাভিলিয়নে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের যৌথ আয়োজনে একটি বিজনেস ফোরামেও যোগ দেন।

XS
SM
MD
LG