অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধরত বিদেশিরা কেউ পাচ্ছেন তিরস্কার, কেউ পাচ্ছেন সরকারি সমর্থন


ব্রিটেন থেকে আগত চারজন বিদেশি যোদ্ধা ইউক্রনের পূর্ব ফ্রন্ট লাইনের দিকে রওনা হওয়ার আগে পশ্চিম ইউক্রেনের লেভিভের প্রধান ট্রেনস্টেশনে একটি ছবির জন্য পোজ দিচ্ছেন। ৫ মার্চ ২০২২। (ছবি- রয়টার্স)
ব্রিটেন থেকে আগত চারজন বিদেশি যোদ্ধা ইউক্রনের পূর্ব ফ্রন্ট লাইনের দিকে রওনা হওয়ার আগে পশ্চিম ইউক্রেনের লেভিভের প্রধান ট্রেনস্টেশনে একটি ছবির জন্য পোজ দিচ্ছেন। ৫ মার্চ ২০২২। (ছবি- রয়টার্স)

ওয়াশিংটন—রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের পক্ষে লড়াই করতে আসা হাজার হাজার বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধারা নিজ নিজ দেশের সরকারের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন। এর মধ্যে যেমন রয়েছে ইউক্রেনপন্থী দেশ থেকে আসা যোদ্ধা। আবার রয়েছে খোদ রাশিয়া এবং তার মিত্র বেলারুশ থেকে আগত যোদ্ধা।

ভয়েস অফ আমেরিকার চিহ্নিত তিনটি প্রধান প্রতিক্রিয়ার ধরনের মধ্যে রয়েছে পশ্চিমা সরকারগুলোর প্রতিক্রিয়া যারা নাগরিকদের ইউক্রেনকে আত্মরক্ষায় সহায়তা করতে মৌন বা স্পষ্ট অনুমতি দিচ্ছে। এশীয় সরকার যারা নাগরিকদের যুদ্ধে না যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে এবং রাশিয়া ও বেলারুশ কর্তৃপক্ষ তাদের যেসব নাগরিক ইউক্রেনের পক্ষে লড়াই করছে তাদের নিন্দা করছে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিচ্ছে।

সর্বশেষ হিসাবে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রক ৬ মার্চ বলেছে যে, “প্রায় ২০ হাজার...অভিজ্ঞ [সামরিক] সেনা ও স্বেচ্ছাসেবক” ইউক্রেনের আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগদানের জন্য আবেদন করেছেন। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা এই আবেদনকারীদের মধ্যে কতজন ইউক্রেনে আছেন তা বলেননি। তবে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বলেছে যে, ১১ মার্চের মধ্যে ৫০টিরও বেশি দেশ থেকে সেনা এসেছেন।

ইউক্রেনের একটি সরকারি ওয়েবসাইট, ব্রিটেন, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, ডেনমার্ক, ইসরাইল, লাটভিয়া, নেদারল্যান্ডস ও পোল্যান্ড, এই আটটি দেশকে চিহ্নিত করেছে।

ভয়েস অফ আমেরিকা স্বাধীনভাবে ইউক্রেনের বহিরাগত সেনাসংখ্যা যাচাই করতে পারেনি। একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করতে চাওয়া অজানাসংখ্যক বিদেশি সেনারা তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া না করেই ইউক্রেনে প্রবেশ করেছেন।

যুদ্ধে জড়িত ইউক্রেনপন্থী যোদ্ধাদের মধ্যে রাশিয়া ও বেলারুশের নাগরিকেরা রয়েছে, যারা বছরের পর বছর ধরে ইউক্রেনকে রক্ষা করতে সহায়তা করে আসছেন।

তাদের মধ্যে রাশিয়ান প্রজাতন্ত্র চেচনিয়া থেকে নির্বাসিত যোদ্ধারাও রয়েছেন। তারা ১৯৯০ ও ২০০০–এ দুটি যুদ্ধের পর চেচনিয়ায় তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রচারণাকে নস্যাৎ করে দেওয়ার পর থেকে মস্কোর বিরোধিতা করে আসছে।

ব্রিটেনভিত্তিক চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা আখমেদ জাকায়েভের মতে, চেচেন যোদ্ধারা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনে রয়েছে। তারা পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে রাশিয়ার বাহিনী ও রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতিহত করছে। চেচেন যোদ্ধারা তাদের সংখ্যা প্রকাশ করেননি।

স্বাধীন বেলারুশিয়ান সংবাদপত্র নাশা নিভা অনুসারে, রাশিয়া ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্র, বেলারুশিয়ান প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোকে বিরোধিতাকারী নির্বাসিত বেলারুশিয়ান যোদ্ধারা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় সক্রিয় ছিলেন।

যদিও লুকাশেঙ্কো প্রকাশ্যে ইউক্রেনের পক্ষে লড়াইরত বেলারুশিয়ান যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার হুমকি দেননি। তবে তিনি ১৫ মার্চ তার নিরাপত্তা প্রধানদের সঙ্গে এক বৈঠকে তাদের “পাগল” সম্বোধন করেন এবং বলেন যে, এরা শুধুমাত্র অর্থের জন্য লড়াই করছে।

রাশিয়া ও বেলারুশের বিপরীতে, জর্জিয়া তুলনামূলকভাবে শান্ত ছিল। দেশটির কিছু নাগরিক কয়েক বছর ধরে কিয়েভপন্থী সেনাদলের অংশ হিসেবে ইউক্রেনে অবস্থান করছেন। জর্জিয়ান সরকার বর্তমান রুশ আক্রমণের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ে যোগদানকারী সেনাবাহিনী সম্পর্কে তার অবস্থান সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য ভয়েস অফ আমেরিকার অনুরোধে সাড়া দেয়নি। ২০০৮ সালের যুদ্ধের পর থেকে জর্জিয়ার নিজস্ব দুটি অঞ্চল রাশিয়ার হানাদারদের দখলে রয়েছে।

যদিও এশিয়ার অন্য কিছু দেশ তাদের নাগরিকদের ইউক্রেনে যুদ্ধ করার বিরুদ্ধে তাদের দ্ব্যর্থহীন অবস্থান স্পষ্ট করেছে।

রাশিয়া আক্রমণ শুরু করার চার দিন পর উজবেক আইন মন্ত্রক ২৮ ফেব্রুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ অ্যাপ টেলিগ্রামে একটি সতর্কবার্তা পোস্ট করে বলেছে যে, কোনো উজবেক নাগরিক যদি বিদেশি সামরিক বা নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন, তবে সেটা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং তার পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি, এই মাসে ভয়েস অফ আমেরিকার উর্দু পরিষেবার একটি প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ইসলামাবাদ চায় না যে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে দুই পক্ষের কারও সঙ্গে “কোনো পাকিস্তানি জড়িত হোক”।

পশ্চিমা দেশগুলোতে নাগরিকদের বিদেশি সামরিক বাহিনীতে যোগদানে বাধা দেওয়ার আইন রয়েছে। যেহেতু এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরকারের জন্য অপ্রত্যাশিত বিদেশি সংঘাত টেনে আনতে পারে। কিন্তু কর্মকর্তারা হয় ইউক্রেনকে রক্ষা করতে চাওয়া নাগরিকদের বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগের বিষয়ে নীরব থাকছেন, যা এই ইস্যুতে মিশ্র বার্তা দিচ্ছে বা স্পষ্টভাবে নাগরিকদের রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগ দিতে উত্সাহিত করেছেন।

বাইডেন প্রশাসন আমেরিকানদের স্বেচ্ছায় ইউক্রেনের পক্ষে লড়াই করতে নিরুৎসাহিত করেছে। কিন্তু প্রশাসন এই ধরনের স্বেচ্ছাসেবকদের সম্পর্কে কোনো সতর্কতা জারি করেনি বা শাস্তির কথাও বলেনি।

ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তর ৯ মার্চ তার নাগরিকদের বলেছে “যদি আপনারা যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনে যান বা সংঘাতে জড়িত অন্যদের সহায়তা করেন, আপনার কার্যকলাপ ব্রিটেনের আইন অনুসারে অপরাধ হিসাবে গণ্য হতে পারে। এবং আপনারা যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার পর আপনাদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য চালানো হতে পারে।”

রাশিয়ার সীমান্তবর্তী একটি প্রাক্তন সোভিয়েতভুক্ত রাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর নেটো জোটের সদস্য, লাটভিয়ার নাগরিকেরা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য লড়াই করতে চাওয়া ইউরোপের সবচেয়ে সোচ্চার সমর্থকদের অন্যতম। দেশটির পার্লামেন্ট লাটভিয়ানদের যুদ্ধে যোগ দেওয়ার অনুমতি দিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি আইন পাস করে।

XS
SM
MD
LG