অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নিরাপত্তার কারণে মুহিবুল্লাহ'র পরিবার বাংলাদেশ ছাড়লো


মুহিবুল্লাহ'র পরিবার, ছবি- নূর খান লিটন
মুহিবুল্লাহ'র পরিবার, ছবি- নূর খান লিটন

নিরাপত্তাজনিত কারণে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ'র পরিবারকে দেশ ছাড়তে হলো। বৃহস্পতিবার রাতে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে পরিবারসহ ১১ জন সদস্য কানাডার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন। এরমধ্যে মুহিবুল্লাহ'র স্ত্রী নাসিমা খাতুন ও তার ভাই হাবিবুল্লাহ রয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটা অত্যন্ত সুখবর। পরিবারটি অনেকদিন থেকে যথেষ্ট আতঙ্কের মধ্যে ছিল। তারা বিদেশে চলে গেছে। ড. মোমেন অবশ্য এটাও বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে গেলে আমরা আরও বেশি খুশি হতাম।

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন এই সংবাদদাতাকে বলেন, চারদিন আগে ইউএনএইচসিআর ও আইওএম-এর পক্ষ থেকে মুহিবুল্লাহ'র পরিবারসহ ১১ জন সদস্যকে বারিধারাস্থ একটি গেস্ট হাউসে রাখা হয়। তিনি তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মুহিবুল্লাহ'র স্ত্রী নাসিমা খাতুন বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে ধন্যবাদ জানান তাদেরকে আশ্রয় দেয়ার জন্য। একইসঙ্গে কানাডার সরকারকেও ধন্যবাদ জানান তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।

গত ২৯শে সেপ্টেম্বর কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে মুহিবুল্লাহ খুন হন। প্রশাসনকে আগেই তার জীবন হুমকির মুখে- জানানো হয়েছিল। যদিও সরকার বলেছে, তাদের কাছে আগাম কোনো তথ্য ছিল না। জাতিসংঘের তরফে একাধিক চিঠিতে মুহিবুল্লাহ'র পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়।যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকনও এই ঘটনার স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেন। বলেন, জঘন্য এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে কয়েক দফায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মুহিবুল্লাহ জনপ্রিয় এবং আলোচিত নেতা ছিলেন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মংডু এলাকায় তার জন্ম। তিনি সেখানেই বেড়ে ওঠেন, ছিলেন শিক্ষক। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের দাবি আদায়ের ব্যাপারে বরাবরই ছিলেন সোচ্চার। তিনি আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ছিলেন। ৪৮ বছর বয়সী এই নেতা রোহিঙ্গাদের সংগঠিত করছিলেন। মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর তার পরিবার অনেকটা পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। সন্ত্রাসীরা ক্রমাগত হুমকি দিয়ে আসছিল। এই প্রেক্ষাপটে গত বছরের শেষদিকে মুহিবুল্লাহ'র পরিবার ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের ১১ জন সদস্য জীবনের নিরাপত্তা ও আশ্রয় চেয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার বরাবর চিঠি পাঠান। এরপর শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস থেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় দেয়ার জন্য আর্জি জানানো হয়। কানাডা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের গ্রহণ করতে সম্মতি দেয়। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতেই তাদেরকে কানাডায় যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়।

উল্লেখ্য যে, মুহিবুল্লাহ'র হত্যাকাণ্ডের পর তার স্ত্রী নাসিমা খাতুন ও তার ছোট ভাই হাবিবুল্লাহকে মেরে ফেলার ক্রমাগত হুমকি দেয়া হচ্ছিল।

XS
SM
MD
LG