অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে ডায়রিয়া পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না শিগগিরই


আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা।

বাংলাদেশে ডায়রিয়া পরিস্থিতির শিগগিরই উন্নতি হচ্ছে না। মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া ডায়রিয়া পরিস্থিতি আরও কিছুদিন ভোগাবে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ও আক্রান্তের হার বিশ্লেষন করে এমন তথ্য জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। ১৫ মার্চ থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়তে থাকে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে বিশেষায়িত এই হাসপাতালের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আইসিডিডিআরবিতে এমন চিত্র দেখা গেলেও রাজধানীর অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ তেমন দেখা যায়নি।

আইসিডিডিআরবির তথ্য যা বলছে

আইসিডিডিআরবির তথ্য অনুযায়ী, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে রোগীর সংখ্যা বাড়ে। সাধারণত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে শেষ সপ্তাহে রোগী সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। এ বছরের পরিস্থিতি কিছুটা ব্যতিক্রম। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে দৈনিক রোগী এসেছে ৫০০ জনের মতো । দ্বিতীয় সপ্তাহে দৈনিক রোগী সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬০০। গত ১৪ মার্চ থেকে এ সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। ১৫ মার্চ থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। এর আগে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে এ রকম একটি প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল, যা একেবারে মহামারির রূপ ধারণ করে। সেটি স্থায়ী হয়েছিল মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।

আইসিডিডিআরবির জরুরি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ মার্চ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন ১০৫৭ জন, ১৭ মার্চ ভর্তি ছিল ১১৪১ জন, ১৮ মার্চ ১১৭৪, ১৯ মার্চ ১১৩৫, ২০ মার্চ ১১৫৭, ২১ মার্চ ১২১৬, ২২ মার্চ ১২৭২, ২৩ মার্চ ১২৩৩, ২৪ মার্চ ১১৭৬, ২৫ মার্চ ১১৩৮, ২৬ মার্চ ১২৪৫, ২৭ মার্চ ১২৩০, ২৮ মার্চ ১৩৩৪, ২৯ মার্চ ১৩১৭, ৩০ মার্চ ১৩৩১ এবং ৩১ মার্চ ১২৮৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। চলতি এপ্রিল মাসের ১ তারিখে ১২৭৪ জন এবং ২ এপ্রিল রাত ৮টা পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১০৭১ জন। স্বস্থির কথা হচ্ছে, ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি।

আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিষ্ঠানের হাসপাতাল শাখার প্রধান ডা. বাহারুল আলম বলেন, “কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে, তা এখনই ঠিক করে বলা সম্ভব নয়। ডায়রিয়ার তীব্রতা এখনো আছে। আমরা ডায়রিয়া পরিস্থিতির চূড়ায় বসে আছি। অভিজ্ঞতা থেকে যদি বলি, তাহলে বলতে হবে ডায়রিয়ার প্রদুর্ভাব সাধারণত ৬ সপ্তাহের মধ্যে চলে যায়। আমরা ৩ সপ্তাহের বেশি সময় পার করেছি। আরো ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে হয়তো প্রাদুর্ভাব কমে আসবে।”

ডায়রিয়ায় আক্রান্তরা যা বলছেন

তিন দিন আগে পাতলা পায়খানা শুরু হলে মিরপুরের ভাসানটেক এলাকার সাকিলাকে আইসিডিডিআরবিতে নেওয়া হয়। হাসপাতালের প্রধান ভবনে জায়গা না হওয়ায় তাকে তাঁবুতে রাখা হয়েছে। সাকিলা বলেন, “আমাদের বাসার কল দিয়ে যে পানি আসছে তাতে কয়েক দিন ধরেই দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। পানি ফুটানোর পরও এই দুর্গন্ধ যায় না। এর মধ্যে আবার একদিন বাইরে ঝালমুড়ি মাখানো খেয়েছিলাম। রাত থেকে পেটব্যথা শুরু হয়। সকাল থেকে শুরু হয় পাতলা পায়খানা আর বমি।”

কথা হয় যাত্রাবাড়ি থেকে আসা কামাল হোসেনের সঙ্গে। কামাল বললেন, “যাত্রাবাড়ি এলাকায় চায়ের দোকান চালিয়ে সংসার চালাই। গত দুইদিন ধরে এখানে আছি।এর আগে আরও দুইদিন বাসায় ছিলাম অসুস্থ হয়ে।” কীভাবে আক্রান্ত হলেন জানতে চাইলে বললেন, “পরিবারের লোকজন গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। তাই সড়কের পাশের হোটেলে ভাত খেয়েছি দুইদিন। সেখান থেকেই পেটব্যাথা শুরু। তারপর পেট খারাপ ও বমি।”

শিল্পী বেগম এসেছেন ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে। তিনি জানালেন, দুইদিন ধরে এখানে ভর্তি আছেন। সম্পূর্ণ চিকিৎসা পাচ্ছেন বিনা খরচে জানিয়ে বললেন, “এখানে আছি দুইদিন। স্যালাইন, ওষুধ সব ফ্রি পাই। বিনা দামে এসব পেয়ে বড় উপকার হইলো।”

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন ভয়েস অফ আমেরিককে বলেন, “মহামারির বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর মানুষের অসাবধানতা, বাইরের খাবার ও পানীয় গ্রহণের প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে। অসতর্কতার কারণে এবার ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, মুগদা, শনির আখড়া, মানিকনগর, উত্তরখান, দক্ষিণখান, কড়াইল, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপটা বেশি। ওইসব এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট। ফলে ওই এলাকার বাসিন্দারা যে পানি পান করছেন সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দূষিত। এখন ওয়াসাকে দ্রুত ওইসব এলাকায় খাবার পানির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে।”

যা করণীয়

ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় কী করণীয় জানতে চাইলে আইসিডিডিআরবির চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়ারিয়া আক্রান্তদের ক্ষেত্রে পানি শূন্যতা পূরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। আতঙ্কিত না হয়ে বেশি বেশি খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। বমি না হলে বাসায় রেখেই ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে। বমি হলে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে। এছাড়া কোনো অবস্থাতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এন্টিবায়োটিক না খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি, বিশুদ্ধ পানি পান করার পরামর্শ তাদের।

চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, ওয়াসার পানি পানের আগে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে। রাস্তায় বা খোলা জায়গার খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। খাবার খাওয়ার আগে হাত ভালো করে পরিস্কার করতে হবে। দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা খাবার বা বাসী খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

অতিরিক্ত গরম, ঠাণ্ডা বা বায়ু দষণের ফলেও ডায়রিয়া হতে পারে, তাই এসব বিষয়েও সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের।

XS
SM
MD
LG