অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশের করোনা টিকার এক-চতুর্থাংশই যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান


বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের দেয়া এই ছবিতে, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফাইজারের ১০ লাখ ডোজ কোভিড-১৯ এর টিকা পৌঁছালে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারসহ অন্যান্য যারা উপস্তিত ছিলেন, তাদের দেখা যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর ০১
বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের দেয়া এই ছবিতে, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফাইজারের ১০ লাখ ডোজ কোভিড-১৯ এর টিকা পৌঁছালে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারসহ অন্যান্য যারা উপস্তিত ছিলেন, তাদের দেখা যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর ০১

বাংলাদেশে, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে ভ্যাকসিন দেওয়ার মধ্য দিয়ে কোভিড-১৯ টিকা কর্মসূচ শুরু হয়। এর পর, ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সাধারণ মানুষকে টিকা দেয়া শুরু করে বাংলাদেশ সরকার।

কর্মসূচিটি শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই হোঁচট খায়। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশেকে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে, ৬ মাসে মোট ৩ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করার কথা ছিল ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের। ২০২১ সালের প্রথম দুই মাসে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানটি। এর বাইরে আরও ৩২ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দেয় ভারত সরকার। সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে টিকা স্বল্পতা দেখা দেয়। এ কারণে, ২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার।
আর, সেই টিকা সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সহযোগী হয়ে উঠে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ৫ এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত দেশটি বিশ্বব্যাপী ১১০টিরও বেশি দেশে, অন্তত ৫১ কোটি ডোজ টিকা অনুদান হিসেবে দিয়েছে। আর বাংলাদেশ এই অনুদানের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঐ একই দিনের হিসাবে, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত ৬ কোটি ১২ লাখেরও বেশি ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে ফাইজার-বায়োএনটেক এর টিকা রয়েছে সাড়ে ৫ কোটির বেশি, মডার্নার টিকা রয়েছে ৫৫ লাখের বেশি এবং জনসন অ্যান্ড জনসন এর টিকা রয়েছে অন্তত ৬ লাখ ৭৯ হাজার।

এই হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী অনুদান হিসেবে দেয়া টিকার প্রায় ১২ শতাংশই (১১.৮৬%) পেয়েছে বাংলাদেশ। অপরদিকে, বিশ্বব্যাপী অনুদানের, ৫১ কোটিরও বেশি ডোজ টিকার মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার মোট ১০টি দেশে, ১৪ কোটি ১৪ লাখের বেশি ডোজ টিকা দিয়েছে। এর সবচেয়ে বড় অংশটি পেয়েছে বাংলাদেশ।

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় অনুদান হিসেবে দেয়া টিকার মধ্যে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ৪৩ শতাংশও বেশি টিকা গ্রহণ করেছে। এই অঞ্চলের টিকা গ্রহীতা অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, আফগানিস্তান, ভুটান, কিরগিজস্তান, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান।

এদিকে, ৫ এপ্রিল ২০২২, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী; দেশটিতে মোট ২৫ কোটি ৩০ লাখের বেশি ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া টিকার হিসাব করলে দেখা যায় যে, প্রয়োগ করা টিকার মধ্যে ২৪ শতাংশেরও বেশি ডোজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া। অর্থাৎ বাংলাদেশের কোভিড-১৯ টিকা কার্যক্রমের প্রায় এক-চতুর্থাংশই সম্ভব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনুদানে পাওয়া টিকার ফলে।

কোভিড-১৯ টিকা সম্পর্কিত বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ৫ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ১১ কোটি ৪৫ লাখের বেশি মানুষকে পূর্ণ দুই ডোজ টিকার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এই বিস্তৃত টিকা কার্যক্রমের ফলে দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। সম্প্রতি, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে, ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকেও বাংলাদেশের টিকা কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের অবদানের কথা উঠে আসে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বাংলাদেশে ৬ কোটি ১০ লাখের বেশি ডোজ টিকা অনুদান দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়াও, বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্রের টিকা অনুদান কর্মসূচির সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী দেশ হওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও অডিট অনুবিভাগ) মোহাম্মদ শাহাদত হোসেন বলেন, “বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায়, বিশেষ করে, ভ্যাকসিন কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুত্বপূর্ণ আচারণ করেছে। দেশটি বিশ্বব্যাপী যে পরিমাণ করোনার টিকা উপহার হিসেবে তার বন্ধু রাষ্ট্রসমূহকে দিয়েছে সেখানে বাংলাদেশ সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে।”

বাংলাদেশে করোনা টিকা কার্যক্রমে সফলতার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা উল্লেখ করে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, “আমাদের দেশে এখন করোনা টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। এই কার্যক্রমের পেছনে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের টিকা । বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, এই টিকা কূটনীতির মধ্যে তা আবারও দেখা গেল।”

XS
SM
MD
LG