অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রোজাদারের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার


রোজাদারের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার (প্রতীকী ছবি)
রোজাদারের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার (প্রতীকী ছবি)

শুরু হয়েছে রমজান মাস। মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পবিত্র এ মাস। রমজান সিয়াম সাধনার মাস। এবার বাংলাদেশে রমজান মাস শুরু হয়েছে কাঠফাটা গরমে। সে জন্যে সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত প্রায় ১৪ ঘন্টা সুস্থ্ থেকে রোজা পালন ও ইবাদত করতে পারা একটা চ্যালেঞ্জ । একে তো গরম, তার ওপর রোজা রেখে দিন শেষে অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে সাহরি ও ইফতারের খাবারটা হওয়া উচিত সমৃদ্ধ ও ভারসাম্যপূর্ণ।

পরিকল্পিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে কিভাবে সুস্থ্ থেকে রোজা পালন করতে পারেন, সে পরামর্শ দিয়েছেন ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান এবং পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী। জানালেন, শরীরকে দৈনন্দিন কাজে কর্মক্ষম রাখা, অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে না পড়া এবং শরীরের পুষ্টির চাহিদা যাতে পূরণ হয়- সে দিকে নজর রেখে ইফতার, রাতের খাবার ও সাহরি এই তিনটি খাবারকে সাজাতে হবে।

ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান এবং পুষ্টিবিদ ডা. তামান্না চৌধুরী
ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান এবং পুষ্টিবিদ ডা. তামান্না চৌধুরী

ইফতারে কী খাবেন

রোজা রাখার পর ইফতার প্রথম খাবার। তাই সেটা স্বাস্থ্যকর হওয়া প্রয়োজন। সাধারণত আমরা ইফতারে মুখরোচক, ভাজাপোড়া খাবার খেয়ে থাকি। এগুলোতে প্রচুর তেলের ব্যবহার হয়, যা শরীরে ট্রান্সফ্যাট তৈরি করে। যারা বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে আছেন, তাদের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও এসব খাবারে প্রচুর লবণ রয়েছে, যা শরীরকে পানিশূণ্য করে। অ্যাসিডিটি বাড়ায়, অস্বস্তি তৈরি করে। তাই, এধরণের খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। এজন্য বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবারের ওপর জোর দিতে হবে। যেমন চিকেন ফ্রাইয়ের বদলে বাসায় তৈরি গ্রিল চিকেন খাওয়া যেতে পারে। খাবারে কিছুটা শর্করা যোগ করতে হবে। সেটা হতে পারে চিড়ে, মুড়ি বা লাল আটার তৈরি একটা পাতলা রুটি, এমনকি সামান্য ভাতও হতে পারে। সেই সাথে অবশ্যই সবজি থাকতে হবে। সারাদিনে তিন থেকে চার পরিবেশনে সবজি খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রেও আমরা সবজিকে তিনবারের খাবারে ভাগ করে খেতে পারি। প্রতিদিন বেগুনি বা ডুবোতেলে ভাজা না খেয়ে, সবজি দিয়ে তৈরি শ্যালো ফ্রাই করা চপ, সবজি-খিচুড়ি বা রুটি-সবজি থাকতে পারে খাদ্য-তালিকায়। পানি ও খেজুর হতে পারে ইফতার অনুসঙ্গ। তরল খাবারের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বাজারের রঙিন পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। এই গরমে ঘরে তৈরি লেবুর শরবত, বেলের শরবত, ডাবের পানি খুব দ্রুত শক্তি প্রদান করে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে। অবশ্যই মৌসুমী ফল রাখতে হবে। ফল থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন সি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। রকমারি ফল ইফতারকে সমৃদ্ধ করবে। এই মৌসুমে যেসব দেশি ফল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো খেতে হবে। ফলের জুসের সাথে অতিরিক্ত চিনি না খাওয়াই ভালো। মাছ, মাংস বা ডিম দিয়ে তৈরি কোনো খাবার থাকতে পারে। সারাদিন রোজার পরে আমিষের অভাব পূরণ করবে। হালিমের বদলে সবজি খিচুড়ি খাওয়া ভালো।

রাতের খাবার

রাতের খাবার অবশ্যই খেতে হবে। রাতের খাবারে দুধ মুড়ি, দুধ ভাত, অথবা দুধের সাথে ওটস বা সিরিয়াল খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া ইফতারে বেশি ভারী খাবার না খেয়ে এ সময়টাতে পাতলা খিচুড়ি, রুটি-সবজি, ভাত, মাছ-মাংস, খাওয়া যেতে পারে। তারাবীহ নামাজের পর ডিনার করা ভালো।

সেহরিতে কী খাবেন

সাধারণ সময়ে দুপুরে আমরা যে খাবারটি খাই রোজাদাররা তা সেহরিতে খাবেন। ভাত, সবজি, মাছ বা মুরগী এধরণের সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে, যেগুলো অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণ করে। কোন ধরণের বেকারি আইটেম, মিষ্টান্ন, ভাজা-পোড়া খাবার, রিচ ফুড, পোলাও, বিরিয়ানি সেহরিতে খাওয়া উচিত নয়। চা-কফি না খাওয়াই ভালো।

পানি খাওয়ার নিয়ম

ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত দুই থেকে আড়াই লিটার পানি খাওয়া উচিত। একটা নিজস্ব বোতল রাখতে হবে। ইফতারের সময় থেকে সেহরি পর্যন্ত ওই বোতলে পরিমাপ করে পানি খেতে হবে। ইফতারের পরপর কিছুটা পানি খেতে হবে। আবার তারাবীহর নামাজের পর এক দেড় লিটার পানি খাওয়া যেতে পারে। সাহরিতে একটু আগে খাবার খেয়ে ফযরের নামাজের আগ পর্যন্ত পানি খেলে, দুই থেকে আড়াই লিটার পানি প্রতিদিন খাওয়া সম্ভব। তাছাড়া শরবত ও অন্যান্য তরল তো খাওয়া হচ্ছেই।

রন্ধনবিশারদ উম্মাহ মোস্তফা
রন্ধনবিশারদ উম্মাহ মোস্তফা

দুটি স্বাস্থ্যকর খাবারের রেসিপি দিয়েছেন রন্ধনবিশারদ উম্মাহ মোস্তফা ।

চিকেন ক্যাশুনাট সালাদ

উপকরণঃ চিকেন - ২৫০ গ্রাম, সবুজ, লাল, হলুদ তিন রঙের বেলপেপার বা ক্যাপসিকাম - আধা কাপ করে, ক্যাশুনাট (কাজু বাদাম) - ১০০ গ্রাম, টমেটো চিলি সস - ১ কাপ, টমেটো কেচআপ - ৪ টেবিল চামচ, কালো গোল মরিচের গুঁড়ো - আধা চা চামচ, লাল মরিচের গুড়া - আধা চা চামচ, আদা রসুন বাটা - আধা চা চামচ, ডিম - ১ টি, তেল - ভাজার জন্য, লবণ - স্বাদ মতন।

রান্না-প্রক্রিয়াঃ চিকেনের টুকরো মিনি কিউব করে কাটতে হবে। একইভাবে সব বেলপেপারও মিনি কিউব করে কাটতে হবে। একটা বোলে চিকেন-পিসের সাথে লাল মরিচের গুড়ো , আদা রসুন বাটা, লবন ও ডিম মিশিয়ে মেরিনেট করুন ১০ মিনিট। তেল গরম করে তাতে চিকেনগুলা দিয়ে সোনালি রং হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। চিকেন ভাজা হলে সেই তেলে কাজু বাদামগুলো সোনালি করে ভাজতে হবে। এখন একটা বোলে চিলি সস , টমটো কেচআপ , কালো গোল মরিচের গুড়া মিশিয়ে সালাদের ড্রেসিং বানাতে হবে। ভেজে রাখা উপাদান ও বাকি সব উপকরণ বেল পেপার দিয়ে নাড়াচাড়া করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। চিকেন ক্যাশুনাট সালাদ রেডি।

তিন লেয়ারের স্মুদি

উপকরণঃ পাকা আম - ১ কাপ, কিউই - ১ কাপ, ড্রাগন ফল - ১ কাপ, পানি ঝড়ানো টক দই - আধা কাপ, চিনি - ৩ টেবিল চামচ, হুইপড ক্রিম, চেরি - সাজানোর জন্য ।

প্রস্তুত প্রণালীঃ একটা ব্লেন্ডারে পাকা আম, ২ টেবিল চামচ টক দই, ১ টেবিল চামচ চিনি দিয়ে ব্লেন্ড করে ঘন পিউরি বানাতে হবে। এই পিউরি পরিবেশন গ্লাসের ১ম লেয়ারে দিন। এবার কিউই , ২ টেবিল চামচ টক দই , ১ টেবিল চামচ চিনি দিয়ে ব্লেন্ড করে ঘন পিউরি বানিয়ে পরিবেশন গ্লাসের ২য় লেয়ারে দিন। একদম উপরের লেয়ার সাজান, ড্রাগন ফল , ২ টেবিল চামচ টক দই , ১ টেবিল চামচ চিনি দিয়ে তৈরি করা পিউরি দিয়ে। সবার উপরে হুইপড ক্রিম ও চেরি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

XS
SM
MD
LG