তালিবান আফগান নারী ও মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষার ওপর তাদের নেতার নিষেধাজ্ঞাকে ধর্মীয় নীতির ভিত্তিতে করা হয়েছে বলে চিত্রায়িত করলেও মুসলিম পণ্ডিত ও অধিকারকর্মীরা বলেছেন যে, শিক্ষার ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের কোনো ধর্মীয় ন্যায্যতা নেই।
আফগানিস্তানের তথাকথিত ইসলামিক আমিরাতের নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা, যিনি প্রকাশ্যে আসেন না, তিনি আফগান মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য মুসলিম বিশ্বের ক্রমবর্ধমান দাবি সত্ত্বেও নীরব রয়েছেন।
তালিবান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রকের কর্মকর্তারা বলছেন, আখুন্দজাদা আদেশ দিলেই তারা সব মেয়েদের জন্য স্কুল আবার চালু করতে প্রস্তুত। কিন্তু বিচ্ছিন্ন এই তালিবান নেতা, যিনি “বিশ্বস্ত কমান্ডারের” ধর্মীয় উপাধিতে ভূষিত, বারবার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান স্বত্তেও—এমনকি অনেক আফগান ইসলামিক ধর্মগুরুর কাছ থেকে আসা আহবানও- উপেক্ষা করেছেন।
কাবুলের একদল আলেম মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় আবার চালু করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ইসলাম শিক্ষা ও কাজের অধিকারসহ নারীদের অধিকারের বাহক”। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এটি ছিল আলেমদের দ্বিতীয় এমন দাবি।
নারীদের জন্য শিক্ষা ও কাজের সমর্থনে ইসলামী আইনশাস্ত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বিশিষ্ট পণ্ডিতরাও একই ধরনের আহ্বান জানিয়েছেন।
আফগানিস্তানের একজন নেতৃস্থানীয় ইসলাম বিশারদ শেখ ফকিরুল্লাহ ফাইক গত মাসে একটি অডিও বার্তায় বলেছেন, “নারীর শিক্ষা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই”। তিনি বলেন, তিনি আরও অনেক মুসলিম পণ্ডিতের পক্ষে কথা বলছেন।
আন্তর্জাতিক আহ্বান
অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) থেকে শুরু করে বিভিন্ন মুসলিম দেশের ধর্মীয় পণ্ডিতদের কাউন্সিল পর্যন্ত সকলে মেয়েদের শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছে।
“আফগানিস্তানের ডি ফ্যাক্টো সরকারের মেয়েদের স্কুলের ওপর আগের নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখার অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তের ফলে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশনের জেনারেল সেক্রেটারিয়েট গভীর হতাশা প্রকাশ করেছে”, সংস্থাটি ২৪ মার্চ টুইটে বলেছে।
উইমেনস ইসলামিক ইনিশিয়েটিভ ইন স্পিরিচুয়ালটি অ্যান্ড ইকুয়ালিটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ডেইজি খানের মতে, মেয়েদের শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞার কোনো ইসলামিক যুক্তি নেই। “ইসলাম জ্ঞান অন্বেষণের ওপর অনেক জোর দেয়”, তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মেয়েদের স্কুলের ওপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের এমন স্পষ্ট প্রত্যাখ্যানের প্রতিক্রিয়ায় তালিবানের শীর্ষ নেতার নীরবতা ইসলামি দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন।
উপজাতীয় সংস্কৃতি?
নিষেধাজ্ঞাকে অনৈসলামিক বর্ণনা করে কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন, তালিবান নেতার মেয়েদের শিক্ষার প্রতি এই বিরূপ মনোভাব আফগানিস্তানের পিতৃতান্ত্রিক উপজাতীয় ঐতিহ্যের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস কাউন্সিল নামের একটি বেসরকারি নাগরিক অধিকার ও অ্যাডভোকেসি গ্রুপের মেরিল্যান্ড অফিসের একজন মুখপাত্র ও পরিচালক জয়নব চৌধুরী বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত, আফগানিস্তানের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে নারীবিদ্বেষী প্রথা ও রীতিগুলো নারীদের ওপর পুরুষের আধিপত্যকে অব্যাহত রেখেছে। মেয়েদের শিক্ষার ওপর তালিবানের অনৈসলামিক নিষেধাজ্ঞার সেই প্রথারই একটি বহিঃপ্রকাশ মাত্র”।
বিশ্বের মধ্যে নারীদের সবচেয়ে খারাপ স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচক থাকায় তালিবানের ক্ষমতায় আসার আগেও আফগানিস্তানকে নারীদের জন্য সবচেয়ে খারাপ দেশ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল।