অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

“আমরা সতর্ক দৃষ্টি রেখেছি যাতে ঋণগুলো বোঝা হয়ে না যায়”—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশে বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্প নিয়ে যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে তা দূর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও বলেছেন, ঋণ যেন বোঝা না হয় সে জন্য তার সরকার সতর্ক রয়েছে।

বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা বলেছেন, “মেগা প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে দেশের অর্থনীতির চেহারা বদলে যাবে”।

তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে, কোনো ঋণ নেওয়া হয়নি। আমরা দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা অর্থনৈতিক সমীক্ষা চালিয়ে বাকি মেগা প্রকল্পগুলো হাতে নিয়েছি। শুধু ঋণের ভিত্তিতে নয়, বিদেশি অংশীদারত্বের মাধ্যমেও অনেক মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে”।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাষ্ট্র পরিচালিত টেলিভিশন ও বেতারের পাশাপাশি অন্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত দেশবাসীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি জানান, তার সরকার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য দেশি ও বিদেশি ঋণ নিয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা সতর্ক দৃষ্টি রেখেছি যাতে ঋণগুলো বোঝা হয়ে না যায়”।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, সম্পদ বৃদ্ধি করা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করা।…অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে ২০২২ ও ২০২৩ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য মাইলফলক। আর মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই চালু হবে বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু। সেতুটি জিডিপিতে এক দশমিক দুই শতাংশ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে”।
তিনি বলেন, “চলতি বছরের শেষ নাগাদ উত্তরা-আগারগাঁও ১৪ কিলোমিটার রুটে মেট্রোরেল চালু হবে। এটি রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে”।
শেখ হাসিনা বলেন, “দেশের প্রথম আন্ডারওয়াটার টানেল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী রিভার টানেল আগামী অক্টোবরে খুলে দেওয়া হবে।…রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে”।

এক দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্প। গত মাসে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্ধারিত সময়ের আগে উদ্বোধন করা হয়।

তিনি বলেন, “অন্য মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন দ্রুত এগিয়ে চলছে। দূরদর্শী রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন অর্থনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের কারণে এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে। গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রেখে জনগণের অংশগ্রহণে দেশ পরিচালনার ফলে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে”।

দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার জনগণের জন্য স্বস্তি আনতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে। জ্বালানির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক পরিবহন ভাড়াও তীব্রভাবে বেড়েছে। ফলে বাংলাদেশেও কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে আমরা অলস বসে নেই। আমরা সাধারণ জনগণকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি”।

তিনি বলেন, “পবিত্র রমজান মাসে সরকার ভর্তুকি দিয়ে টিসিবির মাধ্যমে প্রায় এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করছে। রাজধানীতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রতিদিন ১৫টি ফ্রিজার ভ্যানের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে মাংস, ডিম ও দুধ বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। এরফলে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ইতিমধ্যে স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে এসেছে”।

তিনি বলেন, এ ছাড়া আসন্ন ঈদ উপলক্ষে সরকার এক কোটি ৩৩ হাজার ৫৪টি ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে এক লাখ ৩৩০ মেট্রিক টন চালের বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “যদিও অনেক (বাঙালি) ঐতিহ্য বিভিন্ন আঘাতে হারিয়ে গেছে। তবুও পয়লা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপন তার নিজস্ব গৌরব নিয়ে টিকে রয়েছে”।

১৪২৯ সালের এই শুভ মূহূর্তের প্রাক্কালে তিনি বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, “পয়লা বৈশাখ আমাদের সকল সংকীর্ণতা ও অজ্ঞতা পরিহার করে উদার জীবনধারা গ্রহণে অনুপ্রাণিত করে। এটি আমাদের শক্তি দেয় এবং হৃদয় থেকে সব ক্লেদ ও জীর্ণতা দূর করে নতুন উদ্যমে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখায়”।

করোনাভাইরাস এখনো পুরোপুরি চলে যায়নি বলে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে পয়লা বৈশাখ উদযাপনের কর্মসূচিতে যোগ দিতে এবং বাংলা নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী সবাইকে আহ্বান জানান।

XS
SM
MD
LG