অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

“এই ভূমি রক্তে ভেজা”: ইউক্রেনের একটি গ্রামে মাটি খুঁড়ে মৃতদেহ উত্তোলন


ইরা স্লেপচেঙ্কো কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন। কফিনগুলোর একটিতে তার স্বামী সাশা নেদোলেজকোর মৃতদেহ রয়েছে। ইউক্রেনের মাইকুলিচিতে একটি গণকবর থেকে লাশগুলো উত্তোলন করা হয়। ১৭ এপ্রিল ২০২২।
ইরা স্লেপচেঙ্কো কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন। কফিনগুলোর একটিতে তার স্বামী সাশা নেদোলেজকোর মৃতদেহ রয়েছে। ইউক্রেনের মাইকুলিচিতে একটি গণকবর থেকে লাশগুলো উত্তোলন করা হয়। ১৭ এপ্রিল ২০২২।

দুই পাশে সারিবদ্ধ আখরোট গাছ। শান্ত এই মহল্লায় একটি কবরস্থানে চারটি মৃতদেহ রাখা। মৃতদেহগুলোর এখনো সৎকার হয়নি।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের অদূরে অবস্থিত এই গ্রামে সবাই রুশ সেনাদের নৃশংসতার শিকার। অস্থায়ী বাক্সগুলোতে করে মৃতদেহগুলো একটি কবরে এক সঙ্গে রাখা ছিল। রুশ সেনাদের প্রস্থানের পর রবিবার (১৮ এপ্রিল) স্বেচ্ছাসেবকেরা একে একে মৃতদেহগুলো উত্তোলন করেন।

এই বছরের বসন্ত কিয়েভের আশেপাশের শহর ও গ্রামে চাষাবাদের জন্য একটি প্রতিকূল ঋতু। রাশিয়ার দখলদারিত্বের মধ্যে দ্রুত কবর দেওয়া মৃতদেহগুলো এখন সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের তদন্তের জন্য উত্তোলন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৯০০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিকের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

এখানে চারটি মৃতদেহের সবাইকে একই দিনে, একই মহল্লায় হত্যা করা হয়েছিল বলে স্থানীয় একজন জানান, তিনি বাক্সগুলো সরবরাহ করেছিলেন।

স্বেচ্ছাসেবকরা বেলচা দিয়ে খনন করার চেষ্টা করেছিলেন। তারপর হাল ছেড়ে দিয়ে একজন পেশাদার খননকারীকে ডাকেন।

এরপর কবরস্থানে খননকারক এসে পৌঁছান। শিগগিরই তাজা মাটির গন্ধ ভেসে আসে এবং সঙ্গে গোঙানির আওয়াজ, “ওই তো ওরা”।

একজন নারী কাঁদতে থাকেন। ইরা স্লেপচেঙ্কো সমাহিত এক ব্যক্তির স্ত্রী। কেউ তাকে বলেনি সেখানে মৃতদেহের খোঁজে খনন করা হচ্ছে। অন্য একজন নিহতের স্ত্রীও এসেছেন। ভালিয়া নওমেনকো কবরের মধ্যে উঁকি দিয়ে দেহগুলো দেখেই ইরাকে জড়িয়ে ধরেন।

দুই দম্পতি একে অপরের প্রতিবেশী ছিলেন। রুশ বাহিনী গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার আগে শেষ দিনে, সেনারা একটি বাড়িতে কড়া নাড়ে। ভালিয়ার স্বামী পাভলো ইভানিউক দরজা খুললেন। সেনারা তাকে গ্যারেজে নিয়ে যায় এবং তার মাথায় গুলি করে, দৃশ্যত কোনো কারণ ছাড়াই।

সেনারা চিৎকার করে বলল, “এখানে কি আর কেউ আছে?”

ইরার স্বামী সাশা নেদোলেজকো গুলির শব্দ শোনেন। কিন্তু তিনি ভেবেছিলেন, কেউ উত্তর না দিলে সেনারা বাড়িঘর তল্লাশি করবে। তিনি দরজা খুলে দিলে, সেনারা তাকেও গুলি করে।

ইরা ধূমপান করতে করতে দূর থেকে তাকিয়ে ছিলেন। সবাই চলে যাওয়ায় পরও খালি বাক্সের পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। “এই সমস্ত মাটি রক্তে ভেসে আছে এবং এই শোক ভুলতে কয়েক বছর সময় লাগবে”, তিনি বলেন।

কবরস্থানের পাশের বাড়িতে, ৬৬ বছরবয়সী ভালিয়া ভোরোনেট বাড়িতে চাষ করা আলু রান্না করেছিলেন। তাদের বাড়িতে এখনো পানি, বিদ্যুৎ বা গ্যাস নেই। একটি ছোট রেডিও চলছে। কিন্তু দুঃসংবাদের কারণে দীর্ঘ সময়ের জন্য রেডিও চালু রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে। সদ্য কাটা মূলার প্লেট জানালার কাছে পড়ে আছে।

একজন রুশ সেনা একবার দৌড়ে এসে তার স্বামীকে সেলফোনের সংকেত পেতে ছাদে উঠতে দেখে তার দিকে অস্ত্র তাক করে। “একজন বৃদ্ধকে হত্যা করবে নাকি?” ৬৫ বছর বয়সী মাইহাইলো শেরবাকভ জবাব দেন।

সব রুশ সেনা একরকম নয়। ভোরনেটস বলেন, তার সঙ্গে সঙ্গে এক রুশ সেনাও কেঁদে ফেলেন, তার বয়স একুশও হয়নি। “তুমি খুব ছোট”, তিনি তাকে বলেন। আরেকজন সেনা তাকে বলেছিলেন যে, তারা যুদ্ধ করতে চান না।

XS
SM
MD
LG