অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

উত্তর ইরাকে পিকেকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে নতুন আক্রমণ শুরু করেছে তুরস্ক


ইরাকের কুর্দিস্তান
ইরাকের কুর্দিস্তান

তুরস্ক সোমবার (১৮ এপ্রিল) কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সশস্ত্র বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে উত্তর ইরাকে একটি নতুন স্থল ও বিমান অভিযান শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে।

এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে অপারেশন ক্ল-লক। আঙ্কারা সরকার বলেছে যে, এই পদক্ষেপটি তুরস্কে হামলা চালানোর জন্য ইরাককে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা থেকে পিকেকে প্রতিরোধ করার জন্য একটি প্রাক-উদ্যোগমূলক ব্যবস্থা।

১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কুর্দি স্বশাসনের জন্য লড়াইরত পিকেকে-কে তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

ইরাকি কুর্দিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মাসরুর বারজানি আঙ্কারায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে সাক্ষাতের কয়েক দিন পর নতুন এই অভিযান শুরু হয়েছে। বারজানির অফিসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই নেতা নিরাপত্তা, ব্যবসা ও বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আনাদোলু বার্তা সংস্থা তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকরের বরাত দিয়ে বলেছে, “আমাদের অভিযান পরিকল্পনা অনুযায়ী সফলভাবে চলছে। প্রথম ধাপে চিহ্নিত লক্ষ্যবস্তুগুলোতে অভিযান চালানো হয়েছে”।

এদিকে এক বিবৃতিতে, পিকেকে যোদ্ধারা দুটি তুর্কি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে এবং দুই ডজনেরও বেশি তুর্কি সেনাকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে।

ভয়েস অফ আমেরিকা স্বাধীনভাবে পরস্পরবিরোধী এই দাবিগুলো যাচাই করতে পারেনি।

তুর্কি সামরিক বাহিনী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্কের অভ্যন্তরে এবং উত্তর ইরাকে, দুই স্থানেই পিকেকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়েছে। সর্বশেষ অভিযানটি আমেদি শহরের শিলাদজে জেলার কাছাকাছি এলাকাগুলোকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়।

উত্তর ইরাকে তুরস্কের স্বার্থ শুধু পিকেকের বিরুদ্ধে লড়াই নয়। এই অঞ্চলে বিশেষ করে জ্বালানি খাতে তুরস্কের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। ইরানের ক্রমবর্ধমান শক্তির বিপক্ষে ভারসাম্য রক্ষার জন্য তুরস্কও এই অঞ্চলে তার প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে।

অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, কুর্দিস্তানের কাছে আনুমানিক ৭০০ বিলিয়ন ঘনমিটার (২৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট) প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে। তাদের মতে তুরস্ক ও ইউরোপের জন্য এটি একটি প্রধান জ্বালানি সরবরাহকারী হয়ে উঠতে পারে। কারণ বিশ্ব রাশিয়ার গ্যাসের ওপর তার নির্ভরতা বন্ধ করার চেষ্টা করছে।

কুর্দিস্তান রিজিওনাল গভর্নমেন্টের (কেআরজি) বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান, সাফিন দিজায়ি বলেছেন যে, অভ্যন্তরীণ সরবরাহ পূরণের পরে, তার সরকার ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানির বিষয়টি বিবেচনা করছিল।

দিজায়ি যোগ করেছেন যে, তুরস্ক, যা স্থলবেষ্টিত কুর্দিস্তান অঞ্চলের জন্য বহির্বিশ্বে যোগাযোগের স্থলপথ হিসেবে কাজ করে, গ্যাস রপ্তানিতে একটি প্রধান অংশীদার হবে।

অন্যরা, যেমন সুলায়মানিয়াভিত্তিক ইজ্জাত সাবির, যিনি একজন অর্থনীতিবিদ এবং কুর্দিস্তান পার্লামেন্টে অর্থ ও অর্থনৈতিক কমিটির নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনি বলেছেন যে, অঞ্চলটিকে প্রথমে তার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে এবং রপ্তানির দিকে মনোনিবেশ করার আগে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে হবে।

সব কুর্দি রাজনীতিবিদ অবশ্য তুরস্কের মাধ্যমে এই অঞ্চলের গ্যাস রপ্তানির বিষয়ে একমত নন।

[মুতলু সিভিরোগ্লু, ঝিয়ার মোহাম্মদ ও রিকার হুসেন ওয়াশিংটন থেকে এই প্রতিবেদনে সাহায্য করেছেন]

[এই প্রতিবেদনটি ভয়েস অফ আমেরিকার কুর্দিস সার্ভিস থেকে নেওয়া হয়েছে]

XS
SM
MD
LG