অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার নয় বছর


“রানা প্লাজা” দুর্ঘটনার নয় বছর পূর্তিতে মানবাধিকার সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল এবং রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় জীবিত উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নেয়।
“রানা প্লাজা” দুর্ঘটনার নয় বছর পূর্তিতে মানবাধিকার সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল এবং রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় জীবিত উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নেয়।

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প খাতে সর্বকালের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা “রানা প্লাজা” দুর্ঘটনার নয় বছর পূর্তি আজ রবিবার (২৪ এপ্রিল)। এই দিনটি স্মরণে মানবাধিকার সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল এবং রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় জীবিত উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নেয়।

রবিবার সকালে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী শহীদ বেদিতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন নিহতের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এ সময় নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ও গার্মেন্টসের মালিকদের বিচার ও ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। পরে কয়েকটি সংগঠন রানা প্লাজার সামনে নানা দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

অবৈধভাবে নির্মাণ করা রানা প্লাজা ভবনটি ২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিল ধসে পড়ে। এই দুর্ঘনায় ভবনটিতে থাকা পাঁচটি পোশাক কারখানার ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক মারা যান। প্রায় ২ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হন।

রানা প্লাজা মামলায় অগ্রগতি সামান্যই

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণের মাধ্যমে।

২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক এস এম কুদ্দুস জামান অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন এবং বিচার শুরুর আদেশ দেন।

আপিলের শুনানি শেষে ৩১ জানুয়ারি জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেনমামলার প্রধান অভিযুক্ত রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা বর্তমানে কারাগারে এবং বাকি ৪০ জন জামিনে রয়েছেন।

মর্মান্তিক এ ঘটনায় সাভার থানার তৎকালীন এসআই ওয়ালী আশরাফ বাদী হয়ে ভবন নির্মাণে গাফিলতি ও অবহেলার অভিযোগে মালিকসহ অন্যদের অভিযুক্ত করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২০১৫ সালের ১ জুন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেন।

এ মামলায় মোট ৫৯৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাহায্য সংস্থা অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ পরিচালিত এক জরিপ অনুসারে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ আহত শ্রমিকদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে যা গত বছর ছিল ১৪ শতাংশ। চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অ্যাকশনএইড এই তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়, বর্তমান জরিপে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে যারা তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন তারা কোমর, মাথা, হাত-পা ও পিঠে ব্যথাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন।

এদিকে, পূর্ববর্তী বছরগুলোতে পরিচালিত জরিপে দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের শারীরিক অবস্থা পর্যায়ক্রমে উন্নত হলেও এ বছর অবনতি ঘটেছে। ৩৩ শতাংশের অবস্থা প্রায় স্থিতিশীল এবং ১০ দশমিক ৫ শতাংশের অবস্থা সম্পূর্ণ স্থিতিশীল রয়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।

গত বছর যেখানে মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত ছিলেন ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, এ বছর সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশে। ৩১ শতাংশ বলেছেন, তাদের মানসিক অবস্থা প্রায় স্থিতিশীল এবং ২০ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পূর্ণ স্থিতিশীল।

নয় বছর পূর্তি উপলক্ষে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির বেঁচে যাওয়া ২০০ জনের মধ্যে অ্যাকশনএইড জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫৩ শতাংশ এবং ৪৭ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থানে নিযুক্ত রয়েছেন। এদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ বলেছেন, শারীরিক অক্ষমতার কারণে তারা কাজ করতে পারেন না এবং ১০ শতাংশ এখনও মানসিক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। আহত শ্রমিকদের মধ্যে ঘন ঘন কাজ পরিবর্তন করার প্রবণতা দেখা গেছে। যার কারণ হিসেবে শারীরিক সীমাবদ্ধতার জন্য দীর্ঘ সময় একই ধরনের কাজ করার অক্ষমতার বিষয়টি উঠে এসেছে।

জরিপ অনুসারে, ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ তাদের আদি পেশা গার্মেন্টসে ফিরে গেছেন এবং আরও ৮ শতাংশ টেইলারিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছেন। অনেকেই তাদের পেশা বদলে গৃহকর্ম, দিনমজুরি, কৃষিকাজ, গাড়ি চালানোর মতো পেশায় নিযুক্ত হয়েছেন।

জরিপে দেখা গেছে যে বেশির ভাগের আয় করোনা মহামারির প্রভাবে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন যে মহামারি চলাকালে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থ তাদের কাছে ছিল না। ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন তারা নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করতে পারেননি এবং ২২ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন তারা সন্তানের সঠিক যত্ন নিতে পারেননি। ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশকে মহামারি চলাকালে তাদের পরিবারের খাবার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য ঋণ করতে হয়েছে।

জরিপে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া ৩৬ শতাংশের পারিবারিক আয় পাঁচ হাজার টাকার কম এবং ৩৪ শতাংশের ১০ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে পারিবারিক আয় রয়েছে। ৩৫ শতাংশ বলেছেন যে তাদের মাসিক খরচ ১০ হাজার টাকার বেশি এবং ৩০ শতাংশের ১৫ হাজার টাকারও বেশি যার অধিকাংশই খরচ হয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়,বাসা ভাড়া, সন্তানের শিক্ষা এবং চিকিৎসা খাতে।

XS
SM
MD
LG