অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ঈদের নাটক, মধ্যরাত পর্যন্ত ব্যস্ত শুটিং হাউজগুলো


ঈদের একটি নাটকের শুটিংয়ের দৃশ্য।
ঈদের একটি নাটকের শুটিংয়ের দৃশ্য।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার, উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর রোডের ২৭ নম্বর বাসাটির নাম হইচই। এটি একটি শুটিং হাউজ। সিঁড়ি দিয়ে প্রথমতলা পেরিয়ে দ্বিতীয়তলায় পৌঁছাতেই দেখা গেল আলো আঁধারী পরিবেশ। ধোঁয়াটে হয়ে আছে চারিদিক। একটা কক্ষে উঁকি মারতেই দেখা মিললো অভিনেতা মোশাররফ করিমের। ক্যামেরার সামনে তিনি অভিনয় করছেন।

শট শেষ হতেই নির্মাতা সঞ্জয় সমাদ্দার জানালেন, পরজীবী নামের একটি নাটকের শুটিং করছেন। যেখানে মোশাররফ করিম একজন প্রবাসী। দেশে আসার পরই তাঁকে পাগল বা মাদকাসক্ত প্রমাণ করে, জোর পূর্বক একটি রিহ্যাবে নিয়ে আসা হয়েছে। এখানে তাঁকে মারধর করা হয়। একটু পর আবার নতুন শট। দেখা গেল মোশাররফ করিমকে ইঞ্জেকশকশন দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। মোশাররফ করিম ইঞ্জকেশন না নিয়ে সেটা ছুঁড়ে ফেলেন। এরপর, তার ওপর শুরু হয় নির্মম নির্যাতন।

শট শেষ করে বেরিয়ে এলেন মোশাররফ করিম। ঈদকে উপলক্ষ করে তিনি রমজান মাসে টানা শুটিং করছেন। রমজান শুরু হওয়ার আগে থেকেই শুটিং শুরু করেছেন।তখন একটু বিরতি নিতে পেরেছিলেন। এখন কোনো বিরতি নেই। নাটকের সঠিক সংখ্যাও তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারলেন না।

উত্তরা হইচই-এর মতো, লাবণী, দোলনচাঁপা, আনন্দবাড়ি,স্বপ্নীল, আপন ঘর, রঙঢঙ, এনআর মিডিয়ার মতো শুটিং হাউজ রয়েছে ১০ থেকে ১১ টি। প্রত্যেকটিতেই সকাল থেকে শুটিং শুরু হয়ে, চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। ঈদের আগে শুটিং হাউজগুলোতে কোন বিরতি নেই। মোশাররফ করিম জানালেন, তিনি সকালের শিফটে সোহেল নামের একজন নির্মাতার কাজ করেছেন। সেখানে তাঁর বিপরীতে অভিনেত্রী ছিলেন তারিন। এখন সঞ্জয় সমাদ্দারের যে নাটকটিতে অভিনয় করছেন , তাতে তার বিপরীতে আছেন বিদ্যা সিনহা মিম। এছাড়াও,অর্ণব অন্তু, মাসুম রেজওয়ান, আশরাফুল আলম, রিসা চৌধুরী অভিনয় করছেন এই সেটে।

মোশাররফ করিম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ঈদকে কেন্দ্র করে একদমই সময় পাওয়া যায় না। সকালে বেরিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হয়, বাড়ি ফিরতে ফিরতে মধ্যরাত হয়ে যায়। পরের দিন আবার শুটিং। যদিও আমি চিত্রনাট্য দেখেই অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু নাটকের সঙ্গে বাণিজ্যটা চলেই আসে। আমি চাই নতুন কিছু করতে, নতুন চরিত্র, নতুন ধরনের অভিনয়। সবশেষে এটা সম্ভব হয়ে ওঠে কি না বলতে পারি না। তবে, এই নাটকে অভিনয় করে ভালো লাগছে এ কারণে যে, এখানে অভিনয় করার জায়গটা রয়েছে।"

সঞ্জয় সমাদ্দারও, এবারের ঈদে বেশ কয়েকটি নাটক নির্মাণ করেছেন বলে জানালেন। মোশাররম করিম আলাপ শেষ করতেই ফের লাইট ক্যামেরা, রোল শুরু হয়ে গেল। সবাই ব্যস্ত হয়ে গেল নতুন শট নেওয়ার জন্য।

শুটিং হাউজগুলো ঘুরে জানা যায়, প্রায় প্রতিটি ইউনিটে প্রোডাকশন বয় থেকে শুরু করে অভিনয়শিল্পী, সব মিলিয়ে ৪০ জন বা তারও বেশি মানুষ যুক্ত থাকে। উত্তরার আরেকটি শুটিং হাউজ লাবণী ৪। এটি উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বরে অবস্থিত। ঢুকতেই অ্যাকশন ক্যামেরা রোল শোনা যাচ্ছিল। মনিটরের সামনে বসে রয়েছেন নির্মাতা শিহাব শাহীন। শট শেষ হতেই ভয়েস অফ আমেরিকার সঙ্গে কথা বলেন শিহাব শাহীন। তিনি জানালেন, “এবারের ঈদে তিনি অন্তত ১০টি নাটক বানাচ্ছেন। এগুলো বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচার হবে”। বললেন, "এখন কোলাহলের বাইরে নামের একটি নাটকের শুটিং করছি। এই নাটকের গল্প অনেকদিন ধরে মাথায় নিয়ে ঘুরছিলাম। আজ কাজ শুরু করলাম। এর মূখ্য চরিত্রে এই সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা মুশফিক আর ফারহানকে নিয়েছি। মনে হলো সে এটার জন্য পারফেক্ট।"

এই নাটকে মুশফিক আর ফারহান ছাড়াও সোমু চৌধুরী, মিলি বাশার, নাদিয়া আফরিন মিম, আনিকাসহ আরো অনেকেই অভিনয় করছেন বলে জানালেন শিহাব শাহীন।

মুশফিক আর ফারহান সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নাটকে বেশ জনপ্রিয়। তার নাটক মানেই মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ। কিন্তু তাতে তিনি সন্তুষ্ট নন বলেই জানালেন। ভয়েস অফ আমেরিকাকে বললেন, "আসলে মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ দিয়ে কী হবে। আমি অভিনয় করতে চাই। অভিনয়ের সুযোগ আছে এমন গল্পে কাজ করতে চাই। ঈদের আগে তুমুল ব্যস্ত। এ শুটিং হাউজ ও শুটিং হাউজ দৌঁড়াতে হচ্ছে, সকালে বের হচ্ছি বাসায় ফরছি মধ্যরাতে। আবার সকালে উঠে চলে আসছি। পরিশ্রম করতে হচ্ছে। কিন্তু এবার একটু দেখে শুনেই কাজ করছি। শিহাব শাহীন ভাইয়ের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করছি। এটি ভালো একটি কাজ হতে যাচ্ছে।"

নাটকের আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি নিজেও নাটক নির্মাণ করেন। কিন্তু, এবারের ঈদে তিনি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে শিল্প নির্দেশক হিসেবেই কাজ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন। বেশ কয়েকটি নাটকের শিল্প নির্দেশনা দিয়েছেন।

করোনা পরবর্তী সময়ে, শুটিং হাউজগুলোতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে এতেই তিনি আনন্দিত। বললেন, “আসলে নাটক ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ওটিটি।, যার ফলে কাজ বেড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শুটিং হাউজগুলোতে মানুষের পদচারণা ছিল না। এখন কোলহল মুখর পরিবেশে কাজ হচ্ছে, ভালো লাগছে।"

লাবণী ৪ শুটিং হাউজের দুইটি স্তর। প্রথম দুইতলা একটি দলকে ভাড়া দেওয়া হয়। পরের দুই তলা আরেকটি দলকে ভাড়া দেওয়া হয়। ওপরের ইউনিটে গিয়ে দেখা যায় শুটিং এর সাময়িক বিরতি চলছে। ক্যামেরা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন মেহেদি রনি। জানালেন, “সকাল থেকে টানা কাজ করলাম। এখন একটু বিরতি চলছে। ঈদকে কেন্দ্র করে আমাদের যদিও ব্যস্ততা বেড়ে যায়।তবে,এবার তিনি মাত্র ৪ টি নাটকের কাজ করলেন।

ঈদকে কেন্দ্র করে নাটকের বাজার চাঙ্গা হওয়ায়, পার্শ্ব শিল্পীরাও আনন্দিত। মোশাররফ করিমের সঙ্গে হইচই শুটিং হাউজে সিকিউরিটি গার্ড চরিত্রে অভিনয় করছেন খায়রুল আলম টিপু। টিপু জানালেন, “দীর্ঘদিন হাতে কাজ ছিল না সে অর্থে। এখন ব্যস্ততা বেড়েছে।”

তিনি এবারের ঈদে, অন্তত ১৫ টি নাটকে বাবা, চাচা, এলাকার চেয়ারম্যান, দুষ্ট লোক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। প্রতিদিন সকালে বের হন। বাসায় ফেরেন মধ্যরাতে।

XS
SM
MD
LG