অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে প্রতিবেদনের সময় খবর খুঁজতে নাকি নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দেবেন তা নিয়ে দ্বিধায় সাংবাদিকেরা


ইউক্রেনীয় সাংবাদিক আন্দ্রি সাপ্লিয়েনকো রাজধানী কিয়েভ থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ইউক্রেনীয় ও রুশ বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের প্রতিবেদন করছেন। ২৩ মার্চ ২০২২। (সৌজন্য ছবি)
ইউক্রেনীয় সাংবাদিক আন্দ্রি সাপ্লিয়েনকো রাজধানী কিয়েভ থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ইউক্রেনীয় ও রুশ বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের প্রতিবেদন করছেন। ২৩ মার্চ ২০২২। (সৌজন্য ছবি)

ইউক্রেনে রাশিয়ার নৃশংসতা তৃতীয় মাসে পদার্পণ করছে এবং সংঘাত বিষয়ে প্রতিবেদনকারী সাংবাদিকেরা আরও সতর্ক অবস্থান নিচ্ছেন।

ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট বা আইপিআইসহ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মতে, ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বেশ কিছু বিদেশি এবং ইউক্রেনীয় সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে এবং আরও কয়েক ডজন আহত হয়েছেন—হয় গোলাগুলির মাঝখানে পড়ে নয়তো খবর সংগ্রহের সময় গুলি খেয়ে।

ইউক্রেনের সাংবাদিকদের জাতীয় সমিতি ২০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হতে পারে বলে তথ্য দিয়েছে। এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত অনেকের মৃত্যুর কারণ বা পরিস্থিতি নির্ধারণ করা হয়নি।

যারা অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন, তাদের মধ্যে একজন আন্দ্রি সাপ্লিয়েনকো। তারা এই বিপজ্জনক সংঘাতের মধ্যে তাদের কর্মপদ্ধতি পুনর্মূল্যায়ন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

সাপ্লিয়েনকো ইউক্রেনের ওয়ান প্লাস ওয়ান নিউজ চ্যানেলের একজন সংবাদদাতা। ২৫ মার্চ যখন তিনি উত্তরাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভের কাছে একটি মানবিক করিডোর সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন, তখন তাকে একটি শ্রাপনেল আঘাত করেছিল৷

কিয়েভ থেকে ভয়েস অফ আমেরিকার সঙ্গে কথা বলার সময়, সাপ্লিয়েনকো বলেছেন যে, তিনি “আরও সতর্ক হয়ে উঠেছেন, কারণ একজন মৃত সাংবাদিকের কোনো মূল্য নেই”।

আহতদের জন্য পরামর্শ

সাপ্লিয়েনকো বলেছেন যে, তার ক্ষত সম্পূর্ণভাবে নিরাময়ের জন্য তিনি হাসপাতালে বেশিক্ষণ থাকতেন না।

“আমি রুশ সেনাদের ফ্লাইটের ভিডিও করার জন্য রাশিয়ার সীমান্তে ছুটে যাই। আমি চেরনিহিভ শহরে ফিরে আসি, যেখানে আমি আহত হয়েছিলাম। আমি বুচা গিয়েছিলাম মৃতদের সন্ধানের চিত্রগ্রহণ করতে, জেডভিজিভকাতে যেখানে রুশ সেনাদের একটি বড় শিবির অবস্থিত, সেখানে গিয়েছিলাম। এত কিছুর পরে, আমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে শুরু করে এবং আবার হাসপাতালে যেতে হয়েছিল”, তিনি বলেন।

এবং এর কারণে, রাশিয়ান হামলায় আহত সহকর্মী সাংবাদিকদের জন্য তার একটি উপদেশ রয়েছে: “আপনার জীবন আপনার প্রতিবেদনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ”।

নতুন দায়িত্ব

রিপোর্টিংয়ের প্রকৃতিও পাল্টেছে।

“শুরুতে, আমাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন রণক্ষেত্রে কী ঘটছে এবং রুশ বাহিনীর গতিবিধি সম্পর্কে প্রতিবেদন করছিলাম। কিন্তু রাশিয়া যত বেশি আক্রমণ চালিয়েছে, আমরা ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে রুশ সেনাদের সহিংসতার বিষয়ে আরও বেশি মনোযোগী হয়েছি”, বলেছেন, ডিমা রেপলিয়ানচুক, স্বাধীন সাংবাদিকদের একটি দল স্লিডস্টভোর প্রতিবেদক।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ওয়েবসাইট, অন্য স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সঙ্গে মিলে, রাজধানী কিয়েভের কাছে বুচা শহরের মতো জায়গাগুলো থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করছে, যেখানে রাশিয়ার বাহিনী এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দখল করে ছিল।

হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইউক্রেনে সংঘটিত কথিত যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করেছে। এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো অধিকার সংগঠনগুলো কথিত অপরাধের প্রমাণ সংগ্রহের জন্য কাজ করছে।

ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের মতে, রুশ সেনা প্রত্যাহারের পর বুচায় অন্তত ৪০০ মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

ক্রমবর্ধমান সেন্সরশিপ

রাশিয়ায় কর্তৃপক্ষ সংবাদ সংগ্রহ এবং প্রচারের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চেয়েছে, কীভাবে যুদ্ধের প্রতিবেদন করতে হবে সে সম্পর্কে স্থানীয় গণমাধ্যমের জন্য আইন ও নির্দেশনা জারি করেছে এবং কয়েকটি অবশিষ্ট স্বাধীন গনমাধ্যমকে বন্ধ করতে বা অনেক সাংবাদিককে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে।

রাশিয়ান অনুসন্ধানী সংবাদ সাইট এজেন্টস্টভোর ধারণা, ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে ১৫০ জনেরও বেশি সাংবাদিক রাশিয়া ছেড়েছেন। সরকার গত সপ্তাহে দেশে প্রবেশকারী বিদেশি সাংবাদিকদের ওপর কঠোর ভিসা বিধি আরোপ করেছে।

রাশিয়ার মিডিয়া নিয়ন্ত্রক, রসকমনাজোর ভয়েস অফ আমেরিকার রাশিয়ান সার্ভিস, বিবিসি ও অন্য অনেক সংবাদ সংস্থার সম্প্রচার বন্ধ করেছে।

মার্চ মাসে মস্কো একটি আইন পাশ করেছে, যাতে বলা হয়েছে, সামরিক বাহিনী সম্পর্কে মিথ্যা খবর ছড়ানোর জন্য ১৫ বছরের কারাদণ্ড হবে। কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে সাংবাদিক ও কর্মীদের বিরুদ্ধে এই আইনে মামলা করেছে।

[এই প্রতিবেদনের জন্য কিছু তথ্য রয়টার্স থেকে নেওয়া হয়েছে]

XS
SM
MD
LG