তালিবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার প্রেক্ষিতে “নিকৃষ্টতম” ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনকারী দেশের তালিকায় আফগানিস্তানকে যোগ করা উচিত বলে যুক্তরাষ্ট্রের উপদেষ্টা পর্ষদ পররাষ্ট্র দপ্তরের কাছে সুপারিশ করছে।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে, আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন বলেছে যে, তালিবান আফগানিস্তানে সুন্নি ইসলামকে কঠোরভাবে পুনর্বহাল করার পর থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা “তাদের বিশ্বাস বা বিশ্বাসের কারণে হয়রানি, আটক এবং এমনকি হত্যার শিকার হয়েছেন”। কমিশন তালিবানের প্রতিপক্ষ ইসলামিক স্টেটের সহযোগীদের দ্বারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কথাও উল্লেখ করেছে।
আফগানিস্তান ১৫টি দেশের মধ্যে একটি, যে দেশগুলো সম্পর্কে কমিশন বলেছে যে, পররাষ্ট্র দপ্তরের “বিশেষ উদ্বেগের দেশের” তালিকায় থাকা উচিত। কমিশন তার প্রতিবেদনের সারাংশে, এই সরকারগুলোকে “ধর্মীয় স্বাধীনতার পদ্ধতিগত, চলমান ও গুরুতর লঙ্ঘন” সহ্য করা বা জড়িত থাকায় “নিকৃষ্টতম” অবস্থানে থাকার জন্য সংজ্ঞায়িত করেছে।
আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের অধীনে ১৯৯৮ সালে গঠিত কমিশনটি প্রশাসন ও কংগ্রেসের কাছে আইনি বাধ্যবাধকতাবিহীন নীতি সুপারিশ করে। পররাষ্ট্র দপ্তর অতীতে তাদের কিছু সুপারিশ গ্রহণ করলেও সবগুলো নীতি গ্রহণ করেনি।
নতুন প্রতিবেদনে, কমিশন চীন, ইরিত্রিয়া, ইরান, মিয়ানমার, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান, রাশিয়া, সৌদি আরব, তাজিকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানসহ পররাষ্ট্র দপ্তরের তালিকাভুক্ত বর্তমানে ১০টি দেশকে বহাল রাখার সুপারিশ করেছে।
কমিশন আফগানিস্তান ছাড়াও আরও চারটি দেশকে যোগ করার সুপারিশ করেছে। সে দেশগুলো হলো ভারত, নাইজেরিয়া, সিরিয়া ও ভিয়েতনাম। কমিশন গত বছর নাইজেরিয়াকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর অনেক সংখ্যালঘু ইহুদি, হিন্দু ও শিখ বাসিন্দা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অনেক সদস্য, যেমন আহমদিয়া মুসলিম, বাহাই ও খ্রিস্টান ধর্মান্তরিতরা নিপীড়নের ভয়ে গোপনে উপাসনা করছেন।
কিছু শিখ এখনো কাবুলে বাস করছেন এবং উপাসনা করেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তালিবান প্রতিনিধিরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি শিখ গুরুদ্বার বা উপাসনালয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, অনেক শিখ ও হিন্দু “নিরাপত্তার অভাবে” ভারতে পালিয়ে গেছেন।
কমিশন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি প্রতিবেদনও উদ্ধৃত করেছে যে, তালিবানরা শিয়া মুসলিম সংখ্যালঘু জাতিগত হাজারাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে এবং কমিশন ২০২১ সালে হাজারা পুরুষদের ওপর তালিবান গণহত্যার ওপর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি করে।
এই বছরের প্রতিবেদনে ২০০১ সালের পর যখন তালিবান প্রথম ক্ষমতা গ্রহণ করে, প্রথমবারের মতো কমিশন আফগানিস্তানকে একটি বিশেষ উদ্বেগের দেশ হিসেবে মনোনীত করার সুপারিশ করেছে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
কমিশন ধর্মীয় স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য দায়ী বলে বিবেচিত তালিবান কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে এবং যারা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে তাদের উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে অগ্রাধিকার দেওয়ারও সুপারিশ করেছে।