২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সৌদি এজেন্টদের মাধ্যমে সৌদি সাংবাদিক ও কলামিস্ট জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড তুরস্ক এবং সৌদি আরবের মধ্যে ইতোমধ্যেই সংঘাতময় ও নড়বড়ে সম্পর্ককে পুরোপুরি পতনের মুখে ঠেলে দেয়।
ওই ঘটনার সাড়ে তিন বছর পরে দেশ দুটি সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান সৌদি আরবে পাঁচ বছরের মধ্যে তার প্রথম সফরে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে আলিঙ্গন করেন এবং একটি রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ ও সরাসরি আলোচনার আগে বাদশাহ সালমানের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী আরবি কফি পান করেন। যা শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) ভোর পর্যন্ত চলে।
দুটি সুন্নি মুসলিম শক্তিধর দেশের মধ্যকার সম্পর্কের উত্থান–পতনের বিভিন্ন দিকগুলো হলো:
তুরস্কের কূটনৈতিক অপরিহার্যতার পেছনে যা রয়েছে
তুরস্কের এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পেছনে রয়েছে দুই দশকের মধ্যে দেশটির সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট। মিত্র হিসেবে ধনী উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলো বিনিয়োগের মাধ্যমে সহায়তা করতে পারে। মিসর ও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পদক্ষেপও নিয়েছে তুরস্ক।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সম্পর্ক সংশোধন করার পরে আবুধাবি তুরস্কে বিনিয়োগ সহায়তা হিসেবে ১০ বিলিয়ন ডলার তহবিল ঘোষণা করেছে এবং অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে সহায়তার জন্য অন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।
সৌদি আরবের লাভ
রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে সৌদি আরব আঞ্চলিক জোট বিস্তৃত করতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বছরেরও বেশি সময় আগে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যুবরাজ এখনো তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেননি। বাইডেনের ডেমোক্রেটিক পার্টির বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা তাকে সৌদি আরবের প্রতি আরও কঠোর হওয়ার জন্য খোলাখুলিভাবে আহ্বান জানিয়েছে। তারা সৌদিকে খারাপ কৌশলগত সহযোগী দেশ বলে অভিহিত করেছে, কারণ দেশটি রাশিয়ার সঙ্গে ওপেক-নেতৃত্বাধীন চুক্তি অব্যহত রেখেছে। সমালোচকেরা বলছেন, এ কারণে ইউক্রেনে যুদ্ধের সময়ে তেল সরবরাহের সংকট আরও খারাপ হয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি মুসলিম ব্রাদারহুড ও ইসলামপন্থী বিরোধী দলগুলোর প্রতি সমর্থনের কারণে দীর্ঘদিন ধরে কাতারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটিয়েছে সৌদি আরব।
তুরস্ক যেভাবে যুবরাজকে চাপ দিচ্ছিল
তুর্কি কর্তৃপক্ষ যুবরাজের প্রতি বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ ও সন্দেহে হাওয়া দিয়েছে। তুরস্ক পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ভয়ঙ্কর এই হত্যাকাণ্ডের অডিও শেয়ার করে। এর থেকে জানা যায়, সৌদি কনস্যুলেটে যেখানে খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছিল সেখানে আড়ি পাতা হয়েছিল।
যুবরাজ মোহাম্মদের নাম না নিলেও এরদোগান বলেন, খাশোগিকে হত্যায় সৌদি সরকারের “উচ্চ পর্যায়ের” নির্দেশ ছিল। খাশোগি তার তুর্কি বাগদত্তাকে বিয়ে করার অনুমতির জন্য কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ২০১৮ সালের অক্টোবরে কনস্যুলেটে প্রবেশ করেছিলেন। তার বাগদত্তা বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। খাশোগি আর ফিরে আসেননি এবং তার মৃতদেহও পাওয়া যায়নি।
বিস্তৃত তাৎপর্য
এই অঞ্চলজুড়ে বছরের পর বছর ধরে চলা অস্থিরতার সূত্র ধরে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রগুলোর কারণে মুসলিম ব্রাদারহুড দলটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অন্যদিকে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইরানের কারণে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি পরমাণু চুক্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যাতে মূল নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হতে পারে।
তুরস্ক ও ইরান, প্রতিদ্বন্দ্বী না হলেও, সিরিয়া ও ইরাকে ক্ষমতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। যদিও এক সীমান্তে বিভাজিত রাষ্ট্র দুটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তুরস্ককে উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করা ইরানের ওপর চাপ বাড়াতে পারে।