শনিবার ওডেসা বিমানবন্দরে রাশিয়ার একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিমানবন্দরের রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি কার্যত অকেজো হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী সিএনএন নিউজকে বলেছেন, তিনি দক্ষিণ শহরের উপর অন্তত একটি যুদ্ধ বিমান উড়ে যেতে দেখেছেন; শহর জুড়ে বিমান হামলার সাইরেন বাজানোর পরপরই বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়।
এদিকে, রুশ বাহিনী শনিবার ইউক্রেনের পূর্ব ডনবাস অঞ্চলে ব্যাপক গোলাগুলি চালালেও তাদের লক্ষ্যবস্তু, তিনটি এলাকা দখল করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ তার প্রতিদিনের আপডেটে বলেছে, রাশিয়ার বাহিনীর লক্ষ্যবস্তু ওই এলাকাগুলি ছিল ডোনেস্কের লাইমান, সিভিয়েরোডোনেটস্ক এবং লুহানস্কের পোপাসনা।
আপডেটে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা "সফল না হলেও - লড়াই অব্যাহত রয়েছে।"
আঞ্চলিক পুলিশ শনিবার বলেছে, রুশ বাহিনী গত ২৪ ঘন্টার মধ্যে ডোনেটস্ক ওব্লাস্টে ১২টি জনবসতিতে গোলাবর্ষণ করেছে। কিইভ ইন্ডেপেন্ডেন্ট নামের সংবাদপত্র অনুসারে, এতে অন্তত ৩৬টি বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যার মধ্যে একটি স্কুল এবং একটি হাসপাতালও রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এক শিশুসহ অন্তত চারজন বেসামরিক লোক হামলায় নিহত হয়েছে, এছাড়া শিশুসহ আহত হয়েছে আরও আটজন বেসামরিক লোক।
অন্যত্র, ইউক্রেনীয় পুলিশ বলেছে, তারা কিয়েভের উত্তরে বুচা জেলায় তিনজন বেসামরিক পুরুষের মৃতদেহ পেয়েছে। তারা জানিয়েছে, মৃতদেহগুলি একটি গর্তে রাখা ছিল এবং নিহতদের হাত বাঁধা ছিল, তাদের চোখ ঢেকে রাখা হয়েছিল এবং দুজনকে শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে।
কিয়েভের আঞ্চলিক পুলিশ প্রধান আন্দ্রি নেবিতোভ এক বিবৃতিতে বলেছেন, "মৃতদেহগুলির উপর নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে, পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলির চিহ্নও রয়েছে।ভুক্তভোগীরা দীর্ঘ সময় ধরে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল; তাদের হাত-পায়ে বুলেটের ক্ষত পাওয়া গেছে। অবশেষে, প্রত্যেক পুরুষের কানে গুলি করা হয়েছিল।”
কিইভ জানাচ্ছে বুচা বা এর আশেপাশে ১,০০০ টিরও বেশি মৃতদেহ পাওয়া গেছে। বুচায় তারা ঐ অঞ্চল দখলকারি রুশ সৈন্যদের দ্বারা পদ্ধতিগত অপব্যবহারের অভিযোগ করেছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্ক অঞ্চলের গভর্নর বলেছেন, শনিবার ইউক্রেনের দিক থেকে তার সীমান্তের কাছে একটি তল্লাশি চৌকি লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি গোলা ছোড়া হয়েছে। তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা এক ভিডিওতে গভর্নর রোমান স্টারোভয়েট বলেছেন, এতে কোনও হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, তারা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেদনটি যাচাই করতে পারেনি এবং ইউক্রেনের পক্ষ থেকেও তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইউক্রেনীয় আজভ রেজিমেন্টের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএন নিউজ জানিয়েছে, অবরুদ্ধ শহর মারিউপোল, যেখানে ইউক্রেনের সৈন্যরা একটি প্ল্যান্টে আটকা পড়ে আছে, সেখান থেকে শনিবার নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
রাশিয়ার তাস বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, সেখান থেকে ১৪ বছরের কম বয়সী ছয়টি শিশুসহ ২৫ জন বেসামরিক নাগরিকের একটি দল বেরিয়ে এসেছে।
ক্যাপ্টেন স্ব্যাটোস্লাভ পালামার নামের ওই কর্মকর্তা বলেন, পাঁচ ঘণ্টা দেরিতে স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
পালমার বলেন, "যাদের আমরা ধ্বংসস্তূপের নীচে থেকে উদ্ধার করতে পেরেছি, তাদের মধ্যে ২০ জন বেসামরিক নাগরিককে আমরা পূর্বে সম্মত নির্ধারিত স্থানে নিয়ে এসেছি। এরা নারী ও শিশু। আমরা আশা করি এরা ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল জাপোরিঝিয়ায় সম্ভাব্য গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।
সিএনএন জানিয়েছে, শুক্রবার তোলা স্যাটেলাইট চিত্রগুলি থেকে দেখা যায়, বিস্তৃত ইস্পাত কারখানার প্রায় প্রতিটি ভবন কামান, জাহাজ এবং বিমান হামলার তীব্র গোলাগুলিতে ধ্বংস হয়ে গেছে।
পালামার বলেন, "এখানে এমন কিছু সেলার এবং বাঙ্কার রয়েছে, যেগুলিতে আমরা পৌঁছতে পারি না। কারণ সেগুলি ধ্বংসস্তূপের নীচে রয়েছে। ওখানকার মানুষগুলো বেঁচে আছে কি না, আমরা জানি না। সেখানে চার মাস থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশু আছে। কিন্তু তারা এমন জায়গায় আটকে আছে, যেখানে আপনি যেতে পারবেন না।"
[এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এবং রয়টার্স থেকে নেয়া হয়েছে ] ।