অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আড়াই লাখ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন


ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এনইসি চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এনইসি চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

জাতীয় অর্থনীতি পরিষদ (এনইসি) ২০২৩ অর্থবছরে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ দশমিক ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।

মঙ্গলবার (১৭ মে) পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, অপব্যবহার রোধ করে সরকারি তহবিলের সর্বোত্তম ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেয়ার পাশাপাশি পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এডিপিতে নতুন প্রায় ১ হাজার ৪৩৫টি প্রকল্প রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১ হাজার ২৪৪টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ১০৬টি প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রকল্প এবং প্রায় ৮৫টি প্রকল্প স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও কর্পোরেশনগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হবে।

এনইসি চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা নগর এলাকার এনইসি সম্মেলন কক্ষ এবং বাংলাদেশ সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষ থেকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সচিবরা বৈঠকে অংশ নেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছরের মূল এডিপির ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ দশমিক ৯ কোটি টাকার মধ্যে এক লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ দশমিক ৯ কোটি টাকা স্থানীয় উৎস থেকে আসবে এবং বাকি ৯৩ হাজার কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে দেওয়া হবে।

এ ছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং কর্পোরেশনগুলোর বিপরীতে ৯ হাজার ৯৩৭ দশমিক ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ বিবেচনা করে, আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপির সামগ্রিক বরাদ্দ ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩ দশমিক ২৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

চলমান ২০২১-২২ অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ দশমিক ১৪ কোটি টাকা; যা পরে সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

আগামী অর্থবছরের নতুন এডিপি চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে প্রায় ৯ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি এবং চলতি অর্থবছরের আরএডিপি থেকে ১৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।

ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সচিবেরা উপস্থিত ছিলেন।

১৫টি সেক্টরের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৯৫ দশমিক ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৯ হাজার ৪১২ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা, শিক্ষা খাতে ২৯ হাজার ৮১ দশমিক ৩৮ কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্য খাতে ১৯ দশমিক ৮৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি প্রায় ১৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকার সর্বোচ্চ নতুন এডিপি বরাদ্দ পেয়েছে। তারপর চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রায় ৮ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা, প্রায় ৬ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকায় মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, প্রায় ৬ হাজার ১৯ কোটি টাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়), প্রায় ৫ হাজার ৮০৯ কোটি টাকায় পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প, কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপারনেস (ডব্লিইবি-জিওবি) প্রকল্প প্রায় ৪ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা, প্রায় ৩ হাজার ৮৫১ কোটি টাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প, প্রায় ৩ হাজার ৭০৩ কোটি টাকায় ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প, প্রায় ৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকা দিয়ে ডিপিডিসি এলাকায় পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ এবং প্রায় ২ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা দিয়ে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড প্রকল্প ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬)।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের নির্দেশ দিয়েছেন, সরকারি তহবিলের সব স্তরে অপব্যবহার রোধ করতে।

তিনি বলেন, সভায় জানানো হয় যে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দেশের অন্য অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ আরও বাড়বে এবং অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসবে।

তিনি উল্লেখ করেন, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পায়রা বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের সুবিধা হবে।

এ ছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কাজ সময়সূচি অনুযায়ী চলছে বলেও জানান মন্ত্রী।

বৈশ্বিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী অর্থবছরে সরকারের সম্ভাব্য পদক্ষেপ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মান্নান বলেন, সরকার অবশ্যই অপব্যবহার বন্ধ করে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যয় করার চেষ্টা করবে।

তিনি বলেন, “আমরা সতর্ক আছি, তবে আমরা কিছুতেই ভয় পাই না”।

তিনি বলেন, “আগামী দিনে বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণ প্রবাহে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না”।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা কমানো হলেও সার্বিক এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন-আল-রশিদ বলেছেন, মহামারি পরিস্থিতি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মক্ষমতা বিবেচনা করে, নতুন এডিপিতে এর বরাদ্দ ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

XS
SM
MD
LG