অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে ভেজাল প্যারাসিটামল খেয়ে মৃত্যু: ১০৪ শিশুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ হাইকোর্টের


বাংলাদেশে ভেজাল প্যারাসিটামল খেয়ে প্রাণ হারানো ১০৪ শিশুর প্রত্যেকের পরিবারকে, ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ওই অর্থ আদায় করে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে এই নির্দেশ পালন করতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২ জুন) একটি রিট শুনানির পর, বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ৈ, অ্যাডভোকেট একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মণ্ডল ও অ্যাডভোকেট শাহিন আরা লায়লী। প্রতিপক্ষে শুনানিতে ছিলেন, অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান।

১৯৮২ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত ভেজাল প্যারাসিটাল সিরাপ সেবন করে ৭৬ শিশু মারা যায়। এরপর ২০০৯ সালে রীড ফার্মার প্যারাসিটামল খেয়ে মারা যায় ২৮ শিশু। ভেজাল ওষুধ খেয়ে শিশুদের মৃত্যুর পর, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে জনস্বার্থে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) ২০১০ সালে হাইকোর্টে রিট করে। বৃহস্পতিবার (২ জুন) ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি করে রায় দেন হাইকোর্ট।

রায়ের পর মনজিল মোরসেদ জানান, “এ ঘটনায় ২০১০ সালে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন এইচআরপিবি জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট করে। রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেছিল। এরপর, রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করে।”

অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, “রায়ে ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে মৃত্যুর ঘটনায় ১০৪ শিশুর, প্রত্যেকের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ ছাড়া, ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয়তা অবৈধ ঘোষণা, ভেজাল ওষুধের অপরাধের ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষমতা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি, আদালত বলেছে, ভেজাল ওষুধের কারণে শিশু মৃত্যুর দায় ওষুধ প্রশাসন অধিপ্তর এড়াতে পারে না।”

২০০৯ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত, রীড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে সারাদেশে ২৮ শিশু মারা যায়। এ ঘটনায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম, ঢাকার ড্রাগ আদালতে কোম্পানিটির মালিকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। বিচার শেষে, এ মামলায় সবাইকে খালাস দেন আদালত।

এদিকে, ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কিডনি অকেজো হয়ে ৭৬ শিশুর মৃত্যু হয়। বিষয়টি সে সময় ব্যাপক আলোড়ন তোলে। শিশু মৃত্যুর ঘটনায় প্যারাসিটামল সিরাপ নিয়ে অভিযোগ করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা জানান, ভেজাল প্যারাসিটামল খেয়ে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পরে, তদন্ত ও ল্যাব পরীক্ষায় ধরা পড়ে, পলিক্যাম ল্যাবরেটরিজসহ পাঁচ কোম্পানির তৈরি প্যারাসিটামল সিরাপে বিষাক্ত পদার্থ ডাই-ইথিলিন গ্লাইকলের উপস্থিতি ছিল।

এরপর, ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে পলিক্যামের পরিচালক আবদুর রবসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। আসামিরা হাইকোর্টে গেলে, মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। দীর্ঘ ২৬ বছর পর আবদুর রবকে এক বছরের সাজা দেন আদালত।

XS
SM
MD
LG