অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কুড়িগ্রামে আট দিন ধরে বন্যা, ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী


কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি

গত কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে; জিঞ্জিরাম, কালো ও ধরণী নদীর অববাহিকায়, বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে আট দিন ধরে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই তিন নদীতে অস্বাভাবিক পানিবৃদ্ধিতে কুড়িগ্রামের রৌমারী ও চর রাজীবপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ এখন বন্যা কবলিত।

কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে ঢাকা সড়কের পূর্ব অংশে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করলেও, পশ্চিম অংশে ব্রহ্মপুত্র নদ, হলহলিয়া ও সোনাভরি নদী বন্যা সীমার নিচে রয়েছে।

রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের খেয়ারচর গ্রামের দিনমজুর নজির হোসেন বলেন, “পানিত বেরবের পাই না। বেরালেই খরচ। কাজ কাম নাই। আয় উন্নতি বন্ধ। খুব সমস্যাত আছি।”

বন্যার পানি ভেঙে বাতেন মিয়া ডিম নিয়ে গিয়েছিলেন খেয়ারচর হাটে বিক্রি করতে। বৃষ্টির কারণে হাটে লোকজন নাই। বিকাল ৪টার মধ্যে হাট বন্ধ হয়ে গেছে। তাই অবিক্রিত ডিম নিয়ে বাড়ি ফিরছেন তিনি।

বকবান্ধা ব্যাপারী পাড়া গ্রামের ৩৮ বছরের গৃহিনী নাজমা বেগম বলেন, “বন্যায় বাড়িঘরে পানি ওঠে নাই। কিন্তু সব সবজি ডুবে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন রান্নার সবজি কেনা লাগবে। আমরা গরীব মানুষ। খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার স্বামী কাজেও যেতে পারছে না।”

খেয়ারচর রাবার ড্যাম এলাকার কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, “জমিতে খড় পরে আছে। ঘাসও পানিতে ডুবে রইছে। আমরা গরু-ছাগল-ভেড়া নিয়া বিপদে আছি।”

খেয়ারচর ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার নজরুল ইসলাম বলেন, “আমার ওয়ার্ডের ছয় শতাধিক বাড়িঘরে পানি উঠেছে। লোকজন কোথাও বের হতে পারছে না। এখন পর্যন্ত পানিবন্দী লোকজন কোনো সরকারি সহযোগিতা পায়নি।”

রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল্লাহ জানান, “জনপ্রতিনিধিদের বন্যাকবলিত এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে দুর্গতদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। রৌমারী ল্যান্ড পোর্ট জলমগ্ন হওয়ায়, এই পোর্টের সঙ্গে জড়িত ৫ থেকে ৬ হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছে। তাদের বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে, যাতে তারা সহযোগিতা পান।”

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল জানান, “ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে, জিঞ্জিরাম, কালো ও ধরণী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আকষ্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে রৌমারী ও চর রাজীবপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ৪৫টি গ্রামের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যায় ৩০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে গেছে। ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।”

এছাড়াও ২৮৩ হেক্টর ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

তিনি জানান, “এই পরিস্থিতিতে উপজেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ পাওয়া তিন লাখ টাকা দিয়ে শুকনো খাবার হিসেবে চিড়া, মুড়ি, চিনি, লবণ ও মোমবাতী কেনা হচ্ছে। দ্রুতই বন্যাকবলিতদের মাঝে বিতরণ করা হবে।”

XS
SM
MD
LG