প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে জনগণের কাছে পূর্ণ সহযোগিতা চেয়েছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চিত পরিস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় সরকারি ভর্তুকি হ্রাস করা প্রয়োজন বলে জোর দিয়ে তিনি বলেন, "আমি আশা করি দেশের জনগণ আমাদের সহযোগিতা করবে।"
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) দেশের প্রথম ক্যাম্পাসভিত্তিক বিজনেস ইনকিউবেটর ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’, শেখ জামাল ডরমেটরি এবং রোজি জামাল ডরমেটরির ভার্চুয়াল উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, "বিদ্যুৎ খাতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা এবং এলএনজি আমদানিতে ২৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে।"
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বর্তমানে আমাদের লোডশেডিং এর দিকে যেতে হবে এবং আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সীমিত করতে হবে যাতে সরকার এই খাতে ভর্তুকি কমাতে পারে।"
তিনি বলেন, "প্রতি ঘনমিটার এলএনজির জন্য সরকার দেয় ৫৯ দশমিক ৬০ টাকা যেখানে ভোক্তা পর্যায়ে দাম মাত্র ৯ দশমিক ৬ টাকা। সম্প্রতি দাম বাড়িয়ে ১১ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু এখনও সেখানে বিশাল ভর্তুকি রয়েছে।"
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে জ্বালানি বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ প্রতি কিলোওয়াট ১২ দশমিক ৮৪ টাকা, যেখানে সরকার চার্জ করছে মাত্র পাঁচ দশমিক ৮ টাকা।
ফারনিজ তেলের বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল্য ১৭.৪১ টাকা এবং বিক্রয় মূল্য মাত্র ৫.০৮ টাকা। ডিজেলের জন্য, প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ৩৬ দশমিক ৮৫ টাকা এবং বিক্রয় মূল্য মাত্র ৫ দশমিক ০৮ টাকা।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ১২ দশমিক ৩৭ টাকা যেখানে বিক্রয় মূল্য মাত্র ৫ দশমিক ০৮ টাকা।
তিনি বলেন, "কতদিন আমরা এত বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে পারব। আমাদের গৃহহীনদের জন্য খাদ্য, চিকিৎসা সুবিধা এবং ঘরের ব্যবস্থা করতে হবে।"
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এবারের বাজেটে সরকার ভর্তুকি হিসাবে ৮৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ভর্তুকি না কমালে সরকার টাকা পাবে কোথা থেকে।"
ক্ষমতাসহ সব কিছুর ব্যবহার এবং নিজ নিজ সঞ্চয় বাড়ানোর জন্য তিনি সকলকে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, "আমাদের কাছে একটিই বিকল্প আছে, আমি ইতোমধ্যে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং আরোপ করার নির্দেশ দিয়েছি এবং জনগণকে আগে জানানোর জন্য একটি রুটিন তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছি যাতে তারা প্রস্তুতি নিতে পারে এবং আমরা তাদের ভোগান্তি কমাতে পারি।"
শেখ হাসিনা বলেন, আমদানিকৃত জ্বালানি তেল ও কয়লা দিয়ে পরিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ তা অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে।
ওদিকে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান লোডশেডিংয়ের মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই পরিস্থিতি খুব বেশি দিন থাকবে না। এ বছরের মধ্যেই পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ভারত থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট আমদানি করা বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
সারাদেশে লোডশেডিং অব্যাহত থাকায় মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন গ্রাহকরা।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যমতে, ১৪ হাজার মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের কম উৎপাদন হওয়ায়, দেশে প্রায় এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়।
ফলে রাজধানীর ভেতরে ও বাইরের গ্রাহকেরা ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শিকার হচ্ছেন বলে জানান বিপিডিবির এক কর্মকর্তা।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান জানান, চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান মেটাতে তার এলাকায় ৪০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, লোডশেডিংয়ের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে জনগণের ভোগান্তি কম হবে।
রাজধানীর ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে- মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, লালবাগ, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, মালিবাগ, মগবাজার, তেজগাঁও, কাকরাইল, শান্তিনগর, আগারগাঁও, কলাবাগান, কাওরানবাজার ও তেজতুরিবাজার এলাকা।
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) আওতাধীন এলাকাগুলোকেও বেশ কিছু স্পেল ব্ল্যাক আউটের সম্মুখীন হতে হয়েছে।
ডেসকোকে তার এলাকায় ১৩৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমীর আলী।
তিনি জানান, ডেসকোকে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি চাহিদার বিপরীতে ৮০০ মেগাওয়াটের কিছু বেশি বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়েছে।
ডেসকো প্রধানত রাজধানীর পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম এবং পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ করে। যার মধ্যে রয়েছে উত্তরা, মিরপুর, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকেতন ও বাড্ডা।
তবে রাজধানীর বাইরের বিদ্যুত গ্রাহকদের অভিযোগ, তাদেরও কয়েক ঘণ্টা ব্ল্যাকআউটের শিকার হতে হয়েছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর এক কর্মকর্তা জানিয়েছে সারাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে "এমনকি অনেক এলাকায় গ্রাহকদের দিনে ৫-৬ ঘন্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়েছে।"