অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ফুকুশিমার পরিশোধিত পানি সমুদ্রে ফেলতে অনুমোদন দিয়েছে জাপানের পরমাণু নিয়ন্ত্রক সংস্থা


১৭ মার্চ ২০২২ তারিখে কিয়োডো’র তোলা এই ছবিতে, জাপানের ফুকুশিমা প্রিফেকচার-এর ওকুমা শহরে এক শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর আকাশ থেকে ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে দেখা যাচ্ছে। (কিয়োডো/রয়টার্সের মাধ্যমে পাওয়া)
১৭ মার্চ ২০২২ তারিখে কিয়োডো’র তোলা এই ছবিতে, জাপানের ফুকুশিমা প্রিফেকচার-এর ওকুমা শহরে এক শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর আকাশ থেকে ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে দেখা যাচ্ছে। (কিয়োডো/রয়টার্সের মাধ্যমে পাওয়া)

অচল ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দশ লাখ টনেরও বেশি পরিশোধিত পানি সমুদ্রে ফেলার পরিকল্পনাতে শুক্রবার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছে জাপানের পরমাণু নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

পরিকল্পনাটি ইতোমধ্যেই সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) থেকে অনুমোদন পেয়েছে। তবে, পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের আগে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনাকারী কোম্পানী টেপকো (টিইপিসিও)-কে স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোর কাছ থেকে সম্মতি আদায় করতে হবে।

জাপানের পরমাণু নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ টেপকো’র পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে বলে, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রকের এক বিবৃতিতে জানানো হয়। তাতে বলা হয় যে, জাপান সরকার পরিশোধিত পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়াও এর “পরিচালনার বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বচ্ছতার” বিষয়টি দেখভাল করবে।

২০১১ সালের ১১ মার্চ সমুদ্রের তলদেশে একটি তীব্র ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির শীতলীকরণ ব্যবস্থা জলমগ্ন হয়ে পড়ে।এর ফলে চেরনোবিলের পর, সবচেয়ে ভয়াবহ পরমাণু দুর্ঘটনা ঘটে।

বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে দিয়ে ভেঙে ফেলার কাজ চলছে। এই কাজ শেষ করতে চার দশক সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই কেন্দ্র বন্ধ করতে হলে, ক্ষতিগ্রস্ত রিঅ্যাক্টর থেকে গলিত পারমাণবিক জ্বালানী অপসারণের কষ্টসাধ্য কাজটি সারতে হবে।

প্রতিদিন সেখানে ১৪০ ঘনমিটার দূষিত পানি বের হয়। এর মধ্যে রয়েছে ভূগর্ভস্থ পানি, সমুদ্রের পানি ও বৃষ্টির পানি; যা চুঁইয়ে ঐ এলাকায় চলে আসে। এ ছাড়া রয়েছে শীতলীকরণের জন্য ব্যবহৃত পানি।

পানি থেকে রেডিওনিউক্লাইড অপসারণ করতে, সেটিকে পরিশোধন করা হয় এবং ট্যাংকে মজুদ করা হয়। ইতোমধ্যেই সেখানে ১২ লাখ ৯০ হাজার টন পানি জমা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এক বছরের মধ্যেই সেখানে পানি রাখার কোন জায়গা আর থাকবে না।

টেপকো বলছে যে, ট্রিটিয়াম নামের একটি উপাদান ছাড়া পরিশোধিত পানিতে রেডিওনিউক্লাইডের মাত্রার জাতীয় মান বজায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ট্রিটিয়াম শুধুমাত্র অধিক মাত্রাতেই মানুষের জন্য ক্ষতিকর হয়।

আরও পানি মিশিয়ে ট্রিটিয়ামের ঘনত্ব কমিয়ে, একটি এক কিলোমিটার লম্বা পানিতে নিমজ্জিত পাইপের মাধ্যমে কয়েক দশক ধরে ঐ পানিগুলো সমুদ্রে ঢেলে দেয়ার পরিকল্পনা করেছে টেপকো।

আইএইএ বলছে যে, অনেক বছর ধরে এ ভাবে পানি ছাড়া হবে। আর, ধারণা করা হচ্ছে ২০২৩ এর বসন্তের আগে এই কাজ শুরু করা যাবে না। পানি সাগরে ঢালার প্রক্রিয়টি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেছে এবং তা “পরিবেশের কোন ক্ষতি করবে না।”

তবে, পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর ভোগান্তির শিকার হওয়া স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের সদস্যরা শঙ্কিত যে, এই পানি তাদের এলাকায় ছাড়া হলে, ভোক্তারা আবারও তাদের কাছ থেকে মাছ কেনা বন্ধ করে দেবে।

আঞ্চলিক প্রতিবেশী দেশ, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন ছাড়াও, গ্রীনপিসের মত প্রতিষ্ঠানগুলোও এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে।


XS
SM
MD
LG