অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

তিন মাস বন্ধ থাকার পর পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন খুলছে ১ সেপ্টেম্বর


বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে। প্রজনন মৌসুমে বন্যপ্রাণী ও মৎস্য সম্পদের প্রজনন বাড়াতে, ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট, সুন্দরবনে সব ধরণের মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ। টানা তিন মাস বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারবেন।

বন বিভাগ বলছে, “প্রজনন মৌসুমে ৩ মাস সুন্দরবনে সব ধরণের মানুষের প্রবেশ বন্ধ থাকায় বন্যপ্রাণীরা নির্বিঘ্নে প্রজনন করতে পেরেছে। বনে বিভিন্ন ধরণের বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে বনের নদী, খালে মাছও বৃদ্ধি পেয়েছে। লোকালয়ের কাছাকাছি এবং বন বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরের পাশে হরিণ, বানর, বন্য শুকুর, সাপ, অজগর, ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দেখা মিলছে। এমনকি বনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের ডাকও শোনা গেছে।”

সুন্দরবন বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। ১৮৭৮ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সুন্দরবনের মোট আয়াতন ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে স্থলভাগের পরিমাণ চার হাজার ১৪৩ বর্গকিলোমিটার এবং জলভাগের পরিমাণ এক হাজার ৮৭৩ বর্গকিলোমিটার। সুন্দরবন জীববৈচিত্র, বিশ্বের মধ্যে সমৃদ্ধশালী একটি ইকোসিস্টেম। অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল সুন্দরবন। রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরও আবাসস্থল সুন্দরবন।

১৯৯৬ সালে সুন্দরবনের এক লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৯ দশমিক ৪৯৬ হেক্টর এলাকা অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। তখন সুন্দরবনের মোট আয়াতনের শতকরা ২৩ ভাগ অভয়ারণ্য ছিল। এর ২১ বছর পর ২০১৭ সালে সরকার সুন্দরবনে অভয়ারণ্য এলাকা সম্প্রসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ঐ প্রজ্ঞাপনে নতুন করে বনের আরও এক লাখ ৭৮ হাজার ২৫০ দশমিক ৫৮৪ হেক্টর এলাকা অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সব মিলে বর্তমানে সুন্দরবনের মোট তিন লাখ ১৭ হাজার ৯৫০ দশমিক ০৮ হেক্টর এলাকা অভয়ারণ্য। এখন সুন্দরবনের মোট আয়াতনের শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি অভয়ারণ্য এলাকা।

সুন্দরবনে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড, ৩৭৫ প্রজাতির অধিক বন্যপ্রাণী এবং সর্বশেষ জরিপ অনুসারে সুন্দরবনে ১১৪টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে। সুন্দরবনে ৪৫০টি ছোট-বড় নদী, খাল জালের মতো জড়িয়ে রয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, “বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুমে জুন, জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক এবং জেলেসহ সব ধরণের মানুষের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সুন্দরবনে তিন মাস প্রবেশ বন্ধ থাকায় বন্যপ্রাণীরা নির্বিঘ্নে প্রজনন করতে পেরেছে। যার সুফল হিসেবে সুন্দরবনে বন্যপ্রাণীর প্রজনন বৃদ্ধি পেয়েছে।”

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, “বনের বিভিন্ন এলাকায় পর্যটন স্পটগুলোকে সংস্কার এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। কয়েকটি ফুট ট্রেইল ও ওয়াচ টাওয়ার সংস্কার করা হয়েছে। একই সাথে বনের মধ্যে পায়ে হাটা পথগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে।”

XS
SM
MD
LG