কোভিড-১৯ মহামারীর বিরূপ প্রভাবের মধ্যে, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে খেলাপি ব্যাংক ঋণের পরিমাণ প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে, এক লাখ পঁচিশ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে এ তথ্য এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জুনের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৯৮ লাখ কোটি টাকা। এই ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ বা ১ দশমিক ২৫ লাখ কোটি টাকা খারাপ ঋণে পরিণত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ঋণ স্থগিত করা এবং বার্ষিক কিস্তির সংখ্যা হ্রাস করা সত্ত্বেও, খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিন মাস আগে ২০২২ সালের মার্চের ত্রৈমাসিকে, মোট খেলাপি ঋণ ছিল এক দশমিক ১৩ লাখ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী, এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ব্যাংকিং খাতে সময় মতো অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা।”
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, “যদি খেলাপি ঋণ কমাতে চান, তাহলে ঋণ আদায় বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে ঋণগ্রহীতাদের জন্য বাল্ক স্থগিতাদেশ এবং হ্রাসকৃত সংখ্যার কিস্তি সুবিধা বন্ধ করতে হবে।”
তিনি এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, “কয়েক বছর ধরে ছাড় পাওয়ায় খেলাপিরা এখন মনে করছেন ঋণ পরিশোধ না করলে ভবিষ্যতে আরও ছাড় পাবেন। তাই খেলাপিদের সুবিধা বন্ধ করতে হবে।”
একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র আমানতকারীদের ঋণ দেয় বলে, ঋণ সংগ্রহে আইনি প্রক্রিয়ার ওপর নজর দিতে হবে। আইনি ব্যবস্থা ছাড়া আমানতকারীদের সুবিধা সুরক্ষিত হবে না।”
বিভিন্ন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “খেলাপি ঋণ যত বাড়বে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তত বেশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এই অতিরিক্ত অর্থ বাইরে রেখে ব্যাংকগুলো মূলধন সংকটে পড়েছে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, জুনের শেষে দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকসহ সাতটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ২৬ হাজার ৯৫ কোটি টাকা।
এর মধ্যে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি ঘাটতি, ১৩ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রণী ব্যাংকের ঘাটতি দুই হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংকের দুই হাজার ২৭৮ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের দুই হাজার ২৬১ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের দুই হাজার ১২৪ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের এক হাজার ৬০৩ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি ব্যাংকের দুই হাজার ১৪৯ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে।
বেসরকারি খাতের পাঁচটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৩ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের এক হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের এক হাজার ২১২ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকা, পদ্মা ব্যাংকের ২৬৩ কোটি টাকা এবং বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের ২৩ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “২০২২ সালের জুন শেষে, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ১২টি ব্যাংকের মোট মূলধন ঘাটতি ছিল ২৯ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা।”