মধুমতি নদীর অব্যাহত ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে, বাংলাদেশের নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার মানচিত্র। উপজেলার চারটি ইউনিয়ন; শালনগর, জয়পুর, ইতনাও কোটাকোল কয়েকটি গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
লোহাগড়া উপজেলার মধুমতি নদীর ভাঙন কবলিত মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে নদীর অপর পাড়ে, ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ও বুড়াইচ ইউনিয়নে। মধুমতি নদীর তীরবর্তী শালনগর ইউনিয়নের রামকান্তপুর, শিয়েরবর গ্রাম, চর আজমপুর, মন্ডলবাগ, চর গোপালপুর খেয়াঘাট, চাকশী, নওখোলা মিয়াপাড়া, চরশালনগর, কাশিপুর, মাকড়াইল, চর মাকড়াইল, রামচন্দ্রপুর, মল্ডলবাগ এলাকায় বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও পাকা সড়ক ভাঙছে মধুমতি নদী। ভাঙন কবলিত গ্রামের বাসিন্দারা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে তাদের ঘর-বাড়ি। গাছপালা কেটে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে তারা।
মাকড়াইল গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাংশ ইতোমধ্যে নদীতে ভেঙে গেছে। গ্রামে অবস্থিত মোবাইল টাওয়ার সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শিয়েরবরের হাট রক্ষার জন্য নদীতে বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী হাটটি।
ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, মন্ডলবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মল্ডলবাগ আল-নূর জামে মসজিদ, নওখোলার আল-হেরা দাখিল মাদরাসা, চাকশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের একটি মসজিদসহ কয়েকশ’ বাড়িঘর এবং ফসলি জমি।
নদী ভাঙনের শিকার মন্ডলবাগ গ্রামের নূর মোহাম্মদ ও কামরুল শেখ বলেন, “এ বছর মধুমতি নদীর ভাঙনে গ্রামের পাকা সড়ক বসতবাড়ি গাছ-পালা ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে।”
চর খোলাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা জিন্না মিয়া, সাত্তার মিয়াসহ অনেকে জানান, গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী নওখোলা, চরশালনগর, চরকাশিপুর গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিয়ে নদীর অপর পাড়ে বসবাস করছে। জরুরিভিত্তিতে শিয়েরবরের হাটসহ ভাঙন কবলিত গ্রামগুলো রক্ষায় ব্যবস্থা না নিলে মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে।”
কয়েক বছর ধরে ভাঙছে মধুমতি। এর ফলে উপজেলার কাতলাশুর, চরগোপালপুর, চাকশী, চরখড়কদিয়া, চরশালনগর, চরমাকড়াইল গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের জমি-জমা নদীর অপর পাড়ে চলে গেছে। এখানকার বাসিন্দারাও চলে গেছেন অপর পাড়ে। সেখানে ঘর-বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন তারা।
নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী স্বপন কুমার জানান,“ অনেক গুরুত্বপুর্ণ স্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মধুমতির ভাঙন বদলে দিচ্ছে এলাকার মানচিত্র।”
নদী ভাঙন পরিস্থিতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, “নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।”