অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

চীনের মানবাধিকার রেকর্ডে আফ্রিকান দেশগুলির বেশিরভাগই নীরব কেন?


চীনের উত্তর-পশ্চিমে জিনজিয়াং-এ উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইয়ারকেন্ট কাউন্টির একটি আটক কেন্দ্রের গার্ড টাওয়ার থেকে চারিদিক পর্যবেক্ষণ করছেন নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্য। ২১ মার্চ, ২০২১। (ফাইল ছবি)
চীনের উত্তর-পশ্চিমে জিনজিয়াং-এ উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইয়ারকেন্ট কাউন্টির একটি আটক কেন্দ্রের গার্ড টাওয়ার থেকে চারিদিক পর্যবেক্ষণ করছেন নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্য। ২১ মার্চ, ২০২১। (ফাইল ছবি)

চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে উইঘুর এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীদের প্রতি চীনের আচরণের বিষয়ে অতি সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিবেদনে পশ্চিমা দেশ এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলি চীনের নিন্দা করলেও, বেশিরভাগ আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলি এ বিষয়ে নীরব রয়েছে।

প্রতিবেদনটি, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষযক তদানীন্তন প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট আগস্টে তার শেষ কার্যদিবসে প্রকাশ করেন। শিনজিয়াং অঞ্চলে উইঘুর এবং অন্যদের বিরুদ্ধে চীনের পদক্ষেপ, বিশেষ করে শিবিরে নির্বিচারে আটক রাখা, নির্যাতন এবং যৌন সহিংসতার মতো অপব্যবহারের বিষয়টি উল্লেখ করে মিশেল বলেন, এগুলো "আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে, বিশেষ করে গণ্য হতে পারে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে।"

কিছু পশ্চিমা দেশ এবং তাদের মিত্ররা এখন ওই রিপোর্টের ফলাফলগুলি আরও তদন্ত করার জন্য একটি তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য জাতিসংঘকে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু তা আদৌ ঘটবে কিনা, তা নির্ভর করছে সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যার উপর, যারা পশ্চিমাদের পাশে রয়েছে।

জেনেভায় জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত, চেন জু, মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫১ তম অধিবেশন চলাকালীন গত ১৩ সেপ্টেম্বর একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জিনজিয়াংয়ের মূল্যায়ন "বিভ্রান্তির উপর ভিত্তি করে এবং এতে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।” বুরুন্ডি, ক্যামেরুন, কমোরোস, মিশর, গিনি, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, সিয়েরা লিওন, দক্ষিণ সুদান এবং জিম্বাবুয়ের মতো আফ্রিকান দেশগুলির প্রায় অর্ধেক সমর্থকসহ অন্যান্য ২৮টি দেশ ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে।

গত বছর, ৪৩টি দেশের মধ্যে, আফ্রিকার মাত্র দুটি দেশ, এসওয়াতিনি এবং লাইবেরিয়া, জিনজিয়াংয়ে চীনের নীতির নিন্দা করে জাতিসংঘের একটি ইস্তাহারে স্বাক্ষর করেছে। গত জুন মাসে, দেশ দুটি আবারও স্বাক্ষর করলেও তারা সত্যিই ব্যতিক্রমী দেশ।

মহাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীনের অবস্থানকে সমর্থন করে চিঠিতে স্বাক্ষর করেনি, কিংবা চীনের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক অবস্থানও গ্রহণ করেনি। বিশ্লেষকরা ভিওএ-কে বলেছেন, মহাদেশটির নেতৃস্থানীয় গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যাকে দেখা হয় সেই দক্ষিণ আফ্রিকা – বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ইস্যুতে নীরব রয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিভাগের কর্মকর্তারা ভিওএ-এর মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি।

দক্ষিণ আফ্রিকান ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের চীন-আফ্রিকা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, কোবাস ভ্যান স্ট্যাডেন বলেছেন, চীনের অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে বেশিরভাগ আফ্রিকান দেশ জিনজিয়াং এর সাথে শুধু শুধু "ঝামেলা বাঁধাতে" চায় না।

পর্যবেক্ষকদের মতে, আফ্রিকান দেশগুলি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের সুবিধাভোগী এবং তারা তাদের বিশাল অবকাঠামোগত ঋণের উত্স থেকে বঞ্চিত হতে চায় না।

ব্র্যাডলি জার্ডিন, একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক যিনি চীনের দিকে তাঁর মনোনিবেশ করেছেন। সম্প্রতি তিনি উইঘুরদের বিরুদ্ধে চীনের বিশ্বব্যাপী প্রচারণার বিষয়ে উইলসন সেন্টারের জন্য একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, উইঘুর ইস্যুতে আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোও চীনকে সমর্থন করছে, বিশেষ করে তিনি মিশরের নাম উল্লেখ করেন।

জার্ডিনের গবেষণা অনুসারে, বিদেশে ১,৫০০ টিরও বেশি উইঘুরকে আটক বা প্রত্যর্পণ করা হয়েছে – যাদের অনেকগুলি উত্তর আফ্রিকায়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আফ্রিকার অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর ক্যারিন কানেজা নান্টুল্যা বলেছেন, তিনি জিনজিয়াং ইস্যুতে চীনের সাথে যৌথ বিবৃতিতে সামান্য কিছু অবনতির লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন। তিনি বলেন, "স্বাক্ষরকারীর সংখ্যা কেবল যে সমান রয়েছে তা নয় , প্রকৃতপক্ষে, এই সংখ্যা সম্প্রতি বেশ কমে গেছে।"

XS
SM
MD
LG