অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সরকারকে কিছু ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হতে হলেও মানুষ বিদ্যুৎ পাবে—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারকে কিছু ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হতে হচ্ছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বাংলাদেশের মানুষ বিদ্যুৎ পাবে না।

তিনি বলেন, ‘মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু আমাদের সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে...আমরা কিছু ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হয়েছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা তা করতে বাধ্য’।

দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি স্থাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

পাবনার উত্তরাঞ্চলের ঈশ্বরদীতে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে তিনি তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সবার জন্য বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়াই সরকারের লক্ষ্য।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। আর আমরা বাংলাদেশকে আলোকিত করতে সফল হয়েছি’।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘…পরিবহনসহ সব ক্ষেত্রেই দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে উন্নত দেশগুলো নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঞ্চয়ের দিকে মনোনিবেশ করেছে। আমরাও পিছিয়ে নেই…বিশ্ব এখন একটি গ্লোবাল ভিলেজ এবং একটি দেশ অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল। সমগ্র বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে, তখন আমাদেরও সেই আঘাত সহ্য করতে হয়’।

তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও এর কারণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কারণে আরও সমস্যা তৈরির বিষয় উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, রাশিয়ার রোসাটম স্টেট কর্পোরেশনের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জ্যৈষ্ঠ সচিব জিয়াউল হাসান।

অনুষ্ঠানে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াটসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লি স্থাপনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (১৯ অক্টোবর) দেশের প্রথম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ও শেষ ইউনিটের চুল্লি (রিঅ্যাকটর প্রেসার ভেসেল) স্থাপনের উদ্বোধন করেছেন।

রিঅ্যাকটর প্রেসার ভেসেলটি দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াটসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) দ্বিতীয় ইউনিটে স্থাপন করা হয়।

পাবনার উত্তরাঞ্চলের ঈশ্বরদীতে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।

ঈশ্বরদীর রূপপুরে এক হাজার ২৬০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত দেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিট রয়েছে।

গত বছরের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের রিঅ্যাকটর প্রেসার ভেসেল স্থাপন উদ্বোধন করেন।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

প্রকল্পের রুশ ঠিকাদার রোসাটম জানায়, ভিভিইআর-১২০০ রিঅ্যাকটর ভেসেলটি বুধবার স্থাপনের আগে সকল নিয়ন্ত্রক প্রয়োজনীয়তা অনুসারে ইনপুট নিয়ন্ত্রণ পাস করেছে।

রোসাটমের কর্মকর্তারা জানান, নকশা পর্যায়ে দ্বিতীয় পাওয়ার ইউনিটের ভিভিইআর-১২০০ রিঅ্যাকটর ভেসেল স্থাপনের কাজটি বেশ কয়েকটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়।

একটি লিয়েবয়ার-১১৩৫০ ভারী ক্রলার ক্রেন রিঅ্যাকটর ভেসেলটিকে পাওয়ার ইউনিটের পরিবহন পোর্টালে তুলেছে।

এরপর একটি বিশেষ পরিবহন ট্রলিতে এটিকে চুল্লির বগির কেন্দ্রীয় হলে সরানো হয়। আরও একটি পোলার ক্রেনের সাহায্যে চুল্লি সিলিন্ডারটিকে খাড়াভাবে তোলা হয় এবং রিঅ্যাকটর গহ্বরের একটি রিংয়ে স্থাপন করা হয়।

আরএনপিপির কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের ভৌত কাজের ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে এবং দ্বিতীয় ইউনিটে রিঅ্যাকটর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের মাধ্যমে প্রকল্পটির মোট ৫৩ শতাংশ ভৌত কাজ সম্পন্ন হবে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর মঙ্গলবার ইউএনবিকে বলেন, ‘রিঅ্যাকটর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের সঙ্গে প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের ভৌত কাজ লক্ষ্যমাত্রার ৪৫ শতাংশের বেশি অর্জিত হবে’।

সরকার ২০০৯ সালে প্রকল্পটি হাতে নেয় এবং দীর্ঘ আলোচনার পর ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে একটি ক্রেডিট চুক্তি সই করে যাতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি সংস্থা-রোসাটমকে এর ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।

এছাড়াও ২০১৯ সালের ৬ অগাস্ট বাংলাদেশ প্রকল্পের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে একটি পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ চুক্তি সই করে।

চুক্তি অনুযায়ী, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পারমাণবিক জ্বালানি সংস্থা টিভেল জয়েন্ট স্টক কোম্পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো জীবনকালের জন্য পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ করবে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিটি ইউনিটকে প্রতি ১৮ মাস পর পর মোট প্রয়োজনীয় পারমাণবিক জ্বালানির এক তৃতীয়াংশ পুনরায় লোড করতে হবে এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুনরায় লোড বিনামূল্যে রাশিয়ান ফার্ম প্রদান করবে।

প্রতিটি পারমাণবিক জ্বালানি পুনরায় লোড করতে খরচ হবে ছয় কোটি ২০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি ৫৫০ কোটি টাকার সমান।

ড. শৌকত আকবর বলেন, ‘দ্বিতীয় ইউনিটে চুল্লি স্থাপনের পর যে বড় কাজগুলো অসমাপ্ত থাকবে তার মধ্যে রয়েছে প্রি-অপারেশনাল টেস্টিং ও ফুয়েল লোডিং’।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পটি চালু করার আগে আরও কিছু কাজ শেষ করতে হবে। আমরা আশা করছি আগামী বছরের জুনের মধ্যে এই কাজগুলো শেষ করব’।

তিনি বলেন, ‘পাওয়ার গ্রিড লাইন নির্মাণ এবং যোগাযোগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে যা রয়েছে তা আগামী ২০২৪ সালের মাঝামাঝি আগে সম্পন্ন করতে হবে’।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির জন্য একটি নিবেদিত কোম্পানি নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। এর (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেছেন, ‘২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ২০২৫ সালে দ্বিতীয় ইউনিট’।

প্রাথমিকভাবে প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম ২০২২ এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৩ থেকে শুরু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং তারপর লক্ষ্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

এনবিসিবিএল-এর কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়া এবং বেলারুশসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ থেকে প্রায় ১৪ হাজার বিদেশি কর্মী এখন বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের জন্য ঠিকাদার এবং এর সাব-কন্ট্রাক্টরদের অধীনে এই প্রকল্পে নিযুক্ত রয়েছে।

XS
SM
MD
LG