অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় প্রস্তুত আশ্রয়কেন্দ্র ও মেডিকেল টিম


ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা গুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। গঠন করা হয়েছে মেডিকেল টিম। দুর্যোগমোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুত রয়েছেন।


চট্টগ্রামে ২৯০ টি মেডিকেল টিম
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংএর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ভোরে এটি উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশন সোমবার দুপুরে শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করেছে। নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সরকারি হাসপাতালগুলো। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২৯০টি মেডিকেল টিম।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্লাবন কুমার বিশ্বাস বলেন, “ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে জরুরি বৈঠক চলছে।”

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা কালাম চৌধুরী বলেন, “ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সিটি কর্পোরেশনের করণীয় ঠিক করতে এবং নগরবাসীর জান-মাল রক্ষায় বৈঠক হয়েছে।”

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সরকারি হাসপাতালগুলো। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২৯০টি মেডিকেল টিম। চট্টগ্রাম অঞ্চলের সব সরকারি হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ছুটি বাতিলসহ চিকিৎসকদের নিজ নিজ হাসপাতালে অবস্থানসহ সাত দফা জরুরি নির্দেশনা জারি করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ।

এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের আওতাধীন ২৫০ শয্যা চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালসহ সকল জেলাতে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, “ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে ২৯০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলার ২০০টি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। এর বাইরে ১৫টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিটিতে পাঁচটি করে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ৯টি আরবান ডিসপেনসারীতে একটি করে ৯টি মেডিকেল টিম, স্কুল হেলথ্ ক্লিনিকে একটি এবং ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঁচটি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যে কোন বিপর্যয়ে এসব মেডিকেল টিম সেবা প্রদান করবে।”

খুলনায় প্রস্তুত ৪০৯ আশ্রয়কেন্দ্র
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে প্রাণহানি এড়াতে, খুলনায় ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫০ জনের জন্য ৪০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার জানিয়েছেন, “ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। জরুরি শুকনা খাবার প্রস্তুত রাখা, সাইক্লোন শেল্টারে যারা আসবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আগতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”

তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বিশেষ কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে, তাদের যাতে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া যায়, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসন জানায়, দাকোপে ১১৮টি, বটিয়াঘাটায় ২৭টি, কয়রায় ১১৭টি, ডুমুরিয়ায় ২৫টি, পাইকগাছায় ৩২টি, তেরখাদায় ২২টি, রূপসায় ৩৯টি, ফুলতলায় ১৩টি ও দিঘলিয়ায় ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

বাগেরহাটে ৩৪৪ আশ্রয়কেন্দ্র
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ধেঁয়ে আসার খবরে, বাগেরহাটের উপকূলবর্তী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করেছে মোংলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে।
জানা যায়, বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোংলা, রামপাল ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় মাইকিং করে দুর্গত মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে বলা হচ্ছে। জেলার ৯টি উপজেলায় ৩৪৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রস্তত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে দুই লাখ আট হাজার ৪৩০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। মানুষ তাদের গবাদি পশু আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারবে।

এদিকে, বাগেরহাটে নদী পাড়ের ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এছাড়াও, জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেলে বিভিন্ন এলাকায় নদী পাড়ের ১০০ কিলোমিটার বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, সাত নম্বর বিপদ সংকেত জারি করায়, উপকূলবর্তী চারটি উপজেলায় মাইকিং করে দুর্গত মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য বলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “বিকালের মধ্যে দুর্গত এলাকার সব মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হবে। শুকনা খাবার প্রস্তুত, মেডিকেল টিম গঠন, উদ্ধারকারি টিমসহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রস্ততি গ্রহণ করা হয়েছে।”

বরিশা‌লে ১০৫২ আশ্রয়কেন্দ্র
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় বরিশালে ১ হাজার ৫২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। রবিবার রা‌তে ব‌রিশাল জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সার্কিট হাউজে এক সভায় এ তথ্য জানানো হয়। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আড়াই লাখ মানুষ আশ্রয় নি‌তে পার‌বে।
জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

লক্ষ্মীপুরে ১৮৫ আশ্রয়কেন্দ্র ও ৬৬ মেডিকেল টিম
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে ১৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৬৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় ১৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, ৬৬ টি মেডিকেল টিম, উদ্ধার মোকাবিলায় রেডক্রিসেন্ট ও সিপিপিসহ তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবী সদস্য প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি আরও জানান, ২৬০ মেট্রিক টন শুকনো খাবার ও নগদ পাঁচ লাখ ৮৩ হাজার টাকা মজুত রাখা হয়েছে। সোমবার থেকে উপকূলীয় এলাকা থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে আসার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়া, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

XS
SM
MD
LG