বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দার কারণে বাংলাদেশের দুটি প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় অক্টোবর মাসে কমেছে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
তারা বলেন, রপ্তানি কমে যাওয়া মানে একই সঙ্গে আমদানিও কমে যাবে। যদিও কম আমদানি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কিছুটা কমিয়ে আনতে পারে, তবে অর্থনীতিতে এর সামগ্রিক প্রভাব ভালো হবে না।
থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের(সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, ‘দেশীয় অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতির উত্থান-পতনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউভুক্ত দেশগুলোতে নতুন মন্দার কারণে, বাংলাদেশের অর্থনীতি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে’।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া উচিত। কারণ এটি এই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি ভালো উৎস হবে’।
মুস্তাফিজুর রহমান দেশীয় সম্পদ সংগ্রহ বাড়ানো এবং খাদ্য উৎপাদনে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন; যা মন্দার সময় অর্থনীতিকে স্থিতিস্থাপক হতে সাহায্য করবে।
অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক ইউএনবিকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে মন্দা থাকায় রপ্তানি আয় বাড়বে না’।
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্সসহ দেশীয় অর্থনীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে না, কারণ আমদানির চাহিদা রপ্তানির সূত্রে পড়ছে। সরকারের উচিত প্রকল্প ব্যয় কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণের নীতিতে জোর দেওয়া’।
বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বিরূপ প্রভাবের কারণে অক্টোবরে বাংলাদেশ ৪ দশমিক ৩৫৬ বিলিয়ন ইউএস ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি করেছে।
এটি দেখায় যে অক্টোবরে রপ্তানি আয় ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমে ৪ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার হয়েছে। গত অর্থবছরের অক্টোবরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৭২৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার। অর্থাৎ রপ্তানি আয় ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ কমেছে।
বুধবার (২ নভেম্বর) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) অক্টোবর মাসের রপ্তানি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
ফলে টানা ১৩ মাসে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে টানা দুই মাস আগের বছরের তুলনায় রপ্তানি আয় কমেছে।
এদিকে, ২০২২ সালের অক্টোবরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রপ্তানি আয়ের ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ কমেছে।
এই মাসে সরকারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ বিলিয়ন ইউএস ডলার। যেখানে দেশটি রপ্তানি করেছে ৪ দশমিক ৩৫৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার। যা ৬৪ দশমিক ৩৩ কোটি ডলার কমেছে। অর্থাৎ প্রায় ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ পতন হয়েছে।
উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমতে শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এ কারণে তারা কাপড় কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। তাদের খাদ্যের জন্য প্রচুর ব্যয় করতে হয়, যা বাংলাদেশের রপ্তানি আয়কে প্রভাবিত করেছে।
যা হোক, তৈরি পোশাকের মালিকসহ ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন যে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট নতুন মন্দার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজার থেকে ক্রয় আদেশ কমে যাবে।
বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স প্রবাহ গত বছরের একই মাসের তুলনায় অক্টোবরে সাত দশমিক চার শতাংশ কমে এক দশমিক ৫২ বিলিয়ন হয়েছে। যা গত চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।