অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব চায় জাপান: রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি


বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, “ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার মতো আরও কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে একটি ‘কৌশলগত’ পর্যায়ে উন্নীত করতে চায় জাপান।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন জাপান সফরের সময় এই বিষয়ে সম্ভাব্য আলোচনার কথা উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, “আমাদের ব্যাপক অংশীদারিত্ব রয়েছে। আমরা এটিকে বৃদ্ধি করতে চাই। আশা করি আমরা আমাদের এই অংশীদারিত্ব একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব বলতে আমরা একমত হতে পারি।”

সোমবার (১৪ নভেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এ কথা বলেন। সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) ফ্রেডরিখ-এবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস), বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

রাষ্ট্রদূত নাওকি বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানির বিষয়ে তার দেশের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আরও আলোচনা হবে।

ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক (এফওআইপি) নিয়ে জাপানের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, “এটি খুব ব্যাপক, তবে কোনও দেশের বিরুদ্ধে নয় বা কোনও দেশের পক্ষেও না। জাপান বাংলাদেশকে এফওআইপি-এর অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে। আমরা আমাদের ব্যবহারিক সহযোগিতার প্রচার চালিয়ে যাব।”

রাষ্ট্রদূত নাওকি বলেন, “অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সংযোগ, সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি হচ্ছে বাস্তব সহযোগিতার অংশ; যা জাপান প্রচার করে।”

বিনিয়োগ প্রসঙ্গে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, “চ্যালেঞ্জ আছে, তবে বিনিয়োগের পরিবেশের উন্নতি হবে বলে আশা করছি।”

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা’র আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৯শে নভেম্বর-১ ডিসেম্বর, জাপান সফর করবেন বলে কথা রয়েছে। সেসময় বৃহৎ প্রকল্পে ‘বিনিয়োগ ও অর্থায়নের’ মাধ্যমে উন্নয়ন প্রচেষ্টায় জাপানের ‘শক্তিশালী সম্পৃক্ততা’ চাইবে বাংলাদেশ।

অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশা

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, তারা আশা করছেন বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সব প্রধান রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে, অবাধ ও ত্রুটিহীনভাবে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, “আমরা আশা করি আগামী নির্বাচন আরও ভালো হবে। বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। এটা আমার দৃঢ় আশা।”

রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা জানি নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করছে এবং বাংলাদেশ সরকার বলছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন একটি বিষয়, যার সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কিন্তু প্রত্যাশা হলো প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশ গ্রহন করবে। নির্বাচন অংশগ্রহনমূলক হবে।”

২০১৮ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত নাওকি বলেন, “ঢাকায় জাপানি দূতাবাস একটি বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। যা তার দেশের জন্য খুবই অস্বাভাবিক ছিল। যদিও সেটিতে সহিংসতার বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।

মিয়ানমারের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের অনুকূল নয়

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে শিগগিরই পূর্ণ মাত্রায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, “শিগগিরই পূর্ণ মাত্রায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা খুবই কঠিন হবে। মিয়ানমারের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে, তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা আমাদের জন্য খুবই কঠিন হবে।”

রাষ্ট্রদূত বলেন, “জাপান মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং সেখানে সহিংসতা বন্ধ,বন্দিদের মুক্তি এবং সেখানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছে।”

বাংলাদেশ, কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে এবং গত পাঁচ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হয়নি।

রাষ্ট্রদূত বলেন, “পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। এ পরিস্থিতি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। প্রত্যাবাসন অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাপান কাজ করতে প্রস্তুত।”

রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিয়ানমারের পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গাদের শিগগিরই প্রত্যাবাসন করা যাচ্ছে না। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জাপান বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করেছে।”

XS
SM
MD
LG