অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

জলবায়ু-প্ররোচিত অভিবাসনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন


পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন

বাংলাদেশ সরকার, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) যৌথভাবে জলবায়ু প্রভাবিত অভিবাসন ও স্থানচ্যুতির বিষয়ে অধিকতর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেছেন, “বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, জলবায়ু-প্ররোচিত অভিবাসনসহ ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি রয়েছে।” আর, বক্তারা বলেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিনিয়ত স্থানচ্যুতি এবং অভিবাসনের মূল চালক হয়ে উঠেছে। অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে, বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ, জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

সোমবার (১৪ নভেম্বর) মিশরের শারম আল-শেখে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক কাঠামো সম্মেলনের (ইউএনএফসিসিসি) ২৭তম অধিবেশন (কপ-২৭) প্রেক্ষাপটে, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিএফভি) প্যাভিলিয়নে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানান বক্তরা; আর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানান।

‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে মানব গতিশীলতা-অভিবাসন এবং জলবায়ু পদক্ষেপে ইতিবাচক ন্যারেটিভ গঠন’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠান যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইওএম ও সিভিএফ।

কপ-২৭ উপলক্ষে আয়োজিত এই বিশেষ সাইড-ইভেন্টে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে মানব গতিশীলতা বিষয়ক নানা বিষয়ে সরকারের উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, সুশীল সমাজ ও বিশেষজ্ঞরা যোগ দেন।

উল্লেখ্য কপ-২৭ অভিবাসনের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে মোকাবেলা করার জন্য, অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহকে আলোচনার একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকার, আইওএম ও সিভিএফ-এর প্রতিনিধিরা শনাক্ত করেন যে জলবায়ু পরিবর্তন মানুষ এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে।

অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতি বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন ২০২১ অনুসারে, ২০৫০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে আনুমানিক ২১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাবে অভ্যন্তরীণ অভিবাসী হতে পারে।

বন্যা, ঝড়-বৃষ্টি, নদীভাঙন ও লবণাক্ততার উচ্চ সংবেদনশীলতাসহ ১৬ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূলতায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন এই অনুষ্ঠানে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অভিবাসন ও বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, জলবায়ু-প্ররোচিত অভিবাসনসহ ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি রয়েছে। এ বিষয়ে যথাযথ মনোযোগ দেওয়া দরকার।”

তিনি আরও বলেন, “বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই জলবায়ূ বিষয়ক প্যারিস চুক্তি স্মরণ করে স্বীকার করতে হবে যে জলবায়ু পরিবর্তন সারা বিশ্বের কয়েক লাখ মানুষের জন্য একটি ভয়াবহ হুমকি। এই ভয়বহতা মোকাবেলায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে।”

আব্দুল মোমেন বলেন, “এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ ভবিষ্যৎ তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার জন্য প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য রয়েছে। এটি পূরণের জন্য শক্তিশালী বৈশ্বিক পদক্ষেপের প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং জাতীয় নীতিগুলোতে জলবায়ু অভিবাসন বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার।”

অনুষ্ঠানে আইওএম-এর উপ-মহাপরিচালক (অপারেশন) উগোচি ড্যানিয়েল বলেছন, “আমরা জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভিবাসনের মধ্যে ক্রমবর্ধিত আন্তঃসম্পর্ক লক্ষ্য করছি। এই অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। এটা মনে রাখতে হবে, অভিবাসন একটি ঐচ্ছিক বিষয়; বাধ্য হয়ে প্রয়োজন নয়।”

অনুষ্ঠানে উগান্ডা সরকারের পানি ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব আলফ্রেড ওকোত অকিদি ভার্চুয়াল প্লাটফরমে যোগদান করেন। তিনি বাস্তুচ্যুতি সংক্রান্ত কাম্পালা ঘোষণার প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

অংশগ্রহণকারীরা উল্লেখ করেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রশমন এবং অভিযোজন নিয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নীতি জলবায়ু অভিবাসনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়তা করবে। তারা বলেন যে সংশ্লিষ্ট সকলের মনে রাখতে হবে, জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আজ নেওয়া নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো অভিবাসী এবং তাদের পরিবারের জীবন নির্ধারণ করবে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিভিএফ এর সিনিয়র উপদেষ্টা ম্যাথিউ ম্যাককিনন। আলোচনায় অংশ নেন; ঘানার বিশেষ দূত এবং সিভিএফের সভাপতি হেনরি কোয়াবেনা, আইওএমের অভিবাসন জলবায়ু পদক্ষেপের বিশেষ দূত এবং আন্তঃসংসদীয় ইউনিয়নের সভাপতি ক্যারোলিন ডুমাস, কোস্টারিকা সরকারের পরিবেশ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীনে জলবায়ু পরিবর্তন অধিপ্তরের অভিযোজন বিষয়ক সমন্বয়ক ইভান দেলগাদো।

অনুষ্ঠানে সিয়েরা লিয়নের ফ্রিটাউনের মেয়র এবং মেয়র মাইগ্রেশন কাউন্সিল-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইভোনি আকি-সয়্যারের ভিডিও বার্তাও প্রদর্শিত হয়।

XS
SM
MD
LG