ঘুষ নেওয়ার মামলায় আট বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) বিচারপতি মো. রইস উদ্দিনের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে ছয় মাসের জন্য জামিন দেন। এর আগে, ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে জামিন দিলেও, পরদিন তা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরী। দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম, খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় দেন। রায়ে আদালত দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে আট বছর ও পুলিশের বরখাস্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া, বাছিরকে ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে মিজানকে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় ও বাছিরকে দণ্ডবিধির ১৬৫(এ) ধারায় তিন বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরদিকে মানি লন্ডারিং আইনের ৪ ধারায় বাছিরকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বাছিরের দুটি দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলে তাকে পাঁচ বছর দণ্ড ভোগ করতে হবে বলে বিচারিক আদালত উল্লেখ করেন৷ আর, দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় উভয়ে দোষী সাব্যস্ত হলেও একই ধরনের অভিযোগে দণ্ডিত হওয়ায় এ ধারায় কাউকেই সাজা দেওয়া হয়নি।
ঐ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে এনামুল বাছির। ১৩ এপ্রিল তার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে, ৮০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ স্থগিত করেন। বর্তমানে খালাস চেয়ে করা তার আপিল বিচারাধীন রয়েছে।
৪০ লাখ টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্লাহ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন একই কর্মকর্তা।
৯ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ। এরপর তিনি মামলাটি বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বদলির আদেশ দেন।
২০২১ সালের ১৮ মার্চ, অভিযুক্তদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান কালে, অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি পাওয়ার জন্য দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন ডিআইজি মিজান। ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে ঐ চ্যানেলকে দিয়েছিলেন মিজান। ডিআইজি মিজান এ বিষয়ে নিজেও গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ঐ অর্থ ঘুষ দেন বলে ডিআইজি মিজান দাবি করেন।
ঐ প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর, দুদক সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ২০১৯ সালের ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কমিশন।
এরপর, একই বছরের ১৬ জুলাই দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্লাহ মানি লন্ডারিং আইনে সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দায়ের করেন। ঐ বছরের ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেপ্তার করে দুদকের একটি দল। সেই থেকে তিনি কারাগারে।
অপরদিকে, তৎকালীন ডিআইজি মিজানকেও এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলার বিচার শেষে ২৩ ফেব্রুয়ারি রায় দেন বিচারিক আদালত।