অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেক প্রত্যাখ্যানের মামলার বিষয়ে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার রায় স্থগিত


বাংলাদেশ হাইকোর্ট
বাংলাদেশ হাইকোর্ট

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কোনো ব্যক্তি ও সংস্থার বিরুদ্ধে চেক প্রত্যাখ্যানের (ডিজঅনার) মামলা করতে পারবে না মর্মে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের দেওয়া রায় দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

আদালতে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুল্লা আল বাকি।

উল্লেখ্য, গত ২৩ নভেম্বর চেক প্রত্যাখ্যান মামলাসংক্রান্ত রায় দেন হাইকোর্ট।

রায়ে আদালত বলেন, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য শুধুমাত্র ২০০৩ সালের অর্থঋণ আইনের বর্ণিত উপায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে। পাশাপাশি বর্তমানে আদালতে চলমান ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা সব চেক ডিজঅনার মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলেও রায়ে বলা হয়।

ঋণ আদায়ের জন্য এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্র্যাক ব্যাংকের চেক ডিজঅনার মামলা বাতিল করে ২৩ নভেম্বর বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে চেক নিচ্ছে সেটা জামানত। বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসেবে রাখা সেই চেক দিয়ে চেক ডিজঅনার মামলা করা যাবে না।

আদালত বলেন, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ একটি চুক্তির মাধ্যমে নেওয়া হয়ে থাকে। ব্যাংকের কিছু দুর্নীতিবাজ, অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে, তাদের হিডেন এজেন্ডা বাস্তবায়নে চেকের অপব্যবহার করে মামলা করে থাকে। তাদের ব্যবহার দাদন ব্যবসায়ীদের মতো।

আদালত আরও বলেন, ঋণের বিপরীতে ব্ল্যাংক চেক নেওয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কাজ করে আসছে।

রায়ে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, আজ থেকে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি চেক ডিজঅনার মামলা করে তাহলে আদালত তা সরাসরি খারিজ করে দেবেন। একই সঙ্গে তাদের ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে পাঠিয়ে দেবেন।

আদালত বলেন, ব্যাংক হওয়ার কথা ছিল গরিবের বন্ধু, কিন্তু তা না হয়ে ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গরিবের রক্ত চুষছে। এটা হতে পারে না। যারা হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছে ব্যাংক তাদের ঋণ মওকুফ করার কথা শুনি। কিন্তু কোনো গরিবের ঋণ মওফুফ করার কথা কোনোদিন শুনিনি। নীলকর চাষিদের মতো, দাদন ব্যবসায়ীদের মতো যেন-তেন ঋণ আদায় করাই তাদের লক্ষ্য। ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আইনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মামলা দায়ের না করে চেক ডিজঅনার মামলা করছে। এ কারণে আমাদের ক্রিমিনাল সিস্টেম প্রায় অকার্যকর হয়ে গেছে। তাই এখন থেকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে। অন্যকোনো আইনে নয়।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি হাইকোর্টের রায়ের আলোকে নির্দেশনা জারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

এ ছাড়াও সব ধরনের ঋণের বিপরীতে ইনসিওরেন্স কাভারেজ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছিলেন আদালত।

এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছিল ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এরপর গত ২৮ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের এক আদেশের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের এ সংক্রান্ত রায় স্থগিত না করে শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী আজ এ বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানি হয়। শুনানির পর হাইকোর্টের পুরো রায়টি স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।

XS
SM
MD
LG