শিশুদের অধিকার নিয়ে অসামান্য প্রতিবেদনের জন্য, ১১ বাংলাদেশি সাংবাদিক পেলেন ১৭ তম ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড। ২০০৫ সালে ইউনিসেফের চালু করা মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস শিশুদের অধিকার নিয়ে লেখা প্রতিবেদনের শ্রেষ্ঠত্বকে স্বীকৃতি দেয়।
ইউনিসেফ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পুরস্কার বিজয়ীরা জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সকল ধরনের গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের কাছ থেকে ৩০০টি প্রতিবেদন জমা পড়েছিল। সেখান থেকে বিচারকদের একটি স্বাধীন প্যানেল এই ১১ সাংবাদিককে নির্বাচিত করেছে। বিজয়ী এবং মনোনীতদের প্রতিবেদনগুলো শিশুদের জোরপূর্বক বিয়ে, শিশুশ্রম, বিশুদ্ধ পানির অভাবে ঋতুস্রাব, পথশিশু, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, নির্যাতন ও কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের কথা উঠে এসেছে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, “আজ আমরা শক্তিশালী যেসব প্রতিবেদনকে সম্মান জানাচ্ছি, সেগুলো শিশু অধিকারের কথা সবার সামনে তুলে ধরতে এবং ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে, সাংবাদিকরা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তার-ই প্রতিফলন। তিক্ত বঞ্চনার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি এগুলোতে উঠে এসেছে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে প্রতিদিনের বিজয়ের গল্প, যা আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা।”
এবার ১৮ বছরের কম বয়সী প্রতিভাবান শিশু সাংবাদিকদেরও পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাদের চলমান প্রতিবেদন, শিশুদের এমন সরঞ্জাম এবং প্ল্যাটফর্ম দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে, যা তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলোতে তাদের নিজস্ব মতামত, ধারণা এবং চিন্তাভাবনা প্রকাশ করতে সক্ষম করে।
রয়টার্স বাংলাদেশের চিফ করেসপন্ডেন্ট এবং মীনা অ্যাওয়ার্ডসের বিচারক রুমা পাল বলেন, “আমরা এই বছর শক্তিশালী কিছু প্রতিবেদন দেখেছি এবং আগামী দিন, সপ্তাহ ও মাসগুলোতে আমাদের নৈতিকতার সর্বোচ্চ মানদণ্ডে সমবেদনামূলক, সহানুভূতিশীল রিপোর্টিংয়ের উচ্চ মান বজায় রাখতে হবে। নৈতিকতা এবং সংবেদনশীলতা ভাল প্রতিবেদনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। গল্পটি যাতে বেশি আকর্ষক হয়, এটি কীভাবে পরিচালনা করা হয়, সেদিকে আরও যত্ন নেয়া দরকার।”
ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডের নামকরণ করা হয়েছে, জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র মীনার নামে, যা বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অন্য দেশগুলোতেও শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে জনপ্রিয়। মীনা চরিত্রটি ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশে এবং এর বাইরে শিশুদের অধিকার নিয়ে কথা বলে আসছে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের তাদের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
২০০৫ সালে শুরু হওয়া একটি ঐতিহ্যের ১৭তম পুরস্কার হলো ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড -২০২২। পুরষ্কার বিরতণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথিদের মধ্যে ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ঔপন্যাসিক ও বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও পাঠশালা ইনস্টিটিউটের প্রভাষক শামীম আখতার। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম পুরস্কারে মনোনীতদের জন্য একটি ভিডিও বার্তা পাঠান।
মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস ২০২২ বিজয়ীরা হলেন; প্রিন্ট সাংবাদিকতা ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন কালের কণ্ঠের এমরান হাসান সোহেল ‘মানবতা শিশুদের শুধু জল আছে’, বিডিনিউজ২৪.কমের হিমু চন্দ্র শীল ‘রোহিঙ্গা শিশু আয়াত উল্লাহর জীবনে একটি দিন’, নিউজ বাংলা ২৪ এর জেসমিন আক্তার পাপড়ি ‘রাইজিং স্যানিলিটি: কিশোরী মেয়েরা পিরিয়ড বন্ধ করতে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণ করে’, ঢাকা ট্রিবিউনের নওয়াজ ফারহিন অন্তরা ‘প্যাড আপা': গ্রামীণ মাসিক স্বাস্থ্যবিধির জন্য একটি আশার আলো’ এবং ঢাকা পোস্টের তানভীরুল ইসলাম।
ফটো সাংবাদিকতায় পুরস্কার পেয়েছেন প্রথম আলোর মো. সাজিদ হোসেন ‘শিশু শিক্ষা’ ও জাহিদুল করিম। ‘সরকারিভাবে বাল্যবিবাহ কমেছে... কিন্তু বাস্তবতা কি?" (ভিডিও সাংবাদিকতা) এর জন্য নাগরিক টিভির শাহনাজ শারমীন, “আমরা কি ‘অটো পাস’ এবং ‘কোভিড ব্যাচ’ শব্দ ব্যবহার করে শিশুদের ক্ষতি করছি” (প্রিন্ট সাংবাদিকতা) জন্য ঢাকা পোস্টের তানভীরুল ইসলাম, ‘চালের দাম’(ফটোসাংবাদিকতা) এর জন্য দৈনিক প্রথম আলোর জাহিদুল করিম।
ইউনিসেফ চিলড্রেনস মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস ২০২২ এর বিজয়ীরা (অনূর্ধ্ব-১৮) হলেন; মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, জাগো নিউজ ২৪.কম, ‘শিক্ষা বঞ্চিত বেদে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে’ (প্রিন্ট সাংবাদিকতা); খালিদুল ইসলাম তানভীর, এটিএন বাংলার জন্য ‘শিক্ষা যখন মারাত্মক হয়ে ওঠে’ (ভিডিও সাংবাদিকতা); ধী অরনী পল. হ্যালো.বিডিনিউজ২৪.কম-এর জন্য ‘রাস্তায় তাদের ঠিকানা’ (ফটোসাংবাদিকতা)।