অন্তত তিন দশকের মধ্যে মেক্সিকান সাংবাদিক এবং মিডিয়া কর্মীদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ এই বছরটিতে ১৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে। বছরের শেষ ভাগে এই সপ্তাহে, দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিকদের একজনের উপর প্রকাশ্যে নির্লজ্জ আক্রমণের ব্যর্থ চেষ্টা বিপদজ্জনক এক পরিস্থিতি তুলে ধরেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে, রেডিও ও টেলিভিশন সাংবাদিক সিরো গোমেজের বাড়ি থেকে দুইশ গজ দূরে অবস্থিত তার গাড়িটিতে দুই বন্দুকধারী গুলিবর্ষন করে । সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সাংবাদিক ঘটনার বর্ণনা এবং ছবি দেন।
গণহত্যার সময়কালীন মেক্সিকোর প্রেস সাংবাদিকদের মধ্যে সংহতি বৃদ্ধি পায়। প্রতিটি হত্যার পরই তারা এর প্রতিবাদ করছে। তারা সরকারি নথির বিরুদ্ধেও বেশ ভাল রকম প্রতিবাদ তুলেছে, যেখানে লেখা ছিল ভুক্তভোগীরা প্রকৃত সাংবাদিক ছিল না বা দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের হিসাবমতে,এখনো পর্যন্ত ১৫ জন হত্যার শিকার হয়েছে এবং তা বেড়ে চলেছে।
এই বছর যারা নিহত হয়েছেন, তারা বেশিরভাগই ছিলেন ছোট শহরের সাংবাদিক এবং তাদের নিজেদের চেষ্টায় একটি আউটলেট পরিচালনা করছিলেন। অন্যরা তিয়ুনার মতো বড় শহরগুলির প্রকাশনা সংস্থায় ফ্রি ল্যান্সার হিসেবে কাজ করতেন।
এছাড়াও প্রেস এডভোকেসি গ্রুপ আর্টিকেল ১৯ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার, আততায়ীরা দক্ষিণের চিয়াপাস রাজ্যের পালেঙ্কের একটি অনলাইন নিউজ সাইটের পরিচালক, সাংবাদিক ফ্ল্যাভিও রেয়েস ডি ডিওসকে একটি লাইসেন্স প্লেটবিহীন গাড়িতে অনুসরণ করে তার মোটরসাইকেলটিকে রাস্তা থেকে নেমে যেতে বাধ্য করে। ফলে অই সাংবাদিক আহত হন।
যদিও এই ঘটনাটি তেমন গুরুত্ব পায়নি তবে মেক্সিকোর অন্যতম পরিচিত সাংবাদিক গোমেজ লেভাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনাটি জাতীয় সংবাদে দেখা যায়। তিনি সরকারের একজন নিয়মিত সমালোচক। তিনি প্রায়শই রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডরের প্রেস সমালোচনার ক্ষেত্রে তিরস্কারের মুখোমুখী হন।
তা সত্ত্বেও লোপেজ ওব্রাডর শুক্রবার গোমেজ লেভার বিরুদ্ধে এই প্রচেষ্টার নিন্দা করেছেন। তাদের মধ্যকার মতপার্থক্যের কথা স্বীকার করে নিলেও তিনি বলেন, “যে কাউকেই আক্রমণ করা সম্পূর্ণভাবে নিন্দনীয় একটি কাজ।“
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস-এর মেক্সিকোর প্রতিনিধি জান-অ্যালবার্ট হুটসেন বলেন, এ বছর একমাত্র দেশ হিসেবে আরো বেশি সংখ্যক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে ইউক্রেনে, যারা রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
“ইন দ্যা মাউথ অভ দা উলফঃ আ কভার আপ এন্ড দা ট্রু কস্ট অভ সাইলেন্সিং দা প্রেস” বইটির লেখিকা ক্যাথেরিন কর্কোরান বলেন, “মেক্সিকোতে সাংবাদিক হত্যার একটি বড় কারণ হচ্ছে, এসবের অনেকের পেছনেই সরকারি কর্মকর্তারা জড়িত।“
মেক্সিকোর অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রাক্তন ব্যুরো প্রধান করকোরান বলেছেন,সরকারি দুর্নীতির কারণে তাদের সাম্রাজ্য হুমকির মুখে পড়ায় সাংবাদিকদের উপর এই আক্রমণ । তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে, মেক্সিকোর গণমাধ্যম আরও স্বাধীন ও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ সাংবাদিক নিহত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট বলেন, “সাংবাদিকরা শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো মিথ্যা কথা বলে।“
হুটসেন বলেন, সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে সহিংসতার পিছনে বর্তমান প্রশাসনের ফেডারেল কর্মকর্তাদের হাত রয়েছে এমন কোনও প্রমাণ নেই। তবে তিনি বলেন, "এটা খুবই হতাশাজনক যে, সরকার সক্রিয়ভাবে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন না করলেও রাষ্ট্রীয় বা অ-রাষ্ট্রীয় অন্য কারও দ্বারা সাংবাদিকদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হচ্ছে, তা প্রতিরোধে খুব কমই কাজ করেছে।“