ফুটবলের কথা উঠলে বলা যায়, অর্থ দিয়ে বিশ্ব কিনে নেয়া যায়। সেটি বিশ্বকাপের জন্য ব্যয় করা যায়। এবং বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের জন্য ব্যয় করা যায়। এবং সেটি দিয়ে এই সবকিছুকে একসাথে করে লক্ষ লক্ষ দর্শকের সামনে বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপন করা যায়।
রবিবার লুসেইলে বিশ্বকাপ ফাইনালে অর্থের শক্তি পুরোপুরি প্রদর্শিত হয়েছে।
এদিন বিশ্বকাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ফাইনালগুলোর একটি দেখতে পায় দর্শকরা।
বিশ্বকাপটি কাতারের জন্য খারাপ বিনিয়োগ ছিল না। দেশটি এই ফুটবলের এই সম্মানজনক আয়োজনটির পেছনে আনুমানিক ২০,০০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে।
আরও কোটি কোটি ডলার ব্যয় হয়েছিল সুপারস্টার মেসি ও এমবাপে-কে কাতারের মালিকানাধীন প্যারিস সেইন্ট-জারমেইন (পিএসজি) ফুটবল ক্লাবটিতে নিয়ে আসতে।
কাতারের হিসেবে অবশেষে তাদের দেশেই ফুটবলের বৃহত্তম মঞ্চের সবচেয়ে নিখুঁত ফাইনালটি হয়।
খেলা শেষে মাঠে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি মেসিকে কাতারের ঐতিহ্যগত আনুষ্ঠানিক পোশাকে জড়িয়ে দেন, এবং মেসি তার জার্সির উপর সেই পোশাক পরে বিশ্বকাপ ট্রফিটি হাতে তুলে নেন।
এই বিশ্বকাপের একটি ছবি সবার মনে থাকবে যে বিশ্বের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের একজন কাতারের ঐতিহ্যগত পোশাক পরে ফুটবলের সবচেয়ে বড় শিরোপাটি হাতে তুলে ধরেছেন।
মেসি যখন পুরো স্বর্ণের তৈরি কাপটিতে চুমু খাচ্ছিলেন তখন তার চেহারা গর্বে ভরে উঠে। কিন্তু, পক্ষান্তরে বলা যায় যে আয়োজক দেশটিই নিজেদেরকে সবচেয়ে বড় বিজয়ী হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। টুর্নামেন্টটি তথাকথিত স্পোর্টসওয়াশিং এর কার্যকারিতা পুরোপুরি প্রদর্শন করতে পেরেছে বলেই আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছে।
স্পোর্টসওয়াশিং কথাটি প্রায়ই এমন সব দেশ বা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়, যারা ক্রীড়াকে ব্যবহার করে নিজেদের ভাবমূর্তির ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
কাতারের মানবাধিকার রেকর্ড ও আয়োজনটির আগে অভিবাসী কর্মীদের প্রতি তাদের আচরণের বিষয়ে ব্যাপক সমালোচনা আছে। তবে টুর্নামেন্টটি আরম্ভ হওয়ার পর থেকে সেই মনোযোগ ফুটবলের দিকেই চলে যায়। রবিবারের ফাইনাল খেলা নাগাদ আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল, মেসি নিজ দেশের জন্য শিরোপা জয় করে আর্জেন্টিনার কিংবদন্তী ডিয়েগো ম্যারাডোনার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারবেন কিনা।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার বিষয়ক প্রধান, স্টিভ ককবার্ন দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, “এটা অবশ্যম্ভাবী ছিল যে টুর্নামেন্টটি আরম্ভ হলে আলোচনা ধীরে ধীরে ফুটবলের দিকেই মোড় নিবে, কিন্তু মানবাধিকার বিষয়ক প্রশ্নগুলো কখনোই চলে যায়নি এবং টুর্নামেন্টটি শেষ হয়ে যাওয়ার অনেক পরেও সেগুলো উঠে আসা অব্যাহত থাকবে।”
অ্যামনেস্টি বলে যে, গত এক দশকে কাতারে হাজার হাজার অভিবাসী কর্মী “হঠাৎ ও অপ্রত্যাশিতভাবে” মৃত্যুবরণ করেছেন।