অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

২০২২ সালে তালিবানের অসংখ্য নিষেধাজ্ঞার মুখে আফগানিস্তানে নারীরা


কাবুলের একটি বিনোদন পার্কের বাইরে আফগান নারীরা দাঁড়িয়ে আছেন, ১০ নভেম্বর, ২০২২। তালিবান আফগানিস্তানে নারীদের ব্যায়ামাগার ও পার্ক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যা নারীদের অধিকার ও স্বাধীনতার ওপর দমন-পীড়নের অংশ।
কাবুলের একটি বিনোদন পার্কের বাইরে আফগান নারীরা দাঁড়িয়ে আছেন, ১০ নভেম্বর, ২০২২। তালিবান আফগানিস্তানে নারীদের ব্যায়ামাগার ও পার্ক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যা নারীদের অধিকার ও স্বাধীনতার ওপর দমন-পীড়নের অংশ।

২০২২ সাল জুড়ে, আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালিবান বিশ্বের যে কোনও জায়গার তূলনায় সবচেয়ে খারাপ লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্যমূলক নীতিগুলির মধ্যে কয়েকটি চালু এবং প্রয়োগ করেছে।

মার্চ মাসে নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতে, তালিবানরা মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে। এতে প্রায় ৩৫ লক্ষ কিশোর-কিশোরী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। চলতি সপ্তাহের শুরুতে ঘোষণা দেওয়া হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বন্ধ রাখা হচ্ছে। তালিবান শাসিত আফগানিস্তানই একমাত্র দেশ যেখানে মেয়েদের লিঙ্গের কারণে স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

গত এপ্রিলে তালিবান হাজার হাজার সরকারি নারী কর্মচারীকে বরখাস্ত করে। তাদেরকে বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপর গত এপ্রিলে বেতন দেওয়া বন্ধ করে দেয় তালিবান।

একই মাসে, একজন পুরুষ অভিভাবক ছাড়া প্রত্যেক নারীকে কাবুল বিমানবন্দরে বিমানে উঠতে নিষেধ করা হয়। এর আগে, তালিবান পুরুষ আত্মীয় ছাড়া নারীদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে নিষেধ করেছিল।

গত মে মাসে তালিবান টেলিভিশনে উপস্থিত হওয়ার সময় প্রত্যেক নারীকে মুখ ঢেকে রাখার নির্দেশ দেয়। আফগানিস্তানই একমাত্র দেশ যেখানে সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য এ ধরনের নিয়ম কার্যকর করা হয়।

একই মাসে, মানবাধিকার সংগঠনগুলি বাল্যবিবাহ দ্রুত বৃদ্ধি সম্পর্কে সতর্ক করে। সেই সময় তালিবানের ইসলামী নৈতিকতা পুলিশের একজন কর্মকর্তা ভিওএকে বলেন, বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের বিয়ে করা যেতে পারে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ১৩ বছরের বয়সী মেয়েদের যে কোনও বয়সের পুরুষের সাথে বিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

এরপর তালিবান সব নারীকে জনসম্মুখে তাদের মুখ ও শরীর ঢেকে রাখার নির্দেশ দেয়।

জুলাই মাসে কাবুলে গ্র্যান্ড অ্যাসেম্বলি থেকে নারীদের বাদ দেওয়া হয় । এরপর তালিবান নেতারা আফগানিস্তান জুড়ে শুধুমাত্র পুরুষদের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে অভ্যন্তরীণ বৈধতা চেয়েছিলেন। তালিবানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের প্রতিনিধিত্ব করেন পুরুষরা।

২০২১ সালের আগস্টে আফগান প্রজাতন্ত্রের পতন, তালিবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়।এর মাধ্যমেই, আফগানিস্তানে সমস্ত পুরুষ ও নারীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করে এমন একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থার সমাপ্তি ঘটে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে এক বৈঠকে আফগান মানবাধিকার বিষয়ক সক্রিয়বাদী মাহবুবা সিরাজ বলেন, “আমাদের মুছে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে আফগানিস্তানে মানবাধিকারের কোনো অস্তিত্ব নেই। তালিবানের কাছে আফগানিস্তানের নারীদের অস্তিত্ব নেই।“

২০২২ সাল জুড়ে, নারী অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য কার্যত তালিবান কর্তৃপক্ষের প্রতি আন্তর্জাতিক আহ্বানের পাশাপাশি, কিছু আফগান নারী অধিকার কর্মী কাজের অধিকার, শিক্ষা এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের দাবিতে রাজধানী কাবুলে বিক্ষোভ ও মিছিল করেন।

মানবাধিকার গ্রুপগুলির মতে, তালিবান নিরাপত্তা বাহিনী প্রতিক্রিয়ায়, তাদের গ্রেপ্তার, সহিংসভাবে ছত্রভঙ্গ এবং কখনও কখনও নারী অধিকার কর্মীদের নির্যাতন করে।

XS
SM
MD
LG