অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নারী এনজিও কর্মীদের নিষিদ্ধ করেছে তালিবান, প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার


নারীদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কোয়েটায় আয়োজিত এক প্রতিবাদে আফগান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিচ্ছেন এবং হাতে প্ল্যাকার্ড ধরে রয়েছেন, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২।
নারীদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কোয়েটায় আয়োজিত এক প্রতিবাদে আফগান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিচ্ছেন এবং হাতে প্ল্যাকার্ড ধরে রয়েছেন, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২।

তালিবান শাসকরা শনিবার আফগানিস্তানে কর্মরত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত” অবিলম্বে তাদের নারী কর্মীদের কাজে আসা নিষিদ্ধ করতে আদেশ দিয়েছে।

অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রক এক চিঠিতে সতর্ক করেছে যে, যেসব প্রতিষ্ঠান আদেশটি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হবে, তাদের কাজের অনুমোদন বাতিল করে দেওয়া হবে। জনজীবনে নারীদের অধিকারের ক্ষেত্রে এটিই তালিবানের সর্বসাম্প্রতিক দমন।

চিঠিটির মতে, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তালিবান প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেদের নারী কর্মীদের বাধ্যতামূলক হিজাব বা পোশাকনীতি মেনে চলছিল না।

আফগানিস্তানে জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি ও মানবিক সহায়তা সমন্বয়কারী, রামিজ আলাকবারোভ বলেন যে, নারী এনজিও কর্মীদের নিষিদ্ধ ঘোষণার বিষয়ে তিনি “অত্যন্ত উদ্বিগ্ন”। টুইটারে তিনি বলেন, এটি “মানবিক মূলনীতির পরিষ্কার লঙ্ঘন”।

নরওয়েও দ্রুত তালিবানের এমন নির্দেশের প্রতি দ্রুত নিন্দা জানিয়েছে।নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানিকেন হুইফেল্ডট টুইটারে বলেন, “সিদ্ধান্তটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। নরওয়ে সহযোগীদের সাথে মিলে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবে এবং যথাযথ প্রতিক্রিয়া জানাবে।”

সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে যে, প্রধানত রক্ষণশীল আফগান সমাজে নারীদের মানবিক সহায়তা পাওয়া নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নারী কর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

এদিকে, তালিবান কর্তৃপক্ষ পশ্চিমাঞ্চলের হেরাত শহরে শনিবার ডজনকয়েক নারী শিক্ষার্থী ও নারী অধিকার বিষয়ক সক্রিয়কর্মীকে ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করেছে। দেশটিতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মেয়েদের শিক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্তটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিলেন ঐ নারীরা।

ইরানের সীমান্ত সংলগ্ন ঐ শহরের মধ্যাঞ্চলে ঐ প্রতিবাদকারীরা সমবেত হন। তারা স্লোগান দিচ্ছিলেন এবং তালিবানকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে চাপ দেওয়ার জন্য মানুষজনকে তাদের সাথে শামিল হতে অনুরোধ করছিলেন। তারা স্লোগানে বলছিলেন, “ইসলামে শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার” এবং “সবার জন্য শিক্ষা নইলে কারো জন্যই নয়”।

তাদের মিছিলটি প্রাদেশিক গভর্নরের দফতরের দিকে যাচ্ছিল কিন্তু তালিবান নিরাপত্তা বাহিনী জলকামান ব্যবহার করে তাতে বাধা দেয়। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায় যে, ঐ নারীরা চিৎকার করছেন এবং চরম শীতের সকালে জলকামান থেকে বাঁচতে পালিয়ে যাচ্ছেন।

তালিবান শাসকগোষ্ঠী মঙ্গলবার ঘোষণা দেয় যে, “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত” তারা আফগানিস্তান জুড়ে নারীদের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়া স্থগিত করছে।

নারীদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা স্থগিত করার এই সপ্তাহের সিদ্ধান্তটি আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক নিন্দার ঝড় তুলেছে। এমনকি মুসলিম প্রধান দেশগুলোও অবিসংবাদিতভাবে এর প্রতি নিন্দা জানিয়েছে এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে।

XS
SM
MD
LG