অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

‘বৈরী’ পশ্চিমা গণমাধ্যমকে হুমকি দিয়েছে ইরান


ফাইল ছবি - দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের কর্মী নন এমন এক ব্যক্তির তোলা এবং ইরানের বাইরে এপি দ্বারা প্রাপ্ত এই ছবিতে, তেহরানে নৈতিকতা পুলিশের হাতে মাহসা আমিনী আটক এবং তাঁর মৃত্যুর পর ইরানীরা প্রতিবাদ করে। ১ অক্টোবর, ২০২২।
ফাইল ছবি - দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের কর্মী নন এমন এক ব্যক্তির তোলা এবং ইরানের বাইরে এপি দ্বারা প্রাপ্ত এই ছবিতে, তেহরানে নৈতিকতা পুলিশের হাতে মাহসা আমিনী আটক এবং তাঁর মৃত্যুর পর ইরানীরা প্রতিবাদ করে। ১ অক্টোবর, ২০২২।

ইরানের গণবিক্ষোভের সংবাদ প্রকাশের কারণে দেশটির রেভোল্যুশনারী গার্ডের একজন মুখপাত্র ভয়েস অফ আমেরিকা সহ পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোকে “অনুশোচনামূলক জবাবের” হুমকি দিয়েছেন।

একটি বিশেষ কমব্যাট ব্রিগেডের সাথে বুধবার এক বৈঠকে ইসলামিক রেভোল্যুশনারী গার্ড কোর বা আইআরজিসি’র গণসংযোগ প্রধান, রামেজান শরীফ ফারসী ভাষায় পরিচালিত বিদেশী গণমাধ্যমগুলোকে “বৈরী” হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।

স্থানীয় গণমাধ্যম ঐ মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে জানায় যে, তিনি বলেছেন সামাজিক মাধ্যম ইরানকে কৌশলে প্রভাবিত করার একটি “অস্ত্র” এবং গণমাধ্যমকে “শত্রুর কৌশলযন্ত্র” হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।

শরীফ এ সময়ে কিছু স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন যে, সেগুলো “ইরানকে ধ্বংস করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে”। তার উল্লেখিত সংবাদ মাধ্যমগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিওএ, বিবিসি, মানোটো টিভি এবং লন্ডন ভিত্তিক ইরান ইন্টারন্যাশনাল সংবাদ সম্প্রচারক।

ইরানে সেপ্টেম্বরে ২২ বছর বয়সী কুর্দি নারী মাহসা আমিনি-কে আটকের পর তার মৃত্যু হলে, দেশব্যাপী যে ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ আরম্ভ হয়, সেই বিষয়ে কয়েক মাস ধরে সংবাদ প্রচারের পর শরীফ এমন মন্তব্য করলেন।

গণমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া মন্তব্যে শরীফ বলেন, “আপনারা ভুল, কারণ এখন আপনাদের উপর আমাদের এমন নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, এবং আমরা আপনাদের প্রত্যেককে এমন এক জবাব দিব যার জন্য আপনারা অনুশোচনা করবেন।”

বিক্ষোভের কারণে বিরোধী কন্ঠ ও গণমাধ্যমের উপর দমনপীড়ন চালিয়ে আসছে ইরান।

দ্য হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সি (এইচআরএএনএ) একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যারা ইরানের মানবাধিকার লঙ্ঘন পর্যবেক্ষণ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্কলন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর থেকে ১৮,০০০ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অন্তত ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আটককৃতদের মধ্যে ডজনকয়েক সাংবাদিকও রয়েছেন যারা বিক্ষোভ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।

নিউইয়র্ক ভিত্তিক কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস এর অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, সংবাদকর্মীদের কারাবন্দি করার ক্ষেত্রে ইরান সম্মুখ অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে ৬০ জনেরও বেশি হেফাজতমূলক আটকাবস্থায় রয়েছেন, এবং অপর আরও ২০ জনকে আটক করে পরবর্তীতে জামিনে মুক্ত করা হয়।

ভিওএ’র ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ইয়োলান্ডা লোপেজ এই বছর এর আগে এক বিবৃতিতে ইরানে সংবাদকর্মীদের গণগ্রেফতারের বিষয়ে নিন্দা জ্ঞাপন করেন। ঐ বিবৃতিতে বলা হয় যে, “ইরানের শাসকগোষ্ঠীর অপতথ্য ও সেন্সরশীপের প্রচেষ্টা মোকাবেলা করতে” ভিওএ অঙ্গীকারবদ্ধ।

এক বিবৃতিতে লোপেজ বলেন, “ইরানের মানুষজন অবাধে তথ্য পাওয়ার যোগ্য। (ভিওএ) ইরানে আমাদের সহকর্মী সংবাদকর্মীদের পাশে রয়েছে এবং তাদের নিরাপদ মুক্তির আশা রাখে, কারণ ‘আ ফ্রি প্রেস ম্যাটারস’ (একটি স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রয়োজন রয়েছে)”।

দ্য কোয়ালিশন ফর উইমেন ইন জার্নালিজম (সিএফডব্লিউআইজে) গণমাধ্যমকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনা নথিবদ্ধ করে। তারা জানায় যে, আটককৃতদের মধ্যে ডজনকয়েক নারী সংবাদকর্মীও রয়েছেন।

সিএফডব্লিউআইজে এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক কিরান নাজিশ ভিওএ-কে বলেন যে, কেউ কেউ জানিয়েছেন, আটক অবস্থায় তাদের নির্যাতন করা হয়েছে বা তাদের প্রতি দুর্ব্যবহার করা হয়েছে।

নাজিশ ভিওএ-কে এক ইমেইলে বলেন, “আমাদেরকে সংবাদকর্মী ও আইনজীবীরা বলেছেন যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ বা কারারক্ষীরা সরাসরি যৌনকর্মে লিপ্ত হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে তাদের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করা। আমরা পুরুষ সংবাদকর্মীদের সাথে এভাবে আচরণ করতে দেখি না।”

এএফপি জানায় যে, ডিসেম্বরের শুরুর দিকে ইরানের কারাবিভাগ অস্বীকার করে যে, আটক অবস্থায় কোন নারী যৌনহামলার শিকার হয়েছেন।


XS
SM
MD
LG