অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি প্রবাসীকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন


যুক্তরাষ্ট্রে এক বাংলাদেশিকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বের কোথাও কোনো অপরাধ চায় না। শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে, শান্তি মশাল জ্বালিয়ে তিন দিনব্যাপী ‘পিস রান বাংলাদেশ’-এর উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন তিনি। র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীবলেন, “কোনো একটি ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নির্ধারিত হয় না।”

বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের কেমব্রিজ-এ, পুলিশের গুলিতে এক বাংলাদেশি প্রবাসীর মৃত্যুর বিষয়ে মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, “সেখানে বাংলাদেশি সম্প্রদায় এটিকে ঘৃণামূলক অপরাধ বলে অভিযোগ করছে। আমরা বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ করতে এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু-এর বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, “এটা খুবই ভালো খবর যে তিনি আসছেন। তিনি এই এলাকায় একজন নীতিনির্ধারকের মতো। আমরা তাকে স্বাগত জানাই।”

আব্দুল মোমেন আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বহুমুখী সম্পর্ক রয়েছে। তিনি (ডোনাল্ড লু) এলে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।” ডোনাল্ড লু-এর সফর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করতে সাহায্য করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কোনো একটি ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নির্ধারিত হয় না।” তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে বড় ভোক্তা এবং আমাদের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী। অনেক ক্ষেত্রে আমরা সম্পৃক্ত; আমাদের শুধুমাত্র একটি সমস্যা নিয়ে চিন্তা করলে হবে না। আমাদের উভয়েরই অভিন্ন মূল্যবোধ ও নীতি রয়েছে।”

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায়, বাংলাদেশও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চায়। যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে চায়। আমরাও চাই। বাংলাদেশের ত্রিশ লাখ মানুষ মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।”

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা অনেক বিষয়ে কথা বলব। অনেক বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র‌্যাব

উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।

XS
SM
MD
LG