বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি ইস্ট্রুপ পিটারসেন পঞ্চগড় জেলার টিউলিপ বাগান পরিদর্শন করেছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে প্রাণবন্ত রংয়ের এই ফুল গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবিকার সুযোগ তৈরি করবে।
সোমবার (১৩ ফেব্রয়ারি) ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বৃদ্ধির জন্য একটি গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন সংক্রান্ত একটি প্রতিনিধি দল পঞ্চগড়ের টিউলিপ বাগান পরিদর্শন করেন। ঐ প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাষ্ট্রদূত পিটারসেন এবং ইফাদ-এর বাংলাদেশে কান্ট্রি ডিরেক্টর আর্নউড হ্যামেলিরস।
রাষ্ট্রদূত পিটারসেন বলেন, “এই রঙিন টিউলিপ বাগানে এসে আমি খুবই আনন্দিত এবং গর্বিত যে ডেনিশ সরকার, ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (ইফাদ) এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মিলে, তরুণ নারী কৃষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করেছে।”
পিটারসেন এবং হ্যামেলিরস স্থানীয় কৃষকের সঙ্গে কথা বলেছেন। এই কৃষকরা ইফাদ এবং ডেনিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির যৌথ-অর্থায়নে, গ্রামীণ মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ ট্রান্সফরমেশন প্রকল্পের সহায়তায় টিউলিপ চাষ করছেন। সাধারণত শীতল আবহাওয়ায় জন্মায় টিউলিপ।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন, এর অংশীদার সংস্থা ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এবং ইফাদ-এর উদ্যোগে বাস্তবায়িত একটি উন্নয়ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে আট জন কৃষককে টিউলিপ চাষ এবং বাজারজাত করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল ২০২১ সালে।
পাইলট প্রকল্প সফল হওয়ার পর, তেতুলিয়া উপজেলার দর্জিপাড়া গ্রামের ২০ জন কৃষককে অন্তর্ভুক্ত করে, এ উদ্যোগ সম্প্রসারি করা হয়। এ বছর তারা প্রায় এক লাখ টিউলিপ উৎপাদন করছে। কৃষকদের উৎপাদিত টিউলিপ অধিকাংশই ঢাকায় পাঠানো হয় এবং কিছু স্থানীয়ভাবে বিক্রি করা হয়। এ ফুল বৈচিত্র্যপূর্ণ হওয়ায় দর্শক ও পর্যটকদের আকর্ষণ করে এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরি করে।
এছাড়া এ সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো বিভিন্ন সহায়ক পরিষেবা দিয়ে পর্যটকদের সাহায্য করে। পরিষেসাবর মধ্যে রয়েছে; স্থানীয় রেস্তোরাঁ চালানো, বাসস্থানের ব্যবস্থা করা এবং টিউলিপ বাগানে দর্শনার্থীদের জন্য স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
রাষ্ট্রদূত পিটারসেন বলেন, “টিউলিপ আমার কাছে বিশেষ কিছু। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে, প্রয়োজনীয় জলবায়ু অনুকরণ করার চেষ্টা করে টিউলিপ চাষ করা দেখা উত্তেজনাপূর্ণ।” আরনউড হ্যামিলার্স বলেন, “এই নারীরা আবারও প্রমাণ করেছেন যে নতুন পণ্য তৈরি করা যেতে পারে এবং নতুন মূল্য শৃঙ্খল তৈরি করা যেতে পারে; যদি তারা প্রশিক্ষণ, আর্থিক পরিষেবাগুলোতে প্রবেশের সুযোগ পায় এবং বাজার যোগাযোগের মাধ্যমে পর্যাপ্ত সহায়তা পায়।”
আনোয়ারা নামের এক কৃষক বলেন, “আমি গবাদি পশু পালন ও কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। গত বছর আমি টিউলিপ চাষ শুরু করেছি। মাত্র ৪৫ দিনে ৬৫ হাজার টাকা (৬২০ ডলার) আয় করেছি। সেই টাকা দিয়ে আরও গবাদিপশু কিনেছি। এই বছর আমি আরও বেশি উপার্জনের আশা করছি; কারণ স্থানীয় পর্যটকদের মধ্যে সুন্দর বাগানগুলো দেখার আগ্রহ রয়েছে। যা আমাদের ব্যবসা আরও বাড়াবে।”