অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় রোহিঙ্গা পিএইচডির ছাত্র


ভয়েস অফ আমেরিকার সঙ্গে কথা বলছেন অং নাইং শোয়ে
ভয়েস অফ আমেরিকার সঙ্গে কথা বলছেন অং নাইং শোয়ে

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে মানবিক সহায়তার স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কর্মরত মিয়ানমারের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী অং নাইং শোয়ে জানিয়েছেন তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের বাসিন্দারা ৬ ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করতে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে যখন এই সপ্তাহে আরেকটি ভূকম্পন অনুভূত হয়।

ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হাতায় থেকে ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অং বলেন, "ভুমিকম্পনটি প্রায় ১০ মিনিটের মতো হয়েছে বলে মনে হয়েছিল”।

তিনি বলেন, “ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসাবশেষ, নারীদের কান্না এবং লোকজন তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তার মাঝখানে চলে যেতে দেখে আমরা হতবাক হয়ে পড়েছিলাম। “ঠিক এমন এক সময়ে এটা ঘটেছে যখন লোকজন ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলিতে ফিরে আসতে শুরু করেছে, তাদের বাড়িঘরগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছে, নিজেদের জিনিষপত্রের সন্ধান করছে ।”

ভয়েস অফ আমেরিকাকে তিনি বলেন, “এ ধরনের দুর্যোগ আবার ঘটতে দেখাটা সবার জন্য ভীতিকর ছিল, এমনকি আমার জন্যেও। মাত্র কয়েক দিন আগে যারা তাঁবুর নিচে রাস্তায় বাস করছিলেন তারা আবার ভূমিকম্পের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকার যে ভয় বা ট্রমা আরও একবার স্মরণ করেন। এখানে যারা আছেন তাদের প্রত্যেকের জন্য এটি একটি অবিশ্বাস্য রকমের উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে যারা তাদের জীবন আবার গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

অং, বর্তমানে ডক্টরেট ডিগ্রী নেয়ার জন্য পড়াশোনা করছেন এবং আংকারায় থাকেন। তার সহকর্মীরা ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ ফোরামের সদস্যরা মালয়েশিয়া থেকে, অন্যান্য বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থার কর্মীরা হাতায়, গাজিয়ানটেপ এবং কাহরামনমারাসের ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অঞ্চলে সহায়তা করার জন্য এসেছেন।

আঙ্কারা থেকে সফরকারী তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দল তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে শরণার্থীদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়স্থান এবং তাঁবু তৈরি করেছে। তারা বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের তাদের জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে সহায়তা করেছে এবং খাবার, বোতলের পানি এবং কাপড় সরবরাহ করেছে। তারা কৌশলগত সাহায্যও করেছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় এবং অন্যান্য বিতরণ পয়েন্টে প্রয়োজনীয় উপকরণ পৌঁছাতে সহায়তা করেছে।

অং বলেন, মনোবিজ্ঞানী হিসেবে তার পড়াশোনা তাকে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথাবার্তা বল্যতে সাহায্য করেছে। যেমন বেঁচে যাওয়া একজন বয়স্ক নারী তার পরিবার, তার বাড়ি এবং তার সমস্ত বিষয় সম্পদ হারানোর কথা অং-এর কাছে বলতে পেরেছেন।

"আমি তাকে 'দাদী' বলে ডাকতাম এবং তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আমি কীভাবে সাহায্য করতে পারি। তিনি বলেছিলেন, তার শুধু কারো সাথে কথা বলা দরকার। তিনি বলেন, “আমার সবকিছু ছিল এবং এখন আমি সবকিছু হারিয়েছি।” তারপর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরেন এবং আমরা একসাথে কেঁদেছিলাম। অং বলেন, “এ ছিল ভয়ানক এবং খুবই মর্মস্পর্শী।"

তিনি বলেন, “বর্তমানে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বেঁচে থাকা। অং ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানিয়েছেন, শীতের কারণে পোশাক, কম্বল, বহনযোগ্য চুলা, রান্নার সামগ্রী, জুতা এবং জ্যাকেটের মতো জিনিষের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে, "

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের সাধ্যমতো সাহায্য করার আহ্বান জানান।

তুরষ্কের সরকারের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা প্রেসিডেন্সির তথ্য অনুযায়ী, ৯০ লক্ষ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৪৭ হাজার ভবন বিধ্বস্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুটি ভয়াবহ ভূমিকম্পের দুই সপ্তাহ পরেও সরকার কমপক্ষে লক্ষ লক্ষ গৃহহীনকে আশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা করছে, যাদের জরুরি স্যানিটারি সুবিধা প্রয়োজন।

তুরষ্ক সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।

XS
SM
MD
LG